বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে আসন বাতিলের সুপারিশকে ঘিরে দেশ জুড়ে আলোড়নের মধ্যে সুর কিছুটা নরম করছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই। মুশকিল আসানের জন্য আপাতত ঘুরপথে হলেও বাড়তি কিছু সময় চায় তারা।
সময় কেনার জন্য মেডিক্যালে ভর্তির কাউন্সেলিং পর্বকে হাতিয়ার করছে এমসিআই। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছে তারা। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে আরও সময় দরকার। সর্বোচ্চ আদালতে তাই মেডিক্যালের প্রথম কাউন্সেলিংয়ের সময়সীমা অন্তত এক মাস বাড়িয়ে দিক।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মেডিক্যালের প্রথম কাউন্সেলিং শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৫ জুন। এই পরিস্থিতিতে এমসিআইয়ের ওই চিঠির অর্থ, আসন বাতিল নিয়ে দেশ জুড়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে-অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তাতে খানিকটা আশার আলো এসে পড়া।
এমসিআইয়ের পরবর্তী বৈঠক আগামী সপ্তাহে। তার আগেই তাদের চিঠি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। আপাতত সে-দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের।
দেশে এমবিবিএসের মোট আসন ৫০,০৭৮। এ রাজ্যে ২৪৫০। সম্প্রতি এমসিআই বিভিন্ন রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসের যত আসন ছাঁটাইয়ের সুপারিশ করেছে, তা যোগ করলে এই মুহূর্তে বাতিল আসনের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫,৮৯০। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই কমতে চলেছে ১০৫০টি আসন। অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। উত্তরাঞ্চলে ৪৫০ আসনের মধ্যে সব ক’টিই বাতিল হতে বসেছে। ছত্তীসগঢ়ে ৬০০-র মধ্যে ছাঁটাই করতে বলা হয়েছে ৫০০টি আসন। সব মেডিক্যাল কলেজের তরফেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য এমসিআই-এর কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কাউন্সেলিং ও ছাত্র ভর্তির সময়সীমা খানিকটা বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে হবে কেন্দ্রকে। নিয়ম অনুযায়ী এমসিআই-এর চিঠি ছাড়া কেন্দ্র ওই আবেদন করতে পারে না। কিছুটা টালবাহানার পরে কাউন্সিল ওই চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে। এবং তাতেই আসন নিয়ে তাদের সুর কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, গোটা দেশেই চিকিৎসকের ঘাটতি মারাত্মক আকার নিয়েছে। সেখানে এমসিআই-এর আসন বাতিলের সুপারিশ বিলাসিতার নামান্তর। সেই জন্যই দেশ জুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় এক ধাক্কায় প্রায় ১৬ হাজার মেডিক্যাল আসন বাদ দেওয়ার মতো বড়সড় ঝুঁকি নিতে খানিকটা থমকাচ্ছে এমসিআই।
এমসিআইয়ের নতুন চেয়ারপার্সন জয়শ্রী বেন মেহতা জানান, তাঁরা চান না, কোনও পড়ুয়ার উপরেই অবিচার হোক। সেই জন্যই একটু বাড়তি সময় নেওয়া হচ্ছে। জয়শ্রীদেবীর বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ুক, সেটা তাঁরাও চান। কিন্তু মেডিক্যাল শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করে সেটা হবে, এটাও মেনে নেওয়া যায় না।
দেশের চিকিৎসক-ঘাটতির কথা মাথায় রেখে পূর্বতন বোর্ড অব গভর্নরসের আমলে এমসিআই দু’টি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। l নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি। l পুরনো মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন বাড়াতে রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করা। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতির কথা মাথায় রেখেই এমসিআই তখন জানিয়েছিল, শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি তারা মকুব করবে। কিন্তু এ রাজ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছ’-আট শতাংশ ঘাটতিকেও এ বার বড় করে দেখানো হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করে কথাও বলে এসেছেন তাঁরা।
এমসিআইয়ের সুর বদল কেন?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “সম্ভাব্য কারণ দু’টি। l পূর্বতন বোর্ড অব ডিরেক্টরসের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। যাঁরা নতুন ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা হয়তো পূর্বসূরিদের অকর্মণ্য প্রমাণ করতে চাইছেন। l কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপরে চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যও আছে।”
বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা লিখিত ভাবে এমসিআই-কে জানিয়েছেন, আসন ছাঁটাইয়ের যে-সব কারণ দেখানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই অত্যন্ত মামুলি। কী রকম মামুলি? এ রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “দু’টি শয্যার মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক নেই কেন, ১৫০ জন পড়ুয়ার জন্য হস্টেলে ১৩০টি ঘর কেন, সর্বত্র পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে না কেন এই সব কারণেও আসন বাতিল হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের প্রশ্ন যেখানে জড়িত, সেখানে এমন পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও সাগর দত্ত মেডিক্যালে অ্যাকাডেমিক ভবন এবং সাগর দত্ত হাসপাতালে পৃথক হাসপাতাল কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শেষ হয়নি। এটা দ্রুত শেষ করা জরুরি। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, আগের ঠিকাদার চার বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই নতুন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
গ্রামে যেতে বন্ড ডাক্তারদের
স্নাতকোত্তর স্তরে পাশ করার পরে ডাক্তারদের গ্রামে যাওয়া আগেই বাধ্যতামূলক করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তা নিশ্চিত করতে ‘বন্ড’ সই করার ব্যবস্থা চালু করা হল এ বার। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমডি-এমএস পাশ করলে তিন বছর এবং স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পাশ করলে দু’বছর জেলার সুপার স্পেশ্যালিটি বা মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিষেবা দিতেই হবে। বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি ভাঙলে প্রতি বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। পড়া চলাকালীন সব শংসাপত্র জমা রাখবে স্বাস্থ্য দফতর। ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy