Advertisement
E-Paper

একমাত্র লিফ্‌ট সারাতে গড়িমসির অভিযোগ, চরম ভোগান্তি রোগীদের

অ্যাসিডে মহিলার মুখ, চোখ পুুড়ে গিয়েছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছে শরীর। ভর্তি করাতে উঠতে হবে চার তলায়। এমন রোগিণীকে জরুরি বিভাগ থেকে কোনও রকমে স্ট্রেচারে চাপিয়ে সিঁড়ি ভেঙে চার তলায় তুলতে হল। একই ভাবে কখনও স্ট্রেচারে অন্যের কাঁধে চেপে, কখনও খুব ধীরে সিঁড়ি ভাঙার কষ্ট সহ্য করতে করতেই ওয়ার্ডে পৌঁছতে হচ্ছে প্রসূতিকে। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এখন এই ছবি অতি পরিচিত। কারণ হাসপাতালের একমাত্র লিফ্‌টটি খারাপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৯
এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডে। ছবি: প্রকাশ পাল।

এ ভাবেই রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডে। ছবি: প্রকাশ পাল।

অ্যাসিডে মহিলার মুখ, চোখ পুুড়ে গিয়েছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছে শরীর। ভর্তি করাতে উঠতে হবে চার তলায়। এমন রোগিণীকে জরুরি বিভাগ থেকে কোনও রকমে স্ট্রেচারে চাপিয়ে সিঁড়ি ভেঙে চার তলায় তুলতে হল। একই ভাবে কখনও স্ট্রেচারে অন্যের কাঁধে চেপে, কখনও খুব ধীরে সিঁড়ি ভাঙার কষ্ট সহ্য করতে করতেই ওয়ার্ডে পৌঁছতে হচ্ছে প্রসূতিকে। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে এখন এই ছবি অতি পরিচিত। কারণ হাসপাতালের একমাত্র লিফ্‌টটি খারাপ।

গুরুত্বের দিক থেকে হুগলি জেলার অন্যতম প্রধান এই হাসপাতালের লিফ্‌ট দু’সপ্তাহ ধরে বন্ধ। রোগীদের ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বা নামিয়ে আনতে হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে। বেশিরভাগ সময় বাড়ির লোকজনকেই সেই কাজ করতে হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে তাঁদেরও। কবে লিফ্‌ট সারাই হবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই হাসপাতাল কর্তপক্ষের কাছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, লিফ্‌টি যাতে দ্রুত সারানো যায়, তার চেষ্টা চলছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ বাবদ টাকা বরাদ্দ হবে।’’ শ্রীরামপুরের চিকিসক ও বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ও লিফ্‌ট বন্ধ থাকা এবং তার জেরে রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজনের অসুবিধা নিয়ে অবহিত। তাঁর কথায়, ‘‘লিফ্‌টটি দ্রুত সারানোর চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরই সব ব্যবস্থা করছে।” যদিও রোগীর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, লিফটের গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও তা সারাতে গড়িমসি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফল ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।

একশো পঁচাত্তর বছরের পুরনো ওয়ালশ হাসপাতালের অন্তর্বিভাগটি চারতলা। লিফ্‌ট মাত্র একটি। এক এবং তিন তলায় মেল ওয়ার্ড, দুই এবং চার তলায় ফিমেল ওয়ার্ড। তিন তলায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। শ্রীরামপুর ছাড়াও চন্দননগর মহকুমার সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ নানা জায়গার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে অন্তর্বিভাগে রোগীর চাপও রয়েছে প্রচুর। ফলে লিফ্‌টের গুরুত্ব অপরিসীম। গত ১ ডিসেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, ‘হাসপাতালের একমাত্র লিফ্‌টটি বিপজ্জনক, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে’। এই অবস্থায় তিন তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে বা অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই লিফ্‌টটির অবস্থা খারাপ। বছর খানেক আগে পূর্ত দফতর (ইলেকট্রিক্যাল) লিফ্‌ট পরীক্ষা করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সতর্ক করে। মাস দু’য়েক আগে পূর্ত দফতর ফের জানিয়ে দেয়, লিফ্‌টটি আদৌ নিরাপদ নয়। সম্প্রতি এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে জেলাশাসক মনমীত নন্দা জানিয়ে দেন, ঝুঁকি নিয়ে লিফ্‌ট চালানো যাবে না। এর পরেই গত ১ ডিসেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লিফ্‌ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কয়েক মাস আগে জেলার সদর হাসপাতাল ইমামবাড়ার লিফট্‌ মাঝপথে বিকল হয়ে যায়। এক রোগিণী আটকে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পেলেও ওই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফের যাতে ওই ঘটনা না ঘটে, সে জন্যই ওয়ালশ হাসপাতালে ঝুঁকি নিয়ে লিফ্‌ট চালু রাখতে চায়নি জেলা প্রশাসন।

রাজ্য সরকার যেখানে বারে বারেই হাসপাতালের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার কথা বলছে, সেখানে পূর্ত দফতরকে আগে বলা সত্ত্বেও জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে কেন লিফ্‌ট সারাতে বিলম্ব হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

sreerampore walsh hospital lift
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy