শুয়োর ধরার অভিযান। বৃহস্পতিবার, আর জি কর হাসপাতাল এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
শুয়োর ধরতে বৃহস্পতিবার নাজেহাল হলেন কলকাতা পুরসভার কর্মীরা। ঠিক হাওড়ার মতোই। এ দিন কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের কর্মীরা কলকাতার একাধিক জায়গায় শুয়োর ধরার অভিযান চালিয়ে বিকেল পর্যন্ত ৩২টিকে পাকড়াও করেন বলে পুরসভা সূত্রে খবর। কিন্তু তাদের খোঁয়াড়ে পুরতে গিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা ধরে নাস্তানাবুদ হন পুরকর্মীরা। বুধবার হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে কয়েক হাজার শুয়োর ধরতে এ ভাবেই নাজেহাল হওয়ার পরে মাত্র ১৮টি শুয়োরকে খোঁয়াড়ে ঢোকাতে পেরেছিল পুরসভা। কিন্তু এ দিন অভিযোগ উঠেছে, শুয়োরদের খোঁয়াড়ে পুরেই দায় সেরেছে হাওড়া পুরসভা, প্রতিশ্রুতি মতো তাদের দেখভালের কোনও ব্যবস্থা করেনি।
এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ যাতে শহরে না আসে, তার আগাম সতর্কতায় জোরকদমে শুয়োর ধরার অভিযান শুরু করেছে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা। গত কয়েক দিনে নিউ মার্কেট, বেলেঘাটা এলাকা থেকে ৩৪টি শুয়োর ধরা হয়েছিল। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ দিন সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে শুয়োর ধরার অভিযান শুরু হয়। সেখানে গোটা সাতেক শুয়োর ধরা হয়েছে। পরে নারকেলডাঙা খালপাড়ে এবং নীল রতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও অভিযান চালানো হয়। দিনের শেষে মোট ৩২টি শুয়োর ধরা পড়ে।
শুয়োর ধরার পর্ব স্বস্তিতে মিটলেও শুয়োরগুলিকে খোঁয়াড়ে রাখতে গিয়েই বিপত্তির শুরু। খোঁয়াড়ে ঢোকার আগেই পালিয়ে যায় একদল শুয়োর। দৌড়োদৌড়ি করে প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের প্রচেষ্টায় পালিয়ে যাওয়া শুয়োরগুলিকে ফের পাকড়াও করেন পুরকর্মীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতায় ধরা পড়া সব শুয়োর রাখার জন্য বাসন্তী হাইওয়ের ধারে একটি জমি ঘেরা হয়েছে। এ দিন গাড়ি করে সেখানে মোট ৬৬টি শুয়োর নিয়ে যান পুরকর্মীরা। শুয়োরছানাগুলি কোলে নিয়ে ঢোকানোর সময়ে হঠাৎই কয়েকটি কোল থেকে লাফিয়ে ছুটতে শুরু করে। পিছন পিছন ছোটেন একাধিক কর্মী। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলে লুকোচুরি। নাজেহাল হয়ে পড়েন কর্মীরা। এক কর্মীর কথায়, “পুর-পরিষেবার কাজ করতে অভ্যস্ত আমরা। এ ভাবে শুয়োরের পিছনে ছুটতে হবে ভাবিনি কখনও।” পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, শুক্রবারও শহরের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিধানচন্দ্র শিশু হাসপাতাল ও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল এলাকায় শুয়োর ধরার অভিযান চলবে।
এ দিকে হাওড়ায় যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে অস্থায়ী খোঁয়াড় তৈরি করে বুধবার দিনভর শুয়োর ধরার অভিযান চালালেও এ দিন তা আর জারি রাখেনি হাওড়া পুরসভা। শুধু তাই নয়, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে যে খোঁয়াড় তৈরি করে শুয়োরদের রাখা হয়েছিল, সেখানেও তাদের কোনও দেখভাল করা হয়নি বলে অভিযোগ। হাওড়া পুরসভার তরফে জানানো হয়, শুয়োরদের খোঁয়াড়ে রাখার পরে দেখভালের দায়িত্ব তাদের। খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি যাতে তাদের মশা না কামড়ায়, সেই ব্যবস্থাও করা হবে। কিন্তু অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে প্রাণীগুলির জন্য খাবারের ব্যবস্থাও পুরসভা করেনি। পুরসভার কোনও আধিকারিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মীও আসেননি তদারকি করতে।
এ দিন বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে শুয়োর ধরার অভিযান না হওয়ায় বা প্রতিপালকেরা খোঁয়াড়ের ব্যাপারে আগ্রহ না দেখানোয় খোঁয়াড়ে আর শুয়োরের সংখ্যা বাড়েনি। উপরন্তু কয়েকটি জাল কেটে পালিয়েছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, শুয়োরগুলির দেখভাল করা দূরে থাক, এমনকী জল পর্যন্ত শুয়োরের মালিকদেরই এনে খাওয়াতে হয়েছে।
কেন এমন হল? হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “যা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। আর যাতে এ রকম না ঘটে, সে ব্যবস্থা করা হবে। খোঁয়াড়ে রাখা শুয়োরের যাতে উপযুক্ত দেখভাল হয়, তা-ও দেখা হবে। আশা করছি দু’তিন দিনে সমস্যা মিটে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy