Advertisement
E-Paper

বিমা নিয়ে দুর্নীতি নার্সিংহোমে, কড়া পদক্ষেপ জেলা প্রশাসনের

অস্ত্রোপচার না করেই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা কার্ডের মাধ্যমে মোটা টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি পাঁচ নার্সিংহোমকে ‘সাসপেন্ড’ করল নদিয়া জেলা প্রশাসন। কখনও অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করে কার্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া, কখনও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল জেলার একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৫

অস্ত্রোপচার না করেই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা কার্ডের মাধ্যমে মোটা টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি পাঁচ নার্সিংহোমকে ‘সাসপেন্ড’ করল নদিয়া জেলা প্রশাসন।

কখনও অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করে কার্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া, কখনও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল জেলার একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে। কখনও বা একই দিনে একাধিক অস্ত্রোপচার করা ও একই ব্যক্তির একই অস্ত্রোপচার দেখিয়ে একাধিক নার্সিংহোম থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় চিকিৎসার পরে বাড়ি ফেরার জন্য প্রকল্প নির্ধারিত একশো টাকাও দেওয়াও হচ্ছে না। এ সব অভিযোগ তো ছিলই। কিন্তু অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসা না করেই কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তারপর ওই নার্সিংহোমগুলিকে ‘সাসপেন্ড’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ওই প্রকল্পের মধ্যস্থতাকারী সংস্থার এক জন চিকিৎসককেও দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। জেলা শাসক পিবি সালিম বলেন, “সারা জেলায় আরএসবিওয়াই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আমরা পাঁচটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছি। দু’জন দালালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হবে।”

এই মুহূর্তে নদিয়া জেলায় আরএসবিওয়াই কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার। ৬টি সরকারি হাসপাতাল ছাড়া ৫০টি নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা দেওয়া হয়। বিপিএল তালিকাভূক্ত ও যাঁদের জব কার্ড আছে এমন পরিবার ৩০ টাকা দিয়ে নাম নথিভূক্ত করলে তাঁদের ওই কার্ড দেওয়া হয়। ওই কার্ড থাকলে পরিবারের সর্বোচ্চ ৫ জন সদস্য বছরে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ওই সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন। ২০১০ সালে ওই প্রকল্প চালু হয়। প্রথম দিকে কোনও সমস্যা না হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে।

দুর্নীতির বিষয়টি অজানা নয় জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের। বিশেষ করে এই আরএসবিওয়াই প্রকল্পের মাধ্যমে যে ধরনের অপারেশনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সে দিকে তাকালেই এই সব দুর্নীতি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা হবে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “গ্রামে গ্রামে দালাল ছড়িয়ে আছে। তারা কার্ড রয়েছে এমন গ্রামবাসীদের ভুলিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে আসছে। প্রয়োজন ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। আবার অনেক সময়ই ভুয়ো নথিপত্র তৈরি করে, ভুয়ো অস্ত্রোপচার দেখিয়েও তাঁদের কার্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীদের দালাল মারফত নিয়ে আসা হচ্ছে ওই সব নার্সিংহোমে। প্রয়োজন না থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের মোটা টাকার ‘প্যাকেজে’ অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারির-১ ও অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-৩ এই সব অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে জেলার মনিটারিং কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠান। সেখানেও অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমরা তদন্ত করে জেলার মনিটরিং কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তাতে বেশ কিছু অনিয়মের ঘটনা উঠে এসেছে। এবার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মনিটরিং কমিটি নেবে।”

যদিও মনিটরিং কমিটির দাবি, সব দিক খতিয়ে ওই নার্সিংহোমগুলিকে আর একবার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি তথা জেলাশাসক বলেন, “আমরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে বিশেষ করে স্বাস্থ্য দফতরের সুপারিশ অনুযায়ী ওই পাঁচটি নার্সিংহোমকে আবার সুযোগ দিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “তবে আমরা যে এই ধরনের দুর্নীতি বা অমিয়ম মেনে নেব না। তা সব নার্সিংহোমকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে যে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছি সকলের কাছে।”

তবে যে সব নার্সিংহোমগুলি ওই শাস্তির মুখে পড়েছে তাদের দাবি সামান্য কারণে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। অথচ যে সব নার্সিংহোমগুলি রীতিমতো ‘পুকুর চুরি’ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। শাসক দলের প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় সেগুলি পার পেয়ে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

insurence nurshing home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy