Advertisement
E-Paper

কিটের অভাবেই হাসপাতাল পঙ্গু, তবু প্রত্যয়ী মন্ত্রী

উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ ছড়ানোর পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, রোগের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের কিছুই জানাননি। এ বার দক্ষিণবঙ্গে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোমের (এইএস) রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০১

উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ ছড়ানোর পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, রোগের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের কিছুই জানাননি। এ বার দক্ষিণবঙ্গে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোমের (এইএস) রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ বার স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়মিত সমস্ত তথ্য জোগানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য প্রশাসন সর্বতোভাবে প্রস্তুত বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও সংশয় অবশ্য রয়েই যাচ্ছে। সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনাই সংশয় বয়ে আনছে। যেমন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত কল্যাণীর নারায়ণ সরকারকে ন্যূনতম চিকিৎসা দিতে গিয়ে টানা-হ্যাঁচড়ার চূড়ান্ত হয়েছে। এমনকী, শেষ বেলায় তাঁর জন্য ট্রপিক্যালে ভেন্টিলেটর ধার করে এনেও দেখা যায়, যন্ত্র বিকল। শেষে তাঁকে ফের কলকাতা মেডিক্যালে ফেরত পাঠানো হয়, যেখানে শুক্রবার মারা গিয়েছেন ছাপান্ন বছরের প্রৌঢ়। পেডিয়্যাট্রিক ভেন্টিলেটরের অভাবে মেডিক্যালে প্রাণ গিয়েছে ডোমজুড়ের চার বছরের বালক সোনু মণ্ডলের। ন্যাশনালে দু’বছরের প্রান্তিক রায়ের রক্ত পরীক্ষা না-করেই বলে দেওয়া হয়েছে, মৃত্যুর কারণ এনসেফ্যালাইটিস!

সোনু এবং প্রান্তিক, দু’জনেরই এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ ছিল।

এমন বিভিন্ন ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি সত্যিই প্রস্তুত?

এই মুহূর্তে এইএস নিয়ে এসএসকেএমে ছ’জন ভর্তি। তার মধ্যে একটি মেয়ের রক্ত পরীক্ষায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। ইয়াসমিন পরভিন নামে মেয়েটিকে ২৭ জুলাই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দক্ষিণবঙ্গে রোগটি ছড়ানোর প্রভূত সম্ভাবনা। কলকাতারও স্বস্তিতে থাকার কোনও জায়গা নেই। এ হেন সঙ্কট-মুহূর্তে এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ‘কিট’ নিয়ে সরকারি অব্যবস্থাও অশনি সঙ্কেত বয়ে আনছে। কী রকম?

বস্তুত কিটের অভাবেই ঠুঁটো কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলো। কলকাতা মেডিক্যাল, এনআরএস, ন্যাশনাল, আরজিকর সর্বত্র কিটের হাহাকার। এ দিকে জ্বরের রোগীর কমতি নেই। যাদের উপরে রক্ত পরীক্ষার চাপ সব চেয়ে বেশি, সেই স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মুখ থুবড়ে পড়ার দশা। প্রতিষ্ঠানের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদেরও কিটের ভাঁড়ার প্রায় শেষ। এর পরে কী হবে, তাঁরাও জানেন না।

কিন্তু কলকাতার প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে তো উন্নত ল্যাবরেটরি রয়েছে! সেখানে যে পরীক্ষা সম্ভব, সরকারি তরফে একাধিক বার তা-ও জানানো হয়েছে। তা হলে এমন অবস্থাতেও কোথাও কিট নেই কেন? কেন সকলেই রক্ত পরীক্ষার জন্য ট্রপিক্যালের মুখাপেক্ষী?

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “কিট জোগানোর দায়িত্ব পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি-র। আমরা চেয়ে পাঠিয়েছি। ওরা জানিয়েছে, পাঠিয়ে দিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে পেয়ে যাব।” কিটের জোগান একান্তই যদি সময়ে এসে না-পৌঁছায়?

সে ক্ষেত্রে রাজ্যকে কিট কিনতে হবে জানান অধিকর্তা। সেই প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তত দিনে রোগ-পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে ভেবে উদ্বিগ্ন বহু চিকিৎসক। দক্ষিণবঙ্গে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোমের রোগী বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকার সতর্কতা জারি করছে না কেন, প্রশ্নও উঠছে।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। “সতর্কতা জারি করে কী হবে? যা করার তা তো স্বাস্থ্য দফতরকেই করতে হবে! আমরা প্রচার বাড়ানোয় জোর দিয়েছি।” মন্তব্য চন্দ্রিমাদেবীর। যদিও দিনভর ঘুরেও মহানগরের কোথাও এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে ব্যানার বা হোর্ডিং চোখে পড়েনি। কলকাতায় মশার অভাব নেই। বহু অঞ্চলে শুয়োরেরও অবাধ বিচরণ। তাই এ শহরেও যে জাপানি এনসেফ্যালাইটস হানা দেবে না, তা কি বুক ঠুকে বলা যায়?

বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য এই মুহূর্তে তেমন বিপদের সম্ভাবনা দেখছেন না। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের দাবি, “কুড়ি বছর মশা নিয়ে কাজ করছি। কিউলেক্স বিশনোই মশার লার্ভা কলকাতায় কখনও পাইনি। তবে আমরা সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।”

পতঙ্গবিদদের একাংশের বক্তব্য: কিউলেক্স বিশনোই যে পরিবেশে বংশ বিস্তার করে, কলকাতা পুর-এলাকায় তা পাওয়া যায় না। আশপাশেও সমীক্ষা চালিয়ে ওই প্রজাতির মশা এখনও ধরা পড়েনি। এ পর্যন্ত যা ধ্যানধারণা, তাতে ওই মশা ধানক্ষেতে ডিম পাড়ে। সেখানেই ডিম ফুটে লার্ভা বেরোয়। বর্ষাকালে ধান রোয়াকালীন যে পরিবেশ থাকে, সেটাই কিউলেক্স বিশনোই প্রজননের আদর্শ সময় বলে জানিয়েছেন পতঙ্গবিদেরা।

কলকাতা শহর ধানখেত নয়। বহু আশঙ্কার মধ্যে এটাই আপাতত স্বস্তির।

Japanese Encephalitis chandrima bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy