Advertisement
২২ মে ২০২৪
খড়্গপুর হাসপাতালে পরিদর্শনে স্বাস্থ্য কর্তারা, হল বৈঠকও

ট্রমা ইউনিট খুলতে পারে চলতি বছরেই

সাত বছর ধরে ভবন ছাড়া আর কিছুই হয়নি। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে সেই ট্রমা কেয়ার ইউনিট পরিদর্শনে এলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও করেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের যুগ্ম অধিকর্তা হিমাদ্রি সান্যাল, ট্রমার রাজ্য নোডাল আধিকারিক তথা স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-অধিকর্তা বরুণ সাঁতরা।

হাসপাতালে পরিদর্শন করছেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

হাসপাতালে পরিদর্শন করছেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:২১
Share: Save:

সাত বছর ধরে ভবন ছাড়া আর কিছুই হয়নি। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে সেই ট্রমা কেয়ার ইউনিট পরিদর্শনে এলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও করেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের যুগ্ম অধিকর্তা হিমাদ্রি সান্যাল, ট্রমার রাজ্য নোডাল আধিকারিক তথা স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-অধিকর্তা বরুণ সাঁতরা। বৈঠকে ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ বেরা, খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল, হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়।

পরিদর্শন শেষে ট্রমার নোডাল আধিকারিক বরুণবাবুর বক্তব্য, “প্রায় সব পরিকাঠামোই রয়েছে। তবে কর্মীর অভাবে এই ইউনিট চালু করা যায়নি। চলতি বছরের শেষে কিছু কর্মী দিয়ে এই ইউনিট চালুর চেষ্টার করব।” বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম-অধিকর্তা হিমাদ্রিবাবু বলেন, দু’দফায় কেন্দ্র থেকে আসা টাকা দিয়ে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। কিছু সরঞ্জামের জন্য বর্ধমান ও খড়্গপুরের জন্য টেন্ডার হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এই ট্রমা সেন্টারের জন্য তৃতীয় দফার টাকা পাওয়া যায়নি। তাই রাজ্য বাজেটে কিছু টাকা পাওয়া গেলে চলতি বছরের শেষেই চিকিত্‌সক নিয়োগ করে এই ইউনিট চালু হওয়ার আশা রয়েছে।

খড়্গপুর শহরের পূর্ব-পশ্চিমে মুম্বইগামী ৬ নম্বর এবং উত্তর-দক্ষিণে রয়েছে ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আর রয়েছে বিস্তৃত রেলপথ। ফলে হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। সে কথা মাথায় রেখে ২০০৬ সালে রাজ্যের ৬টি জায়গার সঙ্গে খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ উদ্যোগে ভবন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কেন্দ্র প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপরে ভবন নির্মাণের কাজ ২০০৯ সালে শেষ হয়। কেনা হয় বেশ কিছু সরঞ্জাম। কিন্তু বিদ্যুত্‌ সংযোগের অভাবে এখনও জেনারেটর চালু করা যায়নি। নেই চিকিত্‌সক, নার্স ও কর্মী। ফলে, ট্রমা ইউনিট চালু করা যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ট্রমা ইউনিটের জন্য ৩ জন সার্জেন, ৩ জন অর্থোপেডিক, ৩ জন অ্যানাস্থেটিস্ট, ৪ জন জেনারেল ডিউটি অফিসার ও ২৫ জন নার্স প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার একজন করে এক্স-রে ও ল্যাব টেকনিশিয়ান। এই মুহূর্তে এক জন সার্জেন ও এক জন নার্স ছাড়া কেউই নেই। অথচ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার এই ট্রমা কেয়ার ইউনিটের কথা বলেছেন। গত ১৭ অগস্ট মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতিও এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পালও বারবার স্বাস্থ্যভবনে তদ্বির করেছেন।

তারপরেই ট্রমা ইউনিট পরিদর্শনে এলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এ দিন তাঁরা ট্রমা কেয়ার ইউনিটের ভবনের পরিকাঠামো দেখেন। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, মেজর ওটি, মাইনর ওটি, নার্স রুম-সহ প্রতিটি বিভাগ ঘুরে দেখেন তাঁরা। প্রাইমারি অবজার্ভ রুম না থাকার প্রসঙ্গটি ওঠে। পরে স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলটি হাসপাতালে মূল অপারেশন থিয়েটারও পর্যবেক্ষণ করেন।

এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের পরে হাসপাতালের কর্মীরা আশান্বিত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের হাসপাতাল ইউনিটের উপদেষ্টা দিলীপকুমার সরখেলের কথায়, “আমরা প্রথম থেকেই এই ইউনিট চালু নিয়ে লড়াই করছি। বিভিন্ন ধাপে কাজ এগিয়েছে। চিকিত্‌সক নিয়োগ শেষ ধাপ। তাই হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে চিকিত্‌সক নিয়োগের আশ্বাস দেওয়ায় আশার আলো দেখছি আমরা।” দ্রুত ট্রমা কেয়ার ইউনিট খোলার ব্যাপারে আশাবাদী পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশবাবুও। তিনি বলেন, “আমাদের চিকিত্‌সক ও জেনারেটর-সহ কিছু সরঞ্জামের অভাব ছিল। ওঁরা জানিয়েছেন সরঞ্জামের জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। চিকিত্‌সক নিয়োগের চেষ্টা চলছে। এই দু’টি পেয়ে গেলেই খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিট চালু করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE