Advertisement
E-Paper

দাঁত সারাতে গিয়ে বিপাকে তরুণী, মামলা চিকিৎসাকেন্দ্রের বিরুদ্ধে

ফেসবুকের প্রোফাইল-এ তাঁর হাসিমুখের ছবি নেই। বিয়েবাড়ি বা অন্য অনুষ্ঠানে, বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তোলার সময়ে সচেতন হয়ে যান। পাছে মুখ ফাঁক হয়ে যায়! ২৪ বছরের তরুণী রাস্তায় বেরিয়ে ফুচকা খেতে পারেন না। সারাদিনের খাবার বলতে চায়ে ডোবানো বিস্কুট, গলা ভাত। মেনুতে মাছ নেই, মাংস নেই। যা কিছু চিবিয়ে খেতে হয়, তার কোনও কিছুই নেই তাঁর খাদ্য-তালিকায়।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০১:৫৯
এমনই অবস্থা রেমিলার দাঁতের।—নিজস্ব চিত্র।

এমনই অবস্থা রেমিলার দাঁতের।—নিজস্ব চিত্র।

ফেসবুকের প্রোফাইল-এ তাঁর হাসিমুখের ছবি নেই।

বিয়েবাড়ি বা অন্য অনুষ্ঠানে, বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তোলার সময়ে সচেতন হয়ে যান। পাছে মুখ ফাঁক হয়ে যায়!

২৪ বছরের তরুণী রাস্তায় বেরিয়ে ফুচকা খেতে পারেন না। সারাদিনের খাবার বলতে চায়ে ডোবানো বিস্কুট, গলা ভাত। মেনুতে মাছ নেই, মাংস নেই। যা কিছু চিবিয়ে খেতে হয়, তার কোনও কিছুই নেই তাঁর খাদ্য-তালিকায়।

সদ্য এমএ পাস করা ওই তরুণী, রেমিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শখ বলতে ছিল গান। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ছাত্রীর গান গাওয়াও এখন বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। গাইবেনই বা কী করে? মুখ বন্ধ করলে উপর ও নীচের পাটির দাঁতের মধ্যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে অনেকটাই। দুই পাটির দাঁতে লোহার তার জড়ানো। সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে স্বর। অনেক শব্দের উচ্চারণও এখন জড়িয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

হাওড়ার বালির বাসিন্দা, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান রেমিলা। মা পাপিয়াদেবীর চিন্তা, “গান গাইতে না পেরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভেবেছিলাম একমাত্র মেয়ে, পড়াশোনা শিখে, বড় হয়ে বিয়ে-থা করে সংসার করবে। চাকরি করবে। কিন্তু, বিয়ে দেব কী করে?”

কী করে এই হাল হল রেমিলার?

বাবা-মা রঞ্জন ও পাপিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ছোটবেলায় ‘দুধের দাঁত’ পড়েনি রেমিলার। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা দেখা দেয় ঠিকই, কিন্তু তা তখনও এত ভয়াবহ চেহারা ধারণ করেনি। দাঁত উঠতে সমস্যা হতো। ২০০৮ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আচমকাই ভয়ানক যন্ত্রণা শুরু হয় দাঁতে। তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু হয়। উপরে দু’দিকে দুটো গজদাঁত ছিল। সমস্যা ছিল তা নিয়েও। দু’তিন জন চিকিৎসকের চেম্বার ঘুরে দক্ষিণ কলকাতার ‘স্মাইল অ্যান্ড প্রোফাইল’ নামে দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছন ওই দম্পতি। তাঁদের অভিযোগ, ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের গাফিলতির জন্যই আজ তাঁদের মেয়ের এই অবস্থা। যে কারণে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের মামলাও করেছেন। আগামী ৩ জুন সেই মামলার শুনানি রয়েছে।

রঞ্জনবাবু বলেন, “খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথম যখন মেয়েকে নিয়ে ওই কেন্দ্রে যাই, চিকিৎসকেরা জানান, ‘ঠিক হয়ে যাবে’। নির্দিষ্ট টাকায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মেয়ের জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু, তা তো হয়ইনি। উল্টে দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” অভিযোগ, তিন বছরের বেশি সময় ধরে এক লক্ষ টাকারও বেশি খরচ করে এখন দিশাহারা ওই দম্পতি। এক সময়ে রেমিলার উপর ও নীচের মাড়িতে অস্ত্রোপচার করে আংটা বসিয়ে রবার ব্যান্ড দিয়ে দুই মাড়ি বেঁধে রাখা হতো। সে সব আংটার বেশির ভাগই এখন খুলে দেওয়া হয়েছে। সামনের কয়েকটি দাঁত কেটে ছোটও করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, কামড়ালে কিছুতেই উপরের দাঁত এসে নীচের দাঁতে বসছে না।

পাপিয়াদেবী জানিয়েছেন, ইদানীং দাঁতে জড়িয়ে রাখা তারের অংশ খুলতে শুরু করছে। খোঁচা হয়ে তা কখনও জিভ, কখনও গালের ভিতর কেটে দিচ্ছে। পাপিয়ার কথায়, “মুখের ভিতরে ঘা-ও হয়ে যাচ্ছে। একে তো মেয়ে খেতে পারছে না। তার উপরে ঘায়ের ফলে যে কী অবস্থা হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।”

দন্তচিকিৎসক সৃজন মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি রেমিলাকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, অবস্থা সুবিধার নয়। আরও অন্তত আড়াই বছর চিকিৎসা করে তবেই বলা সম্ভব সত্যিই রেমিলা স্বাভাবিক দাঁত ফিরে পাবেন কি না। খরচ কমপক্ষে আরও আড়াই লক্ষ টাকা। আতান্তরে পড়েছেন বাবা-মা। রঞ্জনবাবুর কথায়, “এত টাকা কী করে জোগাড় করব?” আইনজীবীদের পরামর্শ মেনে তাই তাঁরা সরাসরি ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকেছেন ওই দন্তচিকিৎসা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসার দীপান্বিতা সরকার বলেন, ‘‘ক্রেতা সুরক্ষা দফতর থেকে আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যা বলার, ওঁদের বলে দিয়েছি। ওই তরুণীকে আমাদের এখানেই আরও চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ওঁর বাবা-মা রাজি হননি।

আর খাওয়া সংক্রান্ত যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা ওই তরুণীর আগে থেকেই ছিল।”

sunanda ghosh dental problems
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy