মেদিনীপুরের শরৎপল্লিতে অবাধে চড়ে বেড়াচ্ছে শুয়োর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
শহর লাগোয়া কোলসাণ্ডায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জ্বর, খিঁচুনি, মাথা ব্যাথার মতো যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তা থেকে রোগটি অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম (এইএস) বলেই মনে করা হচ্ছে। অবশ্য জেলার স্বাস্থ্য- কর্তারা এ নিয়ে কিছু বলেননি। শুয়োরই এসেফ্যালাইটিসের অন্যতম বাহক। এদের শরীরে বাসা বাঁধে সেই ভাইরাস যা কি না কিউলেক্স বিশনোই প্রজাতির মশার কামড়ে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাস যুক্ত বিশনোই মশা কোনও মানুষকে কামড়ালে তার এনসেফ্যালাইটিস হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। কোলসাণ্ডার যে এলাকার দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই এলাকায় বেশ কিছু শুয়োর রয়েছে। শুয়োরগুলো বাড়ির সামনে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকাও বেশ কিছু শুয়োর রয়েছে। কোলসাণ্ডার ঘটনার পরও অবশ্য নড়েচড়ে বসেননি পুর- কর্তৃপক্ষ। সোমবারও শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবাধেই শুয়োর ঘুরছে।
কেন এই পরিস্থিতি? শুয়োর ধরার পরিকাঠামো কী পুরসভার নেই? মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় শুয়োর রয়েছে। ফলে, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শুয়োর ধরার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগতও একটা সমস্যা রয়েছে।” শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের অবশ্য দাবি, “যে সব এলাকায় শুয়োর রয়েছে, সেখানে নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়। নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে কি না, তা দেখাও হয়।” সদর শহরে ঠিক কত শুয়োর রয়েছে? সরকারি হিসেব অনুযায়ী মেদিনীপুর শহরে শুয়োরের সংখ্যা ৬২২টি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮টি পুরসভা রয়েছে। পুর- এলাকার মধ্যে সবথেকে বেশি শুয়োর রয়েছে মেদিনীপুর শহরেই। ঝাড়গ্রামে রয়েছে ৫৮৬টি, খড়্গপুরে ৫৫৪টি, চন্দ্রকোনায় ৫৮টি, খড়ারে ১৩৭টি, রামজীবনপুরে ৩৭টি, ক্ষিরপাইয়ে ৩৬১টি। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য দাবি, “গত দু’- তিন মাসে শহরে শুয়োরের সংখ্যা কমেছে। অনেকে শুয়োর বিক্রি করে দিয়েছেন।” বস্তুত, এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধের জন্যই ‘শুয়োর হঠাও’ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শুয়োর ধরার কাজ শুরুও হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য এই অভিযান শুরু হয়নি। অথচ, জেলায় থাকা শুয়োরের সংখ্যাটা কম নয়। ৯৫,২৫৩। এটা সরকারি হিসেবে। বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা এর থেকেও বেশি।
কেন শুয়োর ধরার কাজ শুরু হয়নি? প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের এক সূত্রে খবর, জেলায় এই পরিকাঠামো নেই। তাছাড়া, নির্দেশ অনুযায়ী প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর যেখান- সেখান থেকে শুয়োর ধরতে পারে না। এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে হলে তা পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভাকেই করতে হবে। পরিস্থিতি দেখে তাই পশ্চিম মেদিনীপুরে সচেতনতা প্রচারের উপরই বেশি জোর দেওয়া হয়। শুয়োরদের টিকাকরণের কাজেও গতি আনা হয়। মাস কয়েক আগে উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের প্রভাব দেখা দেয়। তারপর নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন এলাকায় শুয়োরের খোঁয়াড় তৈরি করা হয়। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে আক্রান্তদের অধিকাংশের দেহে যে সব রোগ- জীবানু হামলা চালিয়েছে তার অন্যতম বাহক হল জল। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের হারও দ্রুততর হয়। সদর শহরে অবশ্য কোথাও শুয়োরের খোঁয়াড় তৈরি হয়নি। জেলার অন্যত্রও এই পরিস্থিতি। পুর- এলাকার আশপাশে নিয়ম মেনে খামারও তৈরি হয়নি। যেখানে শুয়োরের দল থাকতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শহর লাগোয়া যে এলাকার দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই কোলসাণ্ডার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণেই বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি। মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন একজনের শারিরীক পরিস্থিতির উন্নতিই হয়েছে। সোমবারও এলাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির চলেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই।” তাঁর কথায়, “জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।” জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ওই এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। স্বাস্থ্য- কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। মানুষ বোঝাচ্ছেন।” এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় শিবির চলবে বলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy