কোথাও ইচ্ছারান্না, কোথাও বা ধরাটে রান্না বা আটাশে রান্না। আবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পালিত হলে তার নাম হয়ে যায় ‘বুড়োরান্না’। এ সবই বাঙালির পার্বনপ্রিয়তার অনন্য সব ‘ডাক নাম’। আসলে বাঙালির বারো মাসে তেরো নয়, নয় নয় করে খানকুড়ি-একুশ পার্বনের হিসাব পাওয়া যায়। অরন্ধন তার মধ্যে অন্যতম। ভাদ্রে রান্না আশ্বিনে খাওয়া— এমন নিয়মই অরন্ধনের মূল প্রতিপাদ্য। মূলত মনসা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবেই এই অরন্ধন মান্যতা পেয়ে এসেছে যুগে যুগে। তাই পাকশালার পাশেই শালুক ও ফণিমনসা গাছের ডাল দিয়ে মনসার ঘট সাজিয়ে রাখা হয়।
উৎসবের আগের দিন রাতে গৃহস্থর ব্যস্ততা থাকে চরমে। মরসুমের সেরা সব্জি ও মাছ আরাধ্য দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করাই এই উৎসবের প্রধান লক্ষ্য। উৎসবের মূল আকর্ষণ হল ইলিশ ও অন্যান্য মাছের নানা পদ। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কাঁচা আনাজ— যেমন আলু, ছাঁচি কুমড়ো, কলা, পটল, নারকেল, বেগুন, কুমড়ো, কচুর শাক, নারকেল প্রভৃতি উপাদানের নানা ভাজা ও তরিতরকারি। মনসাকে তুষ্ট করতে সেই সব বিভিন্ন পদের খানিক অংশ সাজিয়ে উৎসর্গ করা হয়।
অরন্ধনের আগের দিন বাড়ির সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সারা রাত ধরে রান্নার উপচার তৈরি, রান্নাবান্না, কুটনো-বাটনা। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন মা মনসাকে উৎসর্গ করে তবে খাওয়া। আগে তিথি অনুযায়ী, আশ্বিন পড়লে তবে সে খাবার মুখে তুলতেন গৃহস্থ।