Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কব্জির ধমনি থেকে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, কর্মশালা দুর্গাপুরে

প্রচলিত পদ্ধতিতে দু’পায়ের সংযোগস্থলে থাকা ফিমোরাল আর্টারি ব্যবহার করে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এতে অনেকের ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা রোগী বিছানা ছাড়তে পারেন না। অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। স্থূলকায়দের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি। মেদের গভীরে ডুবে থাকে ওই ধমনী। ফলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে গিয়ে রক্তপাত হয়। কখনও কখনও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও থাকে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের মতে, এই জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি’।

‘ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি’ বিষয়ে কর্মশালা আয়োজিত হল দুর্গাপুরে দ্য মিশন হাসপাতালে।—নিজস্ব চিত্র।

‘ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি’ বিষয়ে কর্মশালা আয়োজিত হল দুর্গাপুরে দ্য মিশন হাসপাতালে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

প্রচলিত পদ্ধতিতে দু’পায়ের সংযোগস্থলে থাকা ফিমোরাল আর্টারি ব্যবহার করে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এতে অনেকের ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা রোগী বিছানা ছাড়তে পারেন না। অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। স্থূলকায়দের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি। মেদের গভীরে ডুবে থাকে ওই ধমনী। ফলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে গিয়ে রক্তপাত হয়। কখনও কখনও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও থাকে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের মতে, এই জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি’। এ ক্ষেত্রে কব্জির নীচে থাকা রেডিয়াল আর্টারি ব্যবহার করা হয়। এতে রক্তপাতের ঝুঁকি নেই। রোগী দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পান। ফলে মৃত্যুর আশঙ্কাও কম।

শুক্রবার এই ‘ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি’ নিয়েই কর্মশালার আয়োজন করেছিল দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল। চলবে আজ, শনিবার পর্যন্ত। হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু বলেন, “এই কর্মশালায় আগ্রহী চিকিৎসকেরা হাতেকলমে বিষয়টি শেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এই পদ্ধতি প্রায় ঝুঁকিহীন। প্রায় যন্ত্রণাহীন এই পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণের ভয়ও নেই। আমাদের হাসপাতালে প্রায় একশো শতাংশ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এই পদ্ধতিতেই করা হচ্ছে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দেশে এর আগে এই ধরনের কর্মশালা আয়োজিত হয়েছে সাত বার। কিন্তু কোনও সময়েই পূর্বাঞ্চলে হয়নি। এ দিনের কর্মশালায় যোগ গিতে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে তো বটেই, হাজির ছিলেন ভিন্ রাজ্যের ডাক্তাররাও। ছিলেন কানাডার ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্ক অ্যান্ড মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ভ্লাড জাভিক। তিনি বলেন, “কানাডায় প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। ইউরোপে সামগ্রিক ভাবে ৫০ শতাংশ।” মিশন হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রীরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন প্রক্রিয়া আমাদের নাগালে এসেছে। ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও তেমনই একটি। নিজেদের অভিজ্ঞতায় ভাল ফল পেয়েছি বলেই এখানে আমরা প্রায় একশো শতাংশ ক্ষেত্রে এটা করে খুব ভাল ফল পাচ্ছি। অন্যত্রও এটা অনুসরণ করলে ভাল হয়।” হাসপাতালের অন্যতম চিকিৎসক সঞ্জয় চুঘ বলেন, “আমি দীর্ঘদিন বাইরে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই ধরনের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সে জন্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দরকার।”

বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন অন্য হৃদরোগ চিকিৎসকরাও। চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার জানান, এখন সরকারি হাসপাতালেও তাঁরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

তবে তাঁর বক্তব্য, “চিকিৎসকের দক্ষতা না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তখন আবার ট্রান্সরেডিয়াল-এর পরে ফিমোরাল আর্টারিতেই ফিরতে হয়। ফলে দু’বারের ঝক্কি। তাই চিকিৎসকের প্রশিক্ষণটা এ ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।” হৃদরোগ চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ট্রান্সরেডিয়াল-এর পক্ষে সায় দিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, “রেডিয়াল আর্টারি যে হেতু ছোট, তাই সেটার ভিতর দিয়ে তার ঢোকানোর সময়ে ধমনী অনেক সময়ে সঙ্কুচিত হয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারগুলি নড়ানো যায় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির আগে ওই সঙ্কোচন বন্ধের ওষুধ দেওয়া হয়। তাতেও কাজ না হলে ফিরতে হয় ফিমোরাল আর্টারিতেই।”

তবে ট্রান্সরেডিয়াল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ক্ষেত্রে যে হেতু এক দিনেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা সম্ভব, তাই ক্রমশ সেই পথেই হাঁটা উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা প্রায় সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

angioplasty durgapur mission hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE