Advertisement
E-Paper

ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়ার উৎসব ‘অরন্ধন’, রইল তথ্য

আসলে বাঙালির বারো মাসে তেরো নয়, নয় নয় করে খানকুড়ি-একুশ পার্বনের হিসাব পাওয়া যায়। অরন্ধন তার মধ্যে অন্যতম। ভাদ্রে রান্না আশ্বিনে খাওয়া— এমন নিয়মই অরন্ধনের মূল প্রতিপাদ্য। বাকি নিয়ম জানেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:৫৭
রান্নার পুজোর প্রস্তুতি। —ফাইল চিত্র।

রান্নার পুজোর প্রস্তুতি। —ফাইল চিত্র।

কোথাও ইচ্ছারান্না, কোথাও বা ধরাটে রান্না বা আটাশে রান্না। আবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পালিত হলে তার নাম হয়ে যায় ‘বুড়োরান্না’। এ সবই বাঙালির পার্বনপ্রিয়তার অনন্য সব ‘ডাক নাম’। আসলে বাঙালির বারো মাসে তেরো নয়, নয় নয় করে খানকুড়ি-একুশ পার্বনের হিসাব পাওয়া যায়। অরন্ধন তার মধ্যে অন্যতম। ভাদ্রে রান্না আশ্বিনে খাওয়া— এমন নিয়মই অরন্ধনের মূল প্রতিপাদ্য। মূলত মনসা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবেই এই অরন্ধন মান্যতা পেয়ে এসেছে যুগে যুগে। তাই পাকশালার পাশেই শালুক ও ফণিমনসা গাছের ডাল দিয়ে মনসার ঘট সাজিয়ে রাখা হয়।

উৎসবের আগের দিন রাতে গৃহস্থর ব্যস্ততা থাকে চরমে। মরসুমের সেরা সব্জি ও মাছ আরাধ্য দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করাই এই উৎসবের প্রধান লক্ষ্য। উৎসবের মূল আকর্ষণ হল ইলিশ ও অন্যান্য মাছের নানা পদ। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কাঁচা আনাজ— যেমন আলু, ছাঁচি কুমড়ো, কলা, পটল, নারকেল, বেগুন, কুমড়ো, কচুর শাক, নারকেল প্রভৃতি উপাদানের নানা ভাজা ও তরিতরকারি। মনসাকে তুষ্ট করতে সেই সব বিভিন্ন পদের খানিক অংশ সাজিয়ে উৎসর্গ করা হয়।

অরন্ধনের আগের দিন বাড়ির সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সারা রাত ধরে রান্নার উপচার তৈরি, রান্নাবান্না, কুটনো-বাটনা। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন মা মনসাকে উৎসর্গ করে তবে খাওয়া। আগে তিথি অনুযায়ী, আশ্বিন পড়লে তবে সে খাবার মুখে তুলতেন গৃহস্থ।

আরও পড়ুন

মাঠঘাটেই মেলে পুষ্টিকর খাদ্য, শিবিরে শিখলেন মায়েরা

শ্রীকৃষ্ণের পছন্দের সাদা মাখনের এত গুণ!

তবে আজকাল উৎসবের মেজাজের কাছে রীতি-নীতি-নিয়ম শিথিল হয়েছে। তাই তিথির হিসেবে না গিয়ে অনেকেই উৎসর্গ সেরে সে খাবার প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করেন। পাঁচ রকম ভাজা, চালতার চাটনি বা চালতা-নারকেল দিয়ে মুগ ডাল, মটর ডালের চচ্চড়ি, কচুর শাক, ছাঁচি কুমড়ো, ইলিশ মাছ এই উৎসবের প্রধান প্রসাদ। সঙ্গে অবশ্যই পান্তা। তবে আজকাল অনেকেই শরীর সচেতন। তাই বাসি খাওয়ার প্রথা ভেঙে দেবতাকে উৎসর্গের পর গরম গরম খাওয়ার রীতিও চালু হয়েছে।

রান্না পুজোর মূল উপাদান। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রাম-শহরের নানা জায়গায় অরন্ধন উৎসবের দিন মাছ চাষের পুকুরগুলিতে মাছ ধরার জন্য বিশেষ ছা়ড়ের ব্যবস্থাও আছে। শিকারিদের জন্য ‘পাকা’ (মাছ ধরার প্রতিযোগিতা)-র প্রচলন আছে। যাঁরা বেশি মাছ ধরতে পারবে তাঁরা পাবেন পুরষ্কার। সাধারণত, দেবীপক্ষের আগে এটিই বাঙালির শেষ উৎসব। এর পরের উৎসবের পর্ব শুরু হয় আবার মহালয়ার পর থেকে। শাস্ত্রমতে, সুপর্বে। দেবী দুর্গার আগমনী প্রহর শুরুর পরেই বাঙালি আবার উৎসবমুখী হয় বলেই দুর্গার অপর নাম ‘সুপর্বা’।

রাঢ়বঙ্গে এক সময়, সে অনেক কাল আগে, চৈতন্য দেবের সময় মনসাকেও দুর্গার অপর রূপ ভেবে পুজো করার বিধি প্রচলন ছিল। তাই এই পুজোতেও বলিপ্রথার প্রচলন ছিল। বর্তমানে সে প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে।

আজ বিশ্বকর্মা পুজো ও সঙ্গে অরন্ধনের নিমন্ত্রণে বাঙালির দালানে লাগবে আতিথ্যের ছোঁয়াচ।

Rituals অরন্ধন রান্না পুজো Hindu Festivals Cooking Festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy