Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আক্রান্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আহত চিকিৎসক

আহিরণের পর লালগোলার কৃষ্ণপুর। মৃত ঘোষণার পর উত্তেজিত আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত হলেন কৃষ্ণপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ এক মহিলা চিকিৎসক। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই আরও পাঁচ জন কর্মী। আহত মহিলা চিকিৎসক সেলিনা রহমানকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

আহিরণের পর লালগোলার কৃষ্ণপুর। মৃত ঘোষণার পর উত্তেজিত আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত হলেন কৃষ্ণপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ এক মহিলা চিকিৎসক। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই আরও পাঁচ জন কর্মী। আহত মহিলা চিকিৎসক সেলিনা রহমানকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য সাহা বলেন, “জনা পঁচিশেক গ্রামবাসি চিকিৎসক এবং কর্মীদের মারধোর করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।” শুক্রবার কৃষ্ণপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হামলার ঘটনায় পুলিশ লালগোলার দেশওয়ালি পাড়া থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পক্ষ থেকে ওই দু’জনের নামে অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল।

এদিন যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলার ঘটনা তার সঙ্গে চিকিৎসক বা কর্মীদের সরাসরি কোনও যোগ নেই বলে দাবি জরুরি বিভাগে ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক সেলিনা রহমানের। তিনি জানান, এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বছর ২৫ বয়সের এক যুবককে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন জনা কয়েক গ্রামবাসি। জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সেলিনা রহমান পরীক্ষা করে জানান অনেক আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয়েছে তাই পুলিশকে জানিয়ে মৃতদেহ ময়না তদন্তের কথা বলেন।

এ কথা শুনে জোর করেই মৃত যুবকের দেহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আধ ঘণ্টা পর আবার ওই মৃতদেহটি নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিরে আসেন গ্রামবাসিরা। তাঁরা দাবি করেন, ওই যুবক বেঁচে আছেন। ফের পরীক্ষা করে দেখা হয় দেহটি। সেলিনা রহমান এবারও জানিয়ে দেন মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। এবার হাসপাতালের কর্মীরা মৃতদেহ আটকে লালগোলা থানায় পুলিশকে খবর দেন। তাতেই ওই মৃত যুবকের সঙ্গে আসা গ্রামবাসিরা উত্তেজিত হয়ে চড়াও হন কর্মীদের উপর।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরজা, জানালা-সহ আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করেন তারা। খবর পেয়ে ওয়ার্ড থেকে ছুটে আসেন চিকিৎসক সেলিনা। অভিযোগ, গ্রামবাসিরা চড়াও হন তাঁর উপরও। মারধোর ও হেনস্থা করা হয় তাঁকে। আবাসনে ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য সাহা। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে মারমুখী গ্রামবাসিদের বাধা দিতে গিয়ে মার খান তিনিও। এরপর পুলিশ এলে হামলাকারীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই ২ জনকে গ্রেফতার করে। মৃত ওই যুবক রানা সিংহের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠান হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জেলার এক উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “কদিন আগে আহিরণে চিকিৎসকের উপর হামলা করা হয়। শুক্রবার একই ভাবে কৃষ্ণপুরে আক্রান্ত হলেন দুই চিকিৎসক ও কর্মীরা। এভাবে তো সরকারি হাসপাতাল চলতে পারে না। এই মুহুর্তে ৫০ শয্যার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় আড়াইশো রোগী ভর্তি আছেন।”তিনি জানান, সারাদিন এত পরিশ্রমের পর আবার মার খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এ বিষয়ে শনিবার কৃষ্ণপুরে রোগী কল্যাণ সমিতির সভা ডাকতে বলা হয়েছে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেখানেই নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE