Advertisement
২১ মে ২০২৪

কাজ চলে কুয়োর জলে, খসে পড়ছে পলেস্তারাও

কোথাও ডাক্তারের দেখা মেলে সপ্তাহে দু’দিন বা তিন দিন। কোথাও চিকিৎসা করে দেন নার্সরাই। ভেঙে পড়া দরজা-জানালা, জলের সমস্যাএ সব নিয়েই চলছে আসানসোলের নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আজ শেষ পর্ব।কোনও রোগী বিছানা বা মেঝে নোংরা করলে চরম সমস্যায় পড়েন বিদ্যানন্দপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। কারণ, পর্যাপ্ত জলের জোগান নেই। সাফাইয়ের জন্য জল আনতে যেতে হয় দেড় কিলোমিটার দূরে। শুধু বিদ্যানন্দপুর নয়, জলের সমস্যায় ভোগে আসানসোলের অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও। ডিহিকা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ মেলেনি এখনও। কুয়োর জল ও একটি চাপা কলই ভরসা।

মেডিক্যাল অফিসারের ঘরে চলে বিদ্যানন্দপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

মেডিক্যাল অফিসারের ঘরে চলে বিদ্যানন্দপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

কোনও রোগী বিছানা বা মেঝে নোংরা করলে চরম সমস্যায় পড়েন বিদ্যানন্দপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। কারণ, পর্যাপ্ত জলের জোগান নেই। সাফাইয়ের জন্য জল আনতে যেতে হয় দেড় কিলোমিটার দূরে। শুধু বিদ্যানন্দপুর নয়, জলের সমস্যায় ভোগে আসানসোলের অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও।

ডিহিকা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ মেলেনি এখনও। কুয়োর জল ও একটি চাপা কলই ভরসা। শুধু জল নয়, রোগীদের ভুগতে হয় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও। প্রধান রাস্তার সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংযোগকারী রাস্তার ৭৫ শতাংশই মোরাম বিছানো। অসুস্থ মানুষজন সেই পথ পেরিয়ে যেতে অসুবিধায় পড়েন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরগুলির বেহাল দশা। কর্মীরাই জানান, যখন-তখন ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। বিদ্যুৎ ছাড়াই কাজ করে চলেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই অধীনে রয়েছে বিদ্যানন্দপুরের কেন্দ্রটি। এখানে মেডিক্যাল অফিসারের আবাসনে চলছে চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ। এখানকার যিনি ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্স্টিং অফিসার (ডিডিও), তিনিই আবার বরাকর রানিং সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার এবং কুলটির কুমারডিহা, সোদপুরের ডিডিও। বিদ্যানন্দপুরে তিনি সপ্তাহে শুধু সোমবার আসেন। জ্বর, সর্দি, কাশির মতো রোগের ওষুধ দেন নার্সই। বাড়াবাড়ি হলেই আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠান। এ ছাড়া রয়েছেন এক সাফাই কর্মী। তাঁকে আবার সপ্তাহে দু’দিন ধেনুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। ধেনুয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে এক জন ফার্মাসিস্ট, তিন জন নার্স নিয়ে। চিকিৎসক আসেন সপ্তাহে তিন দিন। ফলে, বাকি দিনগুলিতে বিদ্যানন্দপুর, ডিহিকার মতো এখানেও ভরসা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখানে ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ান অবসর নেওয়ায় ওই ইউনিট বন্ধ। এই স্বল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজকর্ম চালানো সত্ত্বেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুদের নিয়মিত নানা পরীক্ষা করেন এক নার্স।

ডামরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আসেন সপ্তাহে তিন দিন। এক দিন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কাজ করার জন্য কাল্লা মোড়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে বসেন। বাকি দু’দিন যান জামুড়িয়ার চিচুড়িয়া প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। ডামরায় আর আছেন এক ফার্মাসিস্ট। তাঁকে আবার তিন দিন যেতে হয় মরিচকোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এক সাফাই কর্মী-সহ আছেন তিন জন কর্মী। জলের জন্য ভরসা হয় কুয়ো, অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে পুরসভার কল। কেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। জগন্নাথ মণ্ডল নামে এক বাসিন্দার কথায়, “যত দিন যাচ্ছে, অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।”

দক্ষিণ ধাদকা প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রেই ৬ দিন চিকিৎসক মেলে। সেই চিকিৎসক অসিত রায় আবার আসানসোল মাইনস বোর্ড অব হেলথের চিকিৎসক। এ ছাড়া আছেন, এক নার্স ও দু’জন কর্মী। সাফাই কর্মী নেই। অসিতবাবু বলেন, “দেড় বছরে পরিষেবা অনেক উন্নত হয়েছে।” তিনি জানান, জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিধায়ক মলয় ঘটকের তহবিলে আমূল সংস্কার হয়েছে। রোগী আনাগোনাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। মরিচকোটা চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহে দু’দিন ডাক্তার মেলে। তিনি আবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। এ ছাড়া এক জন সিস্টার এবং এক জন জিডিএ কর্মী আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান চিত্ত মণ্ডল জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটি ভাঙাচোরা অবস্থায় চলছিল। দরজা, জানালা খুলে নিয়ে গিয়েছিল চোরেরা। এখানেও মলয় ঘটকের বিধায়ক তহবিলের টাকায় ভবন সংস্কার হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসক দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

আসানসোলের সিএমওএইচ মনিকাঞ্চন সাহা বলেন, “পুরসভার অর্ন্তগত হওয়ার পরেও কেন সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি আরবান মর্যদায় উত্তীর্ণ হল না, তা বড় প্রশ্ন। তবে বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যজেলাকে দু’ভাগে, ন্যাশানাল রুরাল এবং ন্যাশানাল আরবান হেলথ মিশন গঠন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসানসোল পুর এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilotpal roychowdhuri asansole health center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE