Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Puberty Menorrhagia

কিশোরী বয়সে পিরিয়ডসের সমস্যা, সমাধান কোন পথে

কাকে বলে পিউবার্টি মেনোরেজিয়া? ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা কোন বিপদ ডেকে আনতে পারে?

ছবি: আশিস সাহা

সুনীতা কোলে
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৬
Share: Save:

মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত আদৃতা। কারণ সাত দিন পেরিয়ে গেলেও মেয়ের পিরিয়ডস চলছে এখনও। বছর এগারোর কিশোরীর সদ্যই ঋতুচক্র শুরু হয়েছে। অনভ্যস্ত কিশোরীর অস্বস্তি আরও বেড়েছে বেশি দিন ধরে তা চলায়। স্কুলে না যেতে চাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক কাজকর্মেও অনীহা প্রকাশ করছে সে।

এই চিত্র শুধু আদৃতা বা তাঁর মেয়ের নয়। বহু কিশোরীর ঋতুচক্র নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাদের অভিভাবকেরা। বেশি দিন ধরে চলা, পরিমাণে বেশি, পেটে ব্যথার মতো একাধিক সমস্যায় জেরবার হয় অনেকে। এর মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা কিছু দিন পরে ঠিক হয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় চিকিৎসার। আবার কী ভাবে ওই ক’টা দিন অস্বস্তি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাবে, তার জন্য প্রয়োজন হতে পারে কাউন্সেলিংয়েরও।

এ প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কিশোরীদের যখন প্রথম ঋতুচক্র শুরু হয়, তখন কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, পিরিয়ডস হতে পারে অনিয়মিত। প্রতি মাসে হওয়ার বদলে বাদ যেতে পারে কিছু মাস। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তখনও ডিম্বাশয় থাকে অপরিণত, হরমোন ক্ষরণও নিয়ন্ত্রিত না হওয়ার ফলে কোনও কোনও মাসে পিরিয়ডস না-ও হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে অ্যানোভুলেটরি সাইকল বলা হয়। এ ছাড়া, বেশি দিন ধরে বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয়। একে বলা হয় পিউবার্টি মেনোরেজিয়া। কোনও কিশোরীর এই সমস্যা ধরা পড়লে তার চিকিৎসা অবশ্যই দরকার বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আবার পিরিয়ডস ঠিক মতো হলেও সেই রক্ত দেহের বাইরে আসতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হতে পারে।

ছবি: আশিস সাহা

পিউবার্টি মেনোরেজিয়া কী?

মাসে একবারের বেশি পিরিয়ডস, টানা সাত দিনের বেশি চলা বা অতিরিক্ত ক্ষরণ দেখা গেলে সেটি মেনোরেজিয়া হতে পারে। তা ছাড়া, ক্লটিংয়ের সমস্যাও থাকতে পারে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘স্বাভাবিক ভাবে একটি চক্রে ৫ থেকে ৩০ মিলিলিটার রক্ত বেরোয় দুই থেকে সাত দিন ধরে। এর বেশি রক্তক্ষরণ বা এর বেশি দিন ধরে পিরিয়ডস চললে তাকে মেনোরেজিয়া বলা হয়।’’ তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পরিমাণ বোঝা সাধারণের পক্ষে সহজ নয়। তার বদলে লক্ষ রাখতে হবে, দিনে কত বার স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলের প্রয়োজন হচ্ছে? দু’-তিন ঘণ্টা পরেই ন্যাপকিন বদলাতে হলে, সতর্ক হতে হবে তখনই। এ ছাড়া, মাথা ঘোরা, ঘেমে যাওয়া, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও নজরে রাখতে হবে।

মেনোরেজিয়ার কারণ

মেনোরেজিয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, তার মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই কারণ হরমোনের অনিয়মিত ক্ষরণ। হাইপোথাইরয়েড, পলিপ, জরায়ুর সমস্যাও থাকতে পারে নেপথ্যে। আবার প্লেটলেট কম থাকা, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সমস্যা, রক্তের ক্যানসারের মতো কারণ থাকলে দেখা যেতে পারে মেনোরেজিয়া।

মেনোরেজিয়ার প্রভাব

মেনোরেজিয়ার চিকিৎসা না হলে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে দেখা দিতে পারে অ্যানিমিয়া। বাড়ন্ত বয়সের কিশোরীদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, পড়াশোনা ও খেলাধুলোয় অনীহা, মুড সুইংয়ের মতো উপসর্গ থাকতে পারে। ব্যাহত হতে পারে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রক্তাল্পতার চিকিৎসা না হলে তা থেকে স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা, মাথা ঘোরা, হার্ট ফেল এমনকি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যুও হতে পারে।

চিকিৎসা কী

মেনোরেজিয়ার কারণ নির্ধারণ করতে চিকিৎসক একাধিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন রক্তপরীক্ষা বা আল্ট্রাসাউন্ড। এই সব পরীক্ষায় কোনও কারণ না পাওয়া গেলে তখন চিকিৎসা শুরু হয় নন হরমোনাল ওষুধ দিয়ে। রক্তক্ষরণের তীব্রতা কমানো যেতে পারে নন হরমোনাল ওষুধের মাধ্যমে। এই ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে জানাচ্ছেন অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাতে কাজ না হলে হরমোনাল ওষধু দেওয়া হয়। তবে বাড়ন্ত কিশোরীদের সব হরমোনাল ওষুধ দেওয়া যায় না, সে দিকে খেয়াল রাখেন চিকিৎসকেরা।

এর পাশাপাশি, শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দেখে শুরু করা হয় অ্যানিমিয়ার চিকিৎসাও। সাধারণত, আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। এর সঙ্গেই দরকার ফলিক অ্যাসিড ও মিথাইল কোবালামাইন। তবে অনেকের সাপ্লিমেন্টে সমস্যা থাকতে পারে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ, সুষম খাবারের উপরেও জোর দেন চিকিৎসকেরা।

ছবি: আশিস সাহা

পিরিয়ডসের সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঋতুচক্র শুরু হলে অনেক কিশোরীই কিছুটা ঘাবড়ে যায়। স্কুলে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার বা পেটে ব্যথার মতো কারণে স্কুল না যেতে চাওয়া থেকে ক’টা দিন আড়ষ্ট হয়ে থাকার মতো আচরণ করতে পারে অনেকে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে তাদের বোঝানোর দরকার রয়েছে যে পিরিয়ডস কেন হয়, কী ভাবে ওই দিনগুলিতে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে। কিশোরীরা পিরিয়ডসের সমস্যা নিয়ে এলে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এই কাউন্সেলিং করেন। পেটে ব্যথার জন্য গরম সেঁক বা ডাক্তারের পরামর্শ মতো জরায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, জাঙ্ক ফুড এড়ানো, শারীরচর্চার অভ্যেসও গড়ে তোলার দরকার রয়েছে। এতে পরবর্তী কালে পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যা এড়ানো যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত।

মডেল: অলিভিয়া সরকার, ঐশিকী বসু; ছবি: আশিস সাহা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE