Advertisement
E-Paper

চিকিৎসক নেই, হিড়বাঁধের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরসা ফার্মাসিস্ট

নেই চিকিৎসক। প্রয়োজনের তুলনায় কম স্বাস্থ্যকর্মীও। ভগ্নদশা আবাসনের। এত নেই আর পরিকাঠামোর সমস্যা নিয়েই চলছে হিড়বাঁধ ব্লকের মশিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসক না থাকলেও তাঁর চেম্বার যথারীতি খোলা। ফি দিনই সকালে সেই ঘরের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। ডাক্তার না থাকলেও রোগীদের দেখছেন কে? ভরসা ফার্মাসিস্ট। তিনিই রোগ পরীক্ষার পরে ওষুধ দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:০৩
মশিয়াড়ায় রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট তপন জানা। — নিজস্ব চিত্র।

মশিয়াড়ায় রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট তপন জানা। — নিজস্ব চিত্র।

নেই চিকিৎসক। প্রয়োজনের তুলনায় কম স্বাস্থ্যকর্মীও। ভগ্নদশা আবাসনের। এত নেই আর পরিকাঠামোর সমস্যা নিয়েই চলছে হিড়বাঁধ ব্লকের মশিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

চিকিৎসক না থাকলেও তাঁর চেম্বার যথারীতি খোলা। ফি দিনই সকালে সেই ঘরের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। ডাক্তার না থাকলেও রোগীদের দেখছেন কে? ভরসা ফার্মাসিস্ট। তিনিই রোগ পরীক্ষার পরে ওষুধ দিচ্ছেন। একদিন বা দু’দিন নয়। গত প্রায় ন’মাস ধরে মশিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারের কাজ এ ভাবেই সামলাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট তপন জানা।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে মাঝে মধ্যেই ডাক্তারহীন অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাতে হয়েছে ফার্মাসিস্টকে। তবে গত বছরের অগস্ট মাসে সেই যে ‘ডাক্তারবাবু’র আসা বন্ধ হয়েছে, তারপর থেকে আর কোনও চিকিৎসক এলাকায় আসেননি। তাই বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের দেখছেন ফার্মাসিস্ট।

হিড়বাঁধ ব্লক সদর থেকে প্রায় ১১ কিমি দূরে মশিয়াড়া গ্রাম। গ্রামের একপ্রান্তে এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পুরুলিয়া জেলার সীমানা ঘেঁষা বাঁকুড়ার এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে আশেপাশের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হিড়বাঁধের মশিয়াড়া, বামনি, চাকাডোবা, সিমলাবাঁধ, ঝাপানডিহি, পাইড়া, সীতারামপুর, দিগতোড়, মনোরা, নতুনডি, বনগোড়া, তিলাকানালি, নেকড়াপাহাড়ি-সহ আশেপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে আসেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত তিন বছর ধরেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক ছিল না। অস্থায়ী ভাবে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একজন করে চিকিৎসককে কিছু সময়ের জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হত। কিন্তু গত বছরের অগস্ট মাস থেকে কোনও চিকিৎসককে আর পাঠানো হয়নি।

মশিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা বিল্টু মুখোপাধ্যায় পেটের অসুখ নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন। চাকাডোবা গ্রামের বাসিন্দা সুচিত্রা সোরেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁদের দু’জনকেই দেখে ওষুধ লিখে দিলেন ফার্মাসিস্ট। বিল্টুবাবু বলেন, “হিড়বাঁধ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখান থেকে অনেকটা দূরে। তাই কাছে ভেবে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে ফার্মাসিস্টকে দেখালাম।” সুচিত্রাদেবী বলেন, “কাছাকাছি বলেই মশিয়াড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার দেখাতে আসি। ডাক্তার তো নেই। বিদ্যুৎ-ও নেই। গরমের সময় ভীষণ অসুবিধা হয়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। তাই রোগ হলে বাধ্য হয়ে এখানেই আসতে হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এতদিন ধরে ডাক্তার নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই। ফার্মাসিস্ট রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে কী আর ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়?” এলাকার বাসিন্দা তথা মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের সদস্য আরএসপি নেতা পরাশর রায় গ্রামবাসীর অভিযোগকে সমর্থন করে বলেন, “এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুত নেই। পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই। এতদিন ধরে একজন চিকিৎসকও নেই। ফার্মাসিস্ট রোগীদের দেখছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমরা অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনেরও ভগ্নদশা। কেউই তাই এখানে থাকেন না। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রাতে কর্মীবিহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে মদ, গাঁজা, জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ। মশিয়াড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্তমানে একজন ফার্মাসিস্ট, একজন নার্স, চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মী রয়েছেন। ফার্মাসিস্ট বলেন, ‘‘গত অগস্ট মাস থেকে কোনও চিকিৎসক নেই। অথচ রোগীরা আসছেন। তাই তাঁদের ফিরিয়ে না দিয়ে আমিই দেখছি। সাধ্যমতো আমরা সবাই পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” তাঁর ক্ষোভ, আগে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। কিন্তু ট্রান্সফর্মার নষ্ট হওয়া, তার চুরি যাওয়ার পর গত প্রায় ১০ বছর ধরে এখানে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় সবাই গরমে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক ওষুধও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা যাচ্ছে না।

চিকিৎসকের পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী সাফাই কর্মী না থাকায় প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাতে গিয়ে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। হিড়বাঁধের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অমর্ত্য পাল বলেন, “আমি নতুন এসেছি। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ছ’জন চিকিৎসকের জায়গায় চারজন রয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত ভাবে সমস্যা জানিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মশিয়াড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ও আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।” হিড়বাঁধের বিডিও শঙ্খশুভ্র দে-র বক্তব্য, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশকিছু দিন ধরেই চিকিৎসকের সমস্যা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রয়োজনের তুলনায় সারা জেলা জুড়েই চিকিৎসক না থাকায় এই সমস্যা চলছে।’’ হিড়বাঁধ ব্লকে খুব শীঘ্রই নতুন চিকিৎসক পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

চিকিৎসক কবে আসবেন সে দিকেই তাকিয়ে মশিয়াড়া। ততদিন রোগীদের ভরসা ওই ফার্মাসিস্টই।

hirbandh health center doctor purulia sitarampur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy