Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষোভ ডিএসপি-তে

দরকারে দেখা মেলে না আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সের

ঢাল-তরোয়াল রয়েছে। তা সত্ত্বেও যেন নিধিরাম সর্দার। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের হাল অনেকটা এমনই। আধুনিক পরিষেবা সমেত অ্যাম্বুল্যান্স মজুত কারখানার ভিতরেই। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে আর সেটি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ কর্মীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

ঢাল-তরোয়াল রয়েছে। তা সত্ত্বেও যেন নিধিরাম সর্দার।

রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের হাল অনেকটা এমনই। আধুনিক পরিষেবা সমেত অ্যাম্বুল্যান্স মজুত কারখানার ভিতরেই। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে আর সেটি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ কর্মীদের। শ্রমিক সংগঠনগুলির ক্ষোভ, কারখানায় দুর্ঘটনায় জখম কাউকে ওই অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পাঠানো হলে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু, সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠানোয় অনেক সময়েই আহতের অবস্থার অবনতি হয়।

ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ১৬ এপ্রিল প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকায় আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সটি চালু করা হয় ডিএসপি-র প্ল্যান্ট মেডিক্যাল ইউনিটে। কর্মী-আধিকারিকদের দাবি, এই অ্যাম্বুল্যান্স যেন ছোটখাটো একটি হাসপাতাল। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে পাঠানোর আগেই আহত বা অসুস্থ কর্মীকে কিছু পরিষেবা দেওয়া গেলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। অন্তত পক্ষে, অবস্থার অবনতি আটকে রাখা যায়। সে জন্যই এমন অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্ল্যান্ট মেডিকেল ইউনিটে।

কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তা দরকারের সময়ে বেরোয় না, এমনই অভিযোগ ডিএসপি-র নানা শ্রমিক সংগঠনের। গত ১১ মে দুপুরে কারখানায় গলিত ধাতু ছিটকে ঝলসে যান দুই আধিকারিক ও এক শিক্ষানবীশ কর্মী। তিন জনকে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করে। আইএনটিইউসি নেতা দেবাশিস চৌধুরী অভিযোগ করেন, আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সের বদলে দু’টি সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে করে জখমদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এর আগেও নানা দুর্ঘটনার সময়ে ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি পাওয়া যায়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে করেই জখমদের হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।’’

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ জানুয়ারি ডিএসপি হাসপাতালে মারা যান সংস্থার এক কর্মী। ‘র মেটিরিয়াল হ্যান্ডলিং প্ল্যান্ট’-এ কাজ করার সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্ল্যান্ট মেডিক্যাল ইউনিটের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে পাঠানোর ফলে যাতায়াতের পথে তিনি কোনও রকম ‘মেডিক্যাল সাপোর্ট’ পাননি। এর ফলেই তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। সিটু এবং আইএনটিইউসি-র তরফে দাবি করা হয়, নতুন অ্যাম্বুল্যান্সে করে অসুস্থ কর্মীকে হাসপাতালে পাঠানো হলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন। হাসপাতালে ওই দুই সংগঠন বিক্ষোভও দেখায়। একই ভাবে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও না মেলার অভিযোগ ওঠে গত ৭ ডিসেম্বর। সে দিন ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়েন দুই ঠিকা শ্রমিক। ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। সিটু নেতা সৌরভ দত্তের ক্ষোভ, ‘‘এই পরিষেবা আদৌ রয়েছে কি না, সে নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।’’

ডিএসপি-র এক আধিকারিকের যদিও দাবি, এখনও পর্যন্ত সব ক’টি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই যথেষ্ট উন্নত মানের অ্যাম্বুল্যান্সে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সের পরিষেবা কেন মেলে না, তা অবশ্য তিনি জানাতে পারেননি।

আধিকারিকের মৃত্যু

গলিত ধাতু ছিটকে জখম ডিএসপি আধিকারিকের মৃত্যু হল শনিবার। গত সোমবার ওই দুর্ঘটনায় জখম হন তিন জন। তাঁদের বিধাননগরে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহতদের মধ্যে দু’জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে মৃত্যু হয় আধিকারিক রোহিত কুমারের (৩৮)। তাঁর বাড়ি ছত্তিশগঢ়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durgapur steel plant ambulance INTUC medical unit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE