Advertisement
E-Paper

ক্ষোভ জানতে বনগাঁ হাসপাতালে বসানো হল ‘অভিযোগ বাক্স’

প্রায়ই চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু বা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে আয়াদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল চত্বরে গজিয়ে ওঠা দালাল চক্র নিয়েও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০২:১৭
এখানেই জমা করা যাবে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

এখানেই জমা করা যাবে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

প্রায়ই চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু বা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে আয়াদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল চত্বরে গজিয়ে ওঠা দালাল চক্র নিয়েও। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ এ সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেও কোথায়, কী ভাবে অভিযোগ জানাতে হয় বুঝতে পারেন না। রোগী ও তাঁদের আত্মীয়ের কাছ থেকে সরাসরি সে সব অভিযোগ জানতে উদ্যোগী হয়েছেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগে হাসপাতালে বসেছে ‘অভিযোগ বাক্স’। বিশ্বজিৎবাবু জানান, যারা অভিযোগ করছেন, তাঁদের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বাক্সে অভিযোগপত্র পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

হাসপাতালের মূল ভবনে ঢুকেই ডান দিকে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরি বাক্সটি। দেখতে অনেকটা ডাকবাক্সের মতো। তাতে তালা দেওয়া রয়েছে, যাতে অভিযোগপত্রগুলি কেউ দেখতে না পায়। বাক্সের ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হচ্ছে অভিযোগপত্র। বাক্সের গায়ে লেখা রয়েছে, ‘সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে, ডাক্তার জে আর ধর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ আপনার নাম, ঠিকানা, দূরাভাষ নম্বর-সহ লিখিত আকারে অভিযোগ বাক্সে জমা দিন। গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে।”

বছর কয়েক আগেও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষের জেরে এই হাসপাতালে ভাঙচুর মারপিটের মতো ঘটনা ঘটেছে। রোগীর আত্মীয়দের হাতে মার খেয়েছেন হাসপাতালের ডাক্তারও। ক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে জনতার হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশও। হাসপাতাল চত্বরে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা বাড়ছিল। এমনকি হাসপাতাল চত্বরে এক যুবককে খুন করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর মতো ঘটনা বা আয়াদের দুর্ব্যবহারও রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি খানিকটা হলেও বদলেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ বাক্সে নিয়মিত নানা অভিযোগ জমা পড়ছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর অভিযোগগুলি সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। মূলত রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে আয়াদের খারাপ ব্যবহার, রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে এক শ্রেণির অস্থায়ী কর্মীর জোর করে টাকা নেওয়া বা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশের অশোভন আচরণের মতো অভিযোগই বেশি। স্থানীয় সূত্রেও জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালের একাংশের আয়া ও নার্সদের ব্যবহার নিয়ে মানুষের দীর্ঘ দিনের অসন্তোষ। শাসকদলের তত্ত্বাবধানে অনেক আয়া এখানে কাজ করেন। অস্থায়ী কর্মীদের অনেকেও শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছেন। সে কারণেই তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। গয়ারামবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ নিয়ে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই রোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জন আয়াকে দু’সপ্তাহের জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক জন আয়াকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে কুড়ি জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনই শ্রম দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী বেতন পেতেন না। কয়েক জনের বিরুদ্ধে রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে, তাঁদের বেতন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। গয়ারামবাবু বলেন, “এখন সকলেই বেতন পাচ্ছেন। ফলে আশা করা যায়, ওই সমস্যা আর থাকবে না।” হাসপাতাল চত্বরে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ ঘরে বসে মদ্যপান ও গালিগালাজ করে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সুপার জানিয়েছেন, আপাতত তাঁদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে এমন হলে পদক্ষেপ করা হবে। অনেক রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করেছেন, রাতে হাসপাতাল চত্বরে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সুপার জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও হাসপাতালে সারা ক্ষণ দু’জন পুলিশ কর্মী পাহারায় থাকতেন। সম্প্রতি তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছে। গয়ারামবাবুর অভিযোগ, পুলিশ কর্তাদের বলা সত্ত্বেও এখনও হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন হয়নি। মাঝে মধ্যে অবশ্য হাসপাতালে পুলিশি টহল চলে। পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা ব্যবস্থা নেবে।

হাতের কাছেই অভিযোগপত্র থাকায় সুবিধা হয়েছে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দেরও। আগে অভিযোগ জানানোর জন্য হাসপাতাল সুপারের জন্য অপেক্ষা করতে হত বা থানায় যেতে হত। তত ক্ষণে অভিযুক্তেরা ভয় দেখিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে তাঁদের অভিযোগ করা থেকে নিরস্ত করতে পারতেন। এখন আর সেই সমস্যা নেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারছেন। হেনস্থাও হতে হচ্ছে না।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ আশা করি, এর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার মান অনেকটাই বাড়বে।”

bongaon hospital complain box
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy