Advertisement
E-Paper

বাড়ছে কাজের চাপ, সন্তান চাইছেন না শহুরে মহিলারা

মা হতে চাইছেন না শহুরে মহিলারা। হলেও বড়জোর একটি সন্তান! কেন? কর্মস্থানে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপই মূল বাধা। দিন দিন বেড়েই চেলেছে সংসার চালানোর খরচ। উচ্চাশা না থাকলেও প্রতি পদে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বেশি সময় দিতে হচ্ছে কাজের জায়গায়।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০১:৪৩

মা হতে চাইছেন না শহুরে মহিলারা। হলেও বড়জোর একটি সন্তান!

কেন?

কর্মস্থানে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপই মূল বাধা।

দিন দিন বেড়েই চেলেছে সংসার চালানোর খরচ। উচ্চাশা না থাকলেও প্রতি পদে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বেশি সময় দিতে হচ্ছে কাজের জায়গায়। তা-ই আবার প্রভাব ফেলছে ব্যক্তিগত জীবনে। মা হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন তা বর্জন করতে। নানা চাপের মধ্যে কেউ যদি বা একটি সন্তানের কথা ভাবেনও, দ্বিতীয় সন্তান নৈব নৈব চ।

সম্প্রতি কলকাতা-সহ দেশের কয়েকটি শহরে দেড় হাজার কর্মরত মহিলাকে নিয়ে এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা চালায় বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম। সেই সমীক্ষা রিপোর্টেই উঠে এল এমন নানা তথ্য।

অ্যাসোচ্যাম সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই-সহ বিভিন্ন শহরে এই সমীক্ষা করা হয়। প্রতিটি শহরেই কর্মক্ষেত্রে প্রবল মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করেছেন এই মহিলারা। কলকাতায় ৬৫ শতাংশ মহিলাই জানিয়েছেন, কাজের জায়গায় রোজের চাপের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে কিছুটা অবহেলা করতেই হচ্ছে পরিবারকে। ফলে সন্তানের পালনের বাড়তি দায়িত্ব আর নিতে চাইছেন না তাঁদের অনেকেই।

আরও পড়ুন: হিন্দি মিডিয়ামে সততাই শেষ কথা

ওই মহিলারা জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনই দ্রুত গতিতে বাড়ছে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ। ফলে প্রতিমুহূর্তে প্রতিযোগিতা এবং টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যক্তিগত জীবন মারাত্মক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রের সময় কাটছাট করেও পরিবারের জন্য এতটুকুও সময় রাখতে পারছেন না ওই মহিলারা। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে গিয়ে বৈবাহিক জীবনে। একটি সন্তান হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাকে একেবারেই সময় দিতে পারছেন না কর্মরত মায়েরা। ফলে দ্বিতীয় সন্তানকে জন্ম দিয়ে তাকে সযত্ন বড় করতে না পারার ‘অপরাধ’ থেকে নিজেদেরকে মুক্তই রাখতে চাইছেন অধিকাংশ মহিলা। সমীক্ষায় এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানাচ্ছেন অ্যাসোচ্যামের পূর্ব জোনের অধিকর্তা পারমিন্দরজিৎ কৌর।

এর সঙ্গে রয়েছে আর্থিক চাপও। অনেকেই মনে করছেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়লে খরচের বোঝাও বেড়ে যাবে। কর্মরত মহিলারা বেশি সময় বাড়িতে দিতে পারেন না বলে সন্তানকে দেখাশোনার জন্য নির্ভর করতে হয় অন্যের উপরে। তার জন্য ব্যয় হয় অনেকটা অর্থ। যে খরচ থাকতই না মা নিজে সন্তানের যত্ন করার সুযোগ পেলে। এ ছাড়াও স্কুল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ বেড়েই চলেছে শহরে। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকেও সংসারের বহু দায়-দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এই মহিলারা। এমন পরিস্থিতিতে সন্তান এনে সংসারের খরচ আর বাড়তে দিতে চাইছেন না তাঁদের অনেকেই।

ঘরে-বাইরে এমন চাপেই কি তবে দিশাহীন হয়ে পড়ছেন শহুরে মহিলারা?

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘এটা মহিলাদের একেবারে নিজেদের বিষয়। তবে পুরুষেরা এগিয়ে এসে ওই মহিলাদের পাশে দাঁড়ালে সমস্যাটা মিটতে পারে বলেই মনে করি।’’ একই ভাবে সমাজ এবং পরিবারের সদস্যদের এই মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মহিলাদের বাইরের জগতের দায়িত্ব বাড়লেও ভিতরের জগতের দায়িত্ব এক বিন্দুও কমেনি। ফলে সামঞ্জস্য রেখে চলাটা খুবই মুশকিল। এ ক্ষেত্রে সমাজ এবং পরিবারের সদস্যদের মহিলার পাশে থাকা দরকার।’’

সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র আবার বলেন, ‘‘এটা বড় রকমের সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে পরিবারের গঠন এবং দাম্পত্য জীবনের ধারা বদলে যেতে পারে। কর্মস্থানগুলি মহিলাদের এই বিষয়টি নিয়ে আর একটু ভাবনা-চিন্তা করতে পারলে ভাল হয়।’’

pregnant work pressure Pregnancy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy