Advertisement
E-Paper

জ্বরে কাবু উত্তরবঙ্গে এ বার সাসপেন্ড অধ্যক্ষ

তিনের পরে এক। সাসপেন্ড, এবং আবার সাসপেন্ড। দুই মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক ও মেডিক্যাল কলেজের সুপারের পরে কলেজের অধ্যক্ষকেও। সঙ্গে আর এক বিশেষজ্ঞকে বদলি। আর যার প্রেক্ষাপটে এত প্রশাসনিক তৎপরতা, উত্তরবঙ্গের সেই জ্বর-পরিস্থিতি কিন্তু সেই তিমিরেই। তথ্য গোপন ও কাজে গাফিলতির অভিযোগে উত্তরবঙ্গের তিন স্বাস্থ্য-কর্তাকে সাসপেন্ড করে দায়িত্ব থেকে সরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন অধ্যক্ষ সমীর ঘোষরায় ও বিদায়ী অধ্যক্ষ অনুপ রায়। —নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন অধ্যক্ষ সমীর ঘোষরায় ও বিদায়ী অধ্যক্ষ অনুপ রায়। —নিজস্ব চিত্র

তিনের পরে এক। সাসপেন্ড, এবং আবার সাসপেন্ড। দুই মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক ও মেডিক্যাল কলেজের সুপারের পরে কলেজের অধ্যক্ষকেও। সঙ্গে আর এক বিশেষজ্ঞকে বদলি। আর যার প্রেক্ষাপটে এত প্রশাসনিক তৎপরতা, উত্তরবঙ্গের সেই জ্বর-পরিস্থিতি কিন্তু সেই তিমিরেই।

তথ্য গোপন ও কাজে গাফিলতির অভিযোগে উত্তরবঙ্গের তিন স্বাস্থ্য-কর্তাকে সাসপেন্ড করে দায়িত্ব থেকে সরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিষেবার হাল ফেরাতে স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। সেটা দশ দিন আগের কথা। পরের দশ দিনে অবশ্য উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য-পরিষেবার বিশেষ কোনও রকম উন্নতি চোখে পড়েনি। বরং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছড়িয়েছে খিঁচুনি-জ্বর। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়েছে অনেকের, বহু মানুষ তীব্র উপসর্গ (অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম, বা সংক্ষেপে এইএস) নিয়ে আসছেন। রক্ত বা ফ্লুইড পরীক্ষার আগেই অনেকের মৃত্যু হচ্ছে, ফলে তাঁদের অসুখটা অজানা থেকে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় সোমবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকেও সাসপেন্ড করে সরিয়ে দিল রাজ্য। পাশাপাশি বদলি করা হয়েছে সেখানকার মাইক্রোবায়োলজি প্রধানকে, যাঁর হাতে ছিল রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি কাজকর্মের দায়িত্ব।

লুকোছাপা ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে গত ২৫ জুলাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার (অমরেন্দ্রনাথ সরকার) এবং দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (যথাক্রমে সুবীর ভৌমিক ও জগন্নাথ সরকার)-কে সাসপেন্ড করেছিল নবান্ন। এ দিন যিনি সাসপেন্ড হলেন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সেই অধ্যক্ষ অনুপ রায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ কর্তব্যে গাফিলতি, তথ্য গোপন ও কাজে ব্যর্থতার। এ দিন তাঁর জায়গায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হয়েছেন সমীর ঘোষরায়, যিনি আগে সেখানকার সুপারের দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সমীরবাবু ঘটনাচক্রে এ দিন শিলিগুড়ির বাড়িতে এসে নিজের কাজে মেডিক্যাল কলেজে যান। তখনই সিদ্ধান্তটি জানতে পারেন। এ দিনই তাঁকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়েছে।

ইতিমধ্যে অমরেন্দ্রবাবুর জায়গায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের নতুন সুপার হন সব্যসাচী দাস। সুবীরবাবু ও জগন্নাথবাবুর পদেও নতুন লোক এসেছেন। কিন্তু দায়িত্ব হাতবদলের পরেও যে পরিষেবার হাল ফেরেনি, এইএস নিয়ে চিকিৎসাধীন কোচবিহারের নলিনীমোহন রায় বা ফালাকাটার প্রভাতচন্দ্র রায়দের বাড়ির লোকের ভাষ্যে তা স্পষ্ট। ওঁদের আরও অভিযোগ, হাসপাতাল দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। রোগীর চাপ কমাতে তো বটেই, হাসপাতালের ‘সাফল্য’ প্রতিষ্ঠার তাগিদে জ্বর না-কমতেই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান অনেকে। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারগুলো কার্যত অন্য সংক্রমণ ছড়ানোর আঁতুড় হয়েছে! হাসপাতালের আশপাশে শুয়োর চরাও বন্ধ হয়নি।

পরের পর কর্তাকে সাসপেন্ড করে কি সমস্যার সুরাহা হবে? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ওঁর যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল, উনি তা করেননি। তাই সাসপেন্ড করা হয়েছে।” স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, “রোগে এত মানুষের প্রাণ গেলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের হেলদোল ছিল না। স্বাস্থ্যভবন থেকে যোগাযোগ করা হলে সমস্ত তথ্য গোপন করেছেন! উত্তরবঙ্গে রোগটা এ ভাবে ছড়ানোর পিছনে ওঁর দায় কিছু কম নয়।”

হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের একাংশও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়সারা মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন। খিঁচুনি-জ্বরের দাপট এক মাস চললেও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকও অধ্যক্ষ ডাকলেন না কেন, সে প্রশ্ন তুলে চিকিৎসক সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খবর পৌঁছেছে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও। অনুপবাবু মুখ খুলতে চাননি। “এ সব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” মন্তব্য তাঁর।

এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজির বিভাগীয় প্রধান কুমকুম ভট্টাচার্যকেও বদলি করা হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার কাজটা মাইক্রোবায়োলজিতেই হয়। প্রধান চলে যাওয়ায় বিভাগের কর্মীরা উদ্বিগ্ন। কুমকুমদেবী যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে। তাঁর জায়গায় আসছেন এনআরএসের অরুণাভ সরকার। স্বাস্থ্যভবন-সূত্রের অভিযোগ, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে যে বহু দিন ধরেই জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলছিল, তা যথাসময়ে স্বাস্থ্যভবনকে জানাননি তিনি। পরীক্ষার অভাবে নমুনা পড়ে থাকার দায়ও তাঁর উপরে চাপানো হয়েছে।

সাসপেন্ড, বদলির এই হিড়িকের মধ্যে রোগের সংক্রমণ থেমে নেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি আরও দশ জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। উল্লেখ্য, রবিবার উত্তরবঙ্গে দুই এইএস-রোগীর মৃত্যু হয়েছে এক জনের শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে, অন্য জনের বালুরঘাট হাসপাতালে। তবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ বা জেলা স্বাস্থ্য দফতর, কেউই রোগীমৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

অধ্যক্ষ সাসপেন্ড প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “এ নিয়ে কিছু বলার থাকলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বলবেন।”

encephalitis uttarbanga medical college super suspend
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy