Advertisement
E-Paper

আত্মীয় সাজিয়ে কিডনি নেওয়া বাড়ছে শহরে

ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে, নিকটাত্মীয় সেজে কিডনি প্রতিস্থাপনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কলকাতার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে গত ছ’মাসে এমন প্রায় ৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগেরই সারমর্ম, আত্মীয় সাজিয়ে যাঁদের কাছ থেকে কিডনি নেওয়া হচ্ছে, তাঁরা আদতে আত্মীয় নন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীর মিথ্যা পরিচয় দেওয়া হচ্ছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:০২

ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে, নিকটাত্মীয় সেজে কিডনি প্রতিস্থাপনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কলকাতার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে গত ছ’মাসে এমন প্রায় ৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগেরই সারমর্ম, আত্মীয় সাজিয়ে যাঁদের কাছ থেকে কিডনি নেওয়া হচ্ছে, তাঁরা আদতে আত্মীয় নন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীর মিথ্যা পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। একাধিক কিডনি পাচারচক্র প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু মহিলাকে কাজ দেওয়ার নাম করে ভুলিয়ে শহরে এনে কিডনি দিতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত নিয়মকানুনকে আরও জোরদার করা যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে স্বাস্থ্য দফতর।

শুধু এ রাজ্য নয়, ভিন্ রাজ্যের পুলিশও এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই ওড়িশা পুলিশের তরফে রাজ্য পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যদি স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ দাতা হয় এবং অস্ত্রোপচারটি ভিন্ রাজ্যে করার পরিকল্পনা হয়, সে ক্ষেত্রে বিয়ের সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে সেটি ভেরিফাই করিয়ে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেখানো নিয়ম। কলকাতায় ভিন্ রাজ্যের যে রোগীদের অস্ত্রোপচার হয়, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা পড়ে না বলে অভিযোগ।

কিডনি পাচার চক্রের তদন্তে নেমে পুলিশের বড়কর্তারা ক্রমশই এমন একাধিক চক্রের সন্ধান পাচ্ছেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুধু এ রাজ্য নয়, প্রতিবেশী রাজ্যেও এই চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু লোককে এ জন্য গ্রেফতার করে কিছু তথ্য মিলেছে। আগামী দিনে তার ভিত্তিতে একাধিক চাঁইকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

মাস কয়েক আগেই কিডনি পাচারের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল পূর্ব যাদবপুর থানা। কিডনি পাচার চক্রের হদিশ মিলেছিল ই এম বাইপাসের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করে।

এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন একাধিক চিকিৎসক। নেফ্রোলজিস্ট দিলীপ পাহাড়ি বলেন, “দাতা আত্মীয় না অনাত্মীয়, তা নিয়ে সরকারি নিয়মের হেরফের আছে। আমরা চাই সরকার স্বচ্ছতা বজায় রাখুক। বেশ কিছু ক্ষেত্রেই সেটা থাকছে না। আত্মীয়-অনাত্মীয় দাতা গুলিয়ে যাচ্ছে।”

একদা এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অভিজিৎ তরফদার বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানান, যখন এসএসকেএমে ছিলেন তখন এমন বহু ঘটনা ধরা পড়তে দেখেছেন। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে অনাত্মীয় দাতার কাছ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গোটা পৃথিবীর গন্তব্য হল কলকাতা আর সিঙ্গাপুর। আর কোথাও এত হয় না। আইন অনুযায়ী, বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, ঠাকুরদা-ঠাকুরমা এবং দাদু-দিদা ছাড়া সকলেই অনাত্মীয়। বহু ক্ষেত্রে দূর সম্পর্কের আত্মীয় বা বন্ধুরা কিডনি দেন। সেটাও অনাত্মীয়ের পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু তার বাইরেও একটি অন্ধকার আদান-প্রদানের জায়গা আছে। সেটা ধরার কাজ পুলিশ-প্রশাসনের। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল এবং ডাক্তারের উপরে দায় গিয়ে পড়ে।”

নিয়ম অনুযায়ী, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা এবং গ্রহীতার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে স্বাস্থ্য ভবনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য ভবনে এ জন্য বিশেষ কমিটি রয়েছে। প্রতিস্থাপনের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যত আবেদন জমা পড়ে, তার কত শতাংশ খতিয়ে দেখা হয়, প্রশ্ন তুলছেন খোদ চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্যকর্তারাই স্বীকার করেছেন, খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়াটা খুবই দুর্বল। তাই কার্যত সব আবেদনই অনুমোদন পায়। সরকারি সিলমোহর নিয়েই অনেক অসাধু কাজকর্ম চলে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “আইনের ক্ষেত্রেও কিছু গলদ রয়েছে। আইন যে নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞা দেয়, যাদের সেই সব আত্মীয়ের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে না বা নিকটাত্মীয়রা দানে আগ্রহী থাকেন না, তাঁদের কি তবে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে না? এই সব কারণেই কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের ফাঁস খানিকটা আলগা রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা হল, সেই আলগা ফাঁসের ফাঁক গলে বহু ক্ষেত্রে কিছু পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। সেটা ভাঙা জরুরি। এ ব্যাপারে জরুরি আলোচনা চলছে। খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে কিছু পরিবর্তন আনা হবে।”

kidney false identity soma mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy