Advertisement
E-Paper

ওয়ার্ড থেকেই উধাও সদ্যোজাত, চুরি কি না ধন্দ

ওয়ার্ড থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গেল এক নবজাতক। এবং তা নিয়ে হইচই হওয়ায় জানা গেল, হাসপাতালের সিসিটিভি-ই খারাপ হয়ে পড়ে আছে! ঘটনাটি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের নবজাত শিশু বিভাগ থেকে সদ্যোজাত ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এক মহিলা তাঁর নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন শিশুটির দিদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
শোকগ্রস্ত প্রসূতি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

শোকগ্রস্ত প্রসূতি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

ওয়ার্ড থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গেল এক নবজাতক। এবং তা নিয়ে হইচই হওয়ায় জানা গেল, হাসপাতালের সিসিটিভি-ই খারাপ হয়ে পড়ে আছে!

ঘটনাটি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের নবজাত শিশু বিভাগ থেকে সদ্যোজাত ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এক মহিলা তাঁর নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন শিশুটির দিদা। ওই মহিলাকে চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে, তিনি হাসপাতালের কেউ, না কি বহিরাগত, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, ওয়ার্ড থেকে এ ভাবে সদ্যোজাত নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পরে পুলিশ পিকেট বসেছে হাসপাতালে। অন্যান্য রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের ক্ষোভ, “সদর হাসপাতালের নিরাপত্তারই যদি এই হাল হয়, তা হলে জেলার অন্য সব গ্রামীণ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তার কী হাল, তা ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়শার কালীপুরের বাসিন্দা মেনকা মুর্মু বুধবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে পুরুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার সকালে মেনকাদেবীর একটি পুত্রসন্তান হয়। চিকিৎসকেরা ওই সদ্যোজাতকে দোতলা থেকে তিন তলায় নবজাত শিশু বিভাগে (নিওনেটাল ওয়ার্ড) স্থানান্তরিত করেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেনকাদেবীর সন্তান হওয়ায় তিনি দোতলায় প্রসূতি বিভাগেই ছিলেন। তিন তলায় নবজাতকের কাছে প্রসূতির দিদি পাণি হাঁসদা ও মুকরু মাঝি নামে তাঁদের এক আত্মীয়া ছিলেন। পাণিদেবী বলেন, “শুক্রবার সকালে বাচ্চাকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ছিল। তা দেওয়াও হয়। আমি বাচ্চাকে বেডে শুইয়ে অল্প সময়ের জন্য ওয়ার্ডের বাইরে আসি। বেডের কাছে বোনের শাশুড়িকে রেখে আসি। খানিক পরে ফিরে এসে দেখি, বেডে শিশু নেই। বোনের শাশুড়ি জানান, এক জন বাচ্চাকে তুলে নিয়ে গেল।”

এর পর পাণিদেবী কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের কাছে খোঁজ করেন। শিশুকে কে বা কারা নিয়ে গিয়েছে, তা জানতে না পেরে তিনি দোতলায় বোন মেণকাদেবীর কাছে গিয়েও দেখেন, বোনের ছেলে সেখানে নেই। এর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গোটা ঘটনাটি জানান পাণিদেবী। মুকরুদেবী বলেন, “এক মহিলা বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল। আমি বয়স্ক। ভেবেছিলাম, ওই মহিলা হাসপাতালেরই কেউ হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনেই বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে।”

প্রথমে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও খানিক পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাত ওই শিশুর হদিস পেতে গোটা হাসপাতাল জুড়ে তল্লাশি শুরু করেন। ততক্ষণে অবশ্য দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের মেন গেটের কাছে পুলিশ পিকেট বসানো হয়। মহিলা পুলিশ নার্স এবং মুকরুদেবীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন তলায় তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু, বিকেল অবধি ওই শিশুর কোনও হদিস মেলেনি। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, “ওয়ার্ড থেকে নবজাতক নিখোঁজ হবার ঘটনায় ওই পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে, এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকেরাই আমাকে জানিয়েছেন। শিশুটির খোঁজ চলছে।”

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ঘটনার কথা শুনেছি। এটা গুরুতর ঘটনা। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার জানিয়েছি, ওই শিশুটিকে খুঁজে বের করতেই হবে। আর ঘটনার তদন্ত করতে হবে। কী ভাবে একটি শিশু এ ভাবে ওয়ার্ড থেকে উধাও হয়ে যায়? তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শিশু উধাও রহস্য উন্মোচনের দাবিতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কংগ্রেস নেতা বিভাস দাস বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শিশু খুঁজে বের করতেই হবে।” হাসপাতালে কিছুদিন আগে সিসিটিভি বসানো হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত সুপার নিজেই বলছেন, “সিসিটিভি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। না হলে সেখান থেকে অন্তত কিছু সূত্র মিলত।” কেন সিসিটিভি বিকল, কেনই বা তা সারানোর ব্যবস্থা করা হয়নিএ সব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। উত্তমবাবু বলেন, “শুনলাম মাস দেড়েক সিসিটিভি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। কেন তা সময়মতো সারানো হয়নি, তা জানতে চেয়ে আগের সুপারকে শো-কজ করা হবে।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “যে নিরাপত্তারক্ষী ওই সময় ডিউটিতে ছিলেন, তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। সিসিটিভি বিকল থাকার ফলেও সমস্যা হয়েছে। জেলা চাইল্ড লাইনেরও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”

purulia new born baby hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy