Advertisement
E-Paper

জলাতঙ্কের ওষুধ অমিল, মৃত্যু হচ্ছে বহু রোগীর

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা হু) ঘোষণা করেছে, ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল করা হবে। আর ২০১৪ সালে খাস কলকাতার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে জলাতঙ্কের উপসর্গ নিয়ে ৩৬ জন ভর্তি হন। ৩৬ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেককে ঠিক সময়ে প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৬

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা হু) ঘোষণা করেছে, ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল করা হবে। আর ২০১৪ সালে খাস কলকাতার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে জলাতঙ্কের উপসর্গ নিয়ে ৩৬ জন ভর্তি হন। ৩৬ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেককে ঠিক সময়ে প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি।

এই যেখানে পরিস্থিতি, সেখানেই এখন জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ওষুধ ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ নিয়ে হাহাকার চলছে। শুধু আই ডি নয়, আকাল চলছে পাস্তুর ইনস্টিটিউট এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালেও। একই পরিস্থিতি জেলা হাসপাতালগুলিরও। কোথাওই পর্যাপ্ত পরিমাণে ইমিউনোগ্লোবিউলিন নেই।

সাধারণ ভাবে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় না। কিন্তু এ বার আকাল শুরু হয়েছে ইমিউনোগ্লোবিউলিনের-ও। ‘থার্ড ডিগ্রি’ বা তার বেশি মাত্রার কামড়ে, যেখানে রক্তপাত হয়েছে যথেষ্টই, সেখানে কাটা জায়গায় ইমিউনোগ্লোবিউলিনের প্রয়োগ আবশ্যিক বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের এই অবস্থার কথা শুনে স্তম্ভিত চিকিৎসক মহল। ভোগান্তি চরমে উঠছে রোগীদের।

কুকুরে কামড়ালে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া জরুরি কেন? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ১৪ দিনের মাথায় কাজ শুরু করে। তার আগের সময়টায় যাতে রোগ থাবা না বসায়, সেই জন্যই ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ইন ইন্ডিয়া’র সহ-সভাপতি, চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার বলেন, “অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয় সাত দিন পর থেকে। পুরোপুরি তৈরি হতে ১৪ দিন লাগে। প্রতিষেধক টিকার অন্তত তিনটি ডোজের আগে অনেক ঝুঁকি থাকে।”

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সমস্ত হাসপাতালকে স্থানীয় স্তরে ওষুধটি নিজেদেরই কিনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলাতঙ্ক কাউকে সময় দেয় না। তাই সাবধানের কোনও মার নেই।”

বিভিন্ন জেলা হাসপাতালের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বাজারেও ইমিউনোগ্লোবিউলিন পাচ্ছেন না। কলকাতার একাধিক দোকানেও ওষুধটি অমিল। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার জীবনদায়ী বেশ কিছু ওষুধের দাম বেঁধে দিয়েছে। তার মধ্যে জলাতঙ্কের এই ওষুধও রয়েছে। প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি দাম বাড়াতে চাইলেও তা পারছে না। উল্টে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে অনেকেই।”

কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সমস্যাটা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সেই কারণেই মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো বেশ কিছু রাজ্য সমস্যার কথা আগাম আঁচ করে বেশি পরিমাণে ওষুধ মজুত করে রেখেছে।

এ রাজ্যে কেন সেটা হয়নি? স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য এই প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারেননি।

সম্প্রতি এক সকালে বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বারাসত থেকে আসা তরুণ নস্করের পরিবারের লোকজন অঝোরে কাঁদছেন। কী ব্যাপার? তাঁরা জানালেন, রাস্তার একটা কুকুর এ দিন সকালে তরুণবাবুর পায়ে কামড়েছে। সেই কামড় এতটাই জোরালো যে, পায়ের মাংস অনেকটাই খুবলে গিয়েছে। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই ডাক্তার প্রথমেই ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগের কথা বলেছেন। সেই কারণেই আই ডি হাসপাতালে ছুটে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু আই ডি থেকে তাঁদের আবার স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও ‘স্টক’ নেই।

পাস্তুর এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে কিছু ইমিউনোগ্লোবিউলিন রাখা আছে। তবে সংখ্যায় যেহেতু তা নিতান্তই কম, তাই খরচ করা হচ্ছে খুব বাছবিচার করে। ফলে অনেককেই না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক হিসেবে সাধারণত পাঁচটি ইঞ্জেকশন নিতে হয়। ইমিউনোগ্লোবিউলিন একেবারে গোড়াতেই এক বার দিতে হয়।

চিকিৎসক সুমিতবাবু বলেন, “ইমিউনোগ্লোবিউলিন পাওয়া না গেলে তার ফল যে কী মারাত্মক হতে পারে, সেটা সরকারকে বুঝতে হবে। আই ডি-র মতো হাসপাতালে এটা অমিল। পুরসভার ক্লিনিকেও দেওয়া হয় না। সাধারণ দুঃস্থ মানুষ তা হলে কোথায় যাবেন? যেহেতু এটা জীবনদায়ী ওষুধ, সেই কারণে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির উপরেও চাপ সৃষ্টি করা খুব জরুরি।”

medicine who rabies soma mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy