গোলাপের পসরা সাজিয়ে বসছেন কলকাতার ফুল ব্যবসায়ীরা। ছবি: এএফপি।
রাত পোহালেই ভালবাসার দিন! সময়ের কাঁটা যত গড়াচ্ছে, প্রেমের ধুকপুকুনি ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রেমিকপ্রবরদের মনে। তবে হৃদস্পন্দন বাড়ার কারণ কেবলই আবেগ-অনুভূতির জন্য নয়। বাজারও কিছুটা দায়ী বইকি!
ভালবাসার জ্বর আজও কার কার আসে জানি না, তবে এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে প্রেমিকার মুখ মনে করে গোলাপের গায়ে হাত দিলেও সে জ্বর ঘুরে আসতে পারে! নাকচ করে দেওয়া প্রিয়জনকে মানানোর জন্য বুকের ব্যথা আজ সন্ধেয় অন্তত বুকপকেটে ব্যথা হয়েও ধরা দিচ্ছে প্রেমিক-প্রেমিকার!
হিমঘরের হোক কিংবা সরাসরি চাষের খেত থেকে তুলে আনা গোলাপ— দামের বাছবিচারে কেউ কম যান না। ভালবাসার দিন উদযাপনের আগের সন্ধের গোলাপে কাঁটাও যে জবরদস্ত, তা বোঝা গেল কলকাতার বিভিন্ন বাজারে ঢুঁ মারতেই।
আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইনের দিনে সকলের উপহারের চেয়ে আলাদা হোক আপনারটা, রইল টিপ্স
বেলঘরিয়া থেকে পার্ক স্ট্রিটে পড়তে আসেন আর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। হালকা দাড়ি-গোঁফের রেখা মুখে নিয়েই জীবনে প্রথম বার ভালবাসার উপহার বাছতে হাজির হয়েছিলেন নিউ মার্কেটে। পকেটে রেস্ত ১৫০। উপহারের তালিকায় একটা গোলাপ, সঙ্গে একটা গ্রিটিং কার্ড। কিন্তু খেত থেকে তুলে আনা গোলাপের দাম শুনেই মন খারাপ। একটি, হ্যাঁ, খেত থেকে সরাসরি আনা বিপুলাকার এক একটি গোলাপের দাম ছাড়িয়েছে ১২০ টাকা। হিমঘর থেকে আজ রাতে মুক্তি পাওয়া বড় আকারের গোলাপকে পকেটস্থ করতে গেলে খসাতেই হবে কম করে ৭০ বা ৮০। কাল দাম আরও বাড়বে, সটান জবাব নিউ মার্কেটে ১৪ বছর ধরে এই দিনে গোলাপ নিয়ে আসা মুস্তাক আলির। প্রথম প্রেমের প্রস্তাব, এ দিকে গোলাপ জুটবে না! কাঁচুমাচু ছেলেটির মুখ দেখে মায়াই হল খানিক। হিমঘরের গোলাপ আর একটু কমসম করে ছেলেটিকে ৭০ টাকায় দিলেনমুস্তাক আলি।
ভালবাসার দিনে গোলাপের ‘সেন্টিমেন্ট’ এখনও টাটকা কলকাতায়।
‘‘দামের তোয়াক্কা না করেই গোলাপ কেনাটা আসলে এই দিনের সেন্টিমেন্ট,’’ বললেন ১৫০ টাকার বিনিময়ে দু’টো তাজা গোলাপের মালিক অভীক সেনগুপ্ত। কাজেই দামের ছ্যাঁকা যে সকলকেই কাবু করছে, এমন নয়। তবে এখনও পর্যন্ত এ বছরের ব্যবসা অন্যান্য বারের চেয়ে কম বলে আক্ষেপ গোলাপ ব্যবসায়ীদের।
গড়িয়াহাটের ছবিও পিছিয়ে নেই। বরং খোলা ডালায় গোলাপের তোড়া বেচছেন ক্যানিংয়ের দিগম্বর দাস। দু’টি থেকে আটটি, এ ধরনের ছোট-বড় নানা তোড়ার দাম শুরু ১৮০ টাকা থেকে। ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বড় তোড়াও চাহিদা অনুযায়ী বানিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এক একটি গোলাপের দাম সেখানেও বেশ চড়া। ৬০-৭০ টাকায়বিকোচ্ছে টাটকা গোলাপ। তবে গড়িয়াহাটের বাজারে আবার গোলাপের চেয়ে পাল্লা ভারী অন্যান্য উপহারের।
আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে প্রিয় মানুষকে নিয়ে কোন রেস্তরাঁয় যাবেন? রইল নানা অফারের খোঁজ
সোনার গয়না থেকে ফোন, পাঞ্জাবি থেকে শাড়ি, টেডি থেকে কৃত্রিম গোল্ডেন রোজ— পকেট বুঝে চলছে কেনাকাটা। লভ বাডের শো পিসও এই তালিকায় পিছিয়ে নেই। বরং অনেকটা দাম দিয়ে গোলাপ কেনার চেয়ে সেই দামেই প্রেমিক-প্রমিকার মনের মতো উপহারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন অনেকেই।
লেক মার্কেটও সরগরম বিকিকিনির আওয়াজে। সেখানেও ফুলের দোকানে ভিড় আজ সন্ধে থেকেই। লাল গোলাপের পাশে বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হলুদ গোলাপও দেদার বিকোচ্ছে। তবে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। অবশ্য আকারেও সে সব নিউ মার্কেটের মতো পেল্লায় নয়। এখানে গোলাপের দাম বুধবার সন্ধেয় ৪০-৫০ টাকা।
ভালবাসার উপহারে টেডির চাহিদাও কম নয়। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
গোটা একটা দিন ভালবাসার জন্য বরাদ্দ বলে কথা! কী ভাবে কাটবে সারা দিন, কোন নিখুঁত ছকে এত দিনের ‘না’ নিমেষে ‘হ্যাঁ’ হবে, কী ভয়ানক জাদুতে বিগত সব অভিমান গলানোর মোক্ষম সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে— এ সব মন্ত্র শেষ মুহূর্তে ঝালিয়ে নেওয়ার পালা আজ। আপনি বলবেন, আমাদের বেলায় এ সব আদিখ্যেতা ছিল না বাপু! সে না থাক, প্রেমিকার মুখ এক বার দেখার জন্য হু হু পরানে রবিঠাকুর বাসা বাঁধতেন তো? কিংবা ধরুন, প্রেমিকের অদর্শনে দীর্ঘ বিরহে মন কি একবারও উচাটন হত না?
আরও পড়ুন: ভালবাসার মরসুমে মাত্র তিন-চার দিনেই এই ভাবে ত্বকে আনুন ঈর্ষণীয় জেল্লা
সে সব হু হু হাওয়া আজও বয়। কেবল সে হাওয়ায় শরীর-মন সেঁকে নেওয়ার পদ্ধতি বদলেছে। আঁখিছলছল কিংবা উদাস বিরহী চাহনির বদলে আজকাল অনেক কিছুই সটান, সরাসরি। এর মধ্যেও কারও কারও মনে গুঁড়ি মেরে মিশে আছে বেভুল পথভোলা হাওয়া। সেই সঘন সপাট হাওয়া কিন্তু একা শহরের ঘরে বন্দি নয়, বরং ভালবাসার দিন আয়োজনে যে ভাবে বসন্তের শহর সেজে উঠেছে, তাতে গোলাপ, শো-পিস, টেডি ছাপিয়ে এ ছবি ছড়িয়ে পড়ছে দু’কলি চিঠি লিখে প্রেম জানানো ছেলেটার চোখে-মুখেও।গোলাপ কেনার পয়সা না থাকাও যার ভালবাসাকে গরিব হতে দেয় না।
গোলাপ থাক বা না থাক, কাল ভালবাসার মধুমাস!
(শুরু হয়েছে আমাদের নতুন বিভাগ 'HELLO DOCTOR'। এ বারের বিষয় ‘ব্রণর সমস্যা’। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন পাঠান query@abpdigital.in এই মেল আইডি তে। উত্তর দেবেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy