Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বাবা-মায়ের ‘ভুলে’ হাসপাতাল থেকে দু’মাসের শিশু গেল পুরুলিয়ার হোমে

এখন তার আশ্রয় হওয়ার কথা মায়ের কোল। অথচ বাবা-মায়ের ‘ভুলে’ মাত্র দু’মাসের এক শিশুকন্যার ঠাঁই হয়েছে হোমে। সম্প্রতি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সন্তানকে ফিরে পেতে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা আবেদনও করেছেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও কোলহারা সেই শিশুকন্যাটি ফিরে যেতে পারেনি তার নিজের মায়ের কাছে।

সমীর দত্ত
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২২
Share: Save:

এখন তার আশ্রয় হওয়ার কথা মায়ের কোল। অথচ বাবা-মায়ের ‘ভুলে’ মাত্র দু’মাসের এক শিশুকন্যার ঠাঁই হয়েছে হোমে। সম্প্রতি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সন্তানকে ফিরে পেতে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা আবেদনও করেছেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও কোলহারা সেই শিশুকন্যাটি ফিরে যেতে পারেনি তার নিজের মায়ের কাছে।

শিশুকন্যাটির বাবা-মা, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থানার ধরমপুর গ্রামের দম্পতি লোকসাগর সরেন ও সভাতি সরেনের দাবি, তাঁরা ভেবেছিলেন প্রসবের পরে মেয়েটি মারা গিয়েছে। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্বিতীয় বার কন্যাসন্তান হওয়াতেই ওই দম্পতি মেয়েকে না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। সম্প্রতি চাইল্ড লাইনের মেদিনীপুর শাখা ওই দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করে শিশুকন্যাটিকে ফেরত নেওয়ার অনুরোধ করে। তার পরেই তারা সন্তান ফিরে পেতে আগ্রহী হন।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সন্তানসম্ভবা সভাতিদেবীকে গত ২৬ জানুয়ারি গভীর রাতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন সকালে তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। লোকসাগরবাবু বলেন, “প্রসব হওয়ার পরে নার্সরা আমার মেয়েকে নিয়ে চলে গেল। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, মেয়ের ওজন খুব কম। বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় নেই।” এক সপ্তাহ পরে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সভাতিদেবীকে ছুটি দিয়ে দেয়। তাঁর স্বামীর দাবি, মাঝের সময়ে হাসপাতালের তরফে তাঁদের সন্তান নিয়ে কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি। লোকসাগরবাবুর কথায়, “ভাবলাম মেয়ে মারা গিয়েছে। তাই বাড়ি ফিরে যাই।”

যদিও পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল উল্টো কথাই বলছে। জন্মের পর শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ১২৫০ গ্রাম। তাকে বাঁচানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে ‘নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে’ ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “ওই দম্পতিকে কখনই বলা হয়নি ওঁদের মেয়ে মারা গিয়েছে। মেয়ে হয়েছে বলেই ওই দম্পতি শিশুটিকে নিতে চাননি। প্রায় দু’মাস অপেক্ষা করার পরে শিশুটিকে হোমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।” এ দিকে, চাইল্ড লাইনের পুরুলিয়া শাখার সদস্য ঝর্ণা মুখোপাধ্যায় জানান, হাসপাতালের পক্ষ থেকেই দাবিহীন একটি দু’মাসের শিশুকন্যা পড়ে থাকার কথা তাঁদের জানানো হয়। সংস্থার কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন দম্পতির সন্ধান চালিয়েছি। মাঝে আমাদের মেদিনীপুর শাখা মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও সক্ষম হয়। ওরা সেখানে গিয়ে মেয়েকে ফেরত নেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু দম্পত্তি তার পরেও মেয়েকে নিতে অনেক দেরি করেন।” যার জেরে শিশুটিকে গত শুক্রবারই একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঝর্ণাদেবী বলেন, “ওইটুকু শিশু রাখার পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাই এই ব্যবস্থা করতে হয়।” তাঁর বিস্ময়, “সভাতিদেবীকে ছুটি দেওয়ার সময়ে শিশুকন্যার জন্মের শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছিল। তবু কেন যে ওঁরা মেয়ের খোঁজ না নিয়ে বাড়িতে চলে গেলেন, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে!”

যদিও মেয়েটির মায়ের দাবি, “ও যে বেঁচে আছে, তা কেউ আমাদের জানাননি। মেয়েকে ফিরে পেতে বেলপাহাড়ি থেকে দু’বার গাড়ি ভাড়া করে পুরুলিয়ায় গিয়েছি। আজও মেয়েকে ফিরে পেলাম না।” তাঁর ভাসুর নির্মল সরেনেরও দাবি, “হাসপাতাল সুপার ঠিক কথা বলছেন না। মেয়েটি বেঁচে আছে বলে আমার ভাইদের জানানো হয়নি। সেই মেয়ে বেঁচে আছে জেনে টাকা জোগাড় করে বেলপাহাড়ি থেকে গাড়িভাড়া করে এতদূর কি এমনি এমনি এসেছি?”

এখন মেয়েটি রয়েছে ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’র আশ্রয়ে। সংস্থার পুরুলিয়া শাখার চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র জানিয়েছেন, দম্পতির আবেদন তাঁরা পেয়েছেন। প্রয়োজনীয় নথি জমা করলে শীঘ্রই শিশুটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

samir dutta purulia state general hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE