Advertisement
E-Paper

গরহাজিরা, ৩ ডাক্তারের বেতন বন্ধের নির্দেশ

ছুটি না নিয়ে এবং ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে কাজে যোগ না দেওয়ার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্তের নির্দেশে গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন চিকিৎসকের বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন হাসপাতালের সুপার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারীবাবু বলেন, “ওই তিন চিকিৎসককে প্রথমে শোকজ ও পরে চিঠি পাঠিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩

ছুটি না নিয়ে এবং ছুটির আবেদন মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে কাজে যোগ না দেওয়ার অভিযোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্তের নির্দেশে গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন চিকিৎসকের বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন হাসপাতালের সুপার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারীবাবু বলেন, “ওই তিন চিকিৎসককে প্রথমে শোকজ ও পরে চিঠি পাঠিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁরা সেই নির্দেশ পালন করেননি। তাই তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।” বাকি দু’জনের মতামত জানা না গেলেওএই নির্দেশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন এক চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ আবু সাদেক এবং জেনারেল মেডিসিন বিভাগের দুই চিকিৎসক সুমিত্রা মন্ডল ও কায়েম গোলদার দীর্ঘদিন হাসপাতালে অনুপস্থিত। তাঁদেরই বেতন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছুটি না নিয়ে মাঝেমধ্যে হাসপাতালে গরহাজির থাকার অভিযোগে এক অ্যানাস্থেসিস্ট, রেডিওলজিস্ট ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সহ মোট ৭ জন চিকিৎসককে সম্প্রতি শোকজ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, শোকজ করা হয়েছে এরকম সাত চিকিৎসকের মধ্যে ছয় চিকিৎসক এখনও শো-কজের কোনও জবাব দেননি। নিয়মিত কাজেও যোগ দিচ্ছেন না তাঁরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি নির্দেশ পালন না করলে তাঁদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে তিন চিকিৎসকের বেতন বন্ধের নির্দেশ জারি হয়েছে তাঁদের মধ্যে কায়েম গোলদারের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। সাদেকবাবু ফোন ধরেননি। তবে সুমিত্রাদেবীর দাবি, গত ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটির আবেদন করে পারিবারিক কাজে তিনি কলকাতায় গিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, মেয়ের পড়াশোনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চাইল্ড কেয়ার লিভে ছুটি নেওয়ার আবেদন জানালেও সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তারমধ্যে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে একটি প্রশিক্ষণের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমার করণীয় কিছু নেই বলেই আমি কাজে যোগ দিচ্ছি না।”

সুমিত্রাদেবীর স্বামী স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ প্রদীপ মন্ডল রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালেই কর্মরত ছিলেন। মাস চারেক আগে তাঁকে নদিয়ার কল্যাণীর একটি সরকারি হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “আমি সিপিএম প্রভাবিত অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ায় রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত চিকিৎসকদের সংগঠন আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বিনা দোষে ও নানা কারণে হেনস্থা ও হয়রানি করছে।”

স্বাস্থ্য দফতরে বার বার লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না তাঁর কথায়, “নিয়ম অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই সরকারি চিকিৎসক হলে তাঁদের একই জায়গায় কাজে বহাল করার নিয়ম। আমাকে রাজনৈতিক কারণে রায়গঞ্জ থেকে কল্যাণীতে বদলি করা হয়েছে। এখন স্ত্রীর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হল। আমরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের জেলা সম্পাদক দেবব্রত রায় প্রদীপবাবুর অভিযোগকে সমর্থন করে বলেন, “সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে প্রদীপবাবু ঠিকই বলেছেন। আমার আর কিছু বলার নেই।”

তৃণমূল প্রভাবিত প্রগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি তথা রায়গঞ্জ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথবাবুর দাবি, সুমিত্রাদেবী স্বামীর কর্মস্থলে বদলি হওয়ার কোনও আবেদন করেননি। তিনি বলেন, “ মিথ্যা অভিযোগ না তুলে প্রদীপবাবু ও সুমিত্রাদেবীর চিকিৎসার কাজে মন দেওয়া উচিত।” হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অমল আচার্য বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজে কারও গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী।”

একনজরে

• রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল- অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ ৪৬টি

• রয়েছেন- ৩৯ জন চিকিৎসক।

• ১০ জন চিকিৎসক গত এক থেকে তিন মাস অনুপস্থিত বা নিয়মিত কাজে যোগ দিচ্ছেন না বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ।

• ফলে বহির্বিভাগ, শিশুবিভাগ, এসএনসিইউ, প্রসূতি বিভাগ, মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা পরিষেবার কাজ ব্যহত হচ্ছে।

gour acharya raiganj district hospital doctor suspend
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy