Advertisement
E-Paper

মিলেছে বরাদ্দ, সুপার স্পেশ্যালিটি হচ্ছে হুগলির দু’টি হাসপাতাল

হুগলি জেলায় স্বাস্থ্য পরিষেবা ঢেলে সাজাতে শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং আরামবাগে মহকুমা হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দু’টি জায়গাতেই হাসপাতাল চত্বরে ৩০০ শয্যার নতুন ভবন তৈরি হবে। শ্রীরামপুরে অপথ্যালমোলজি (চক্ষু চিকিৎসা) এবং আরামবাগে ইএনটি (নাক-কান-গলা) চিকিৎসায় অত্যাধুনিক পরিষেবার সুবিধা মিলবে।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৯
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল।

শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল।

হুগলি জেলায় স্বাস্থ্য পরিষেবা ঢেলে সাজাতে শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং আরামবাগে মহকুমা হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দু’টি জায়গাতেই হাসপাতাল চত্বরে ৩০০ শয্যার নতুন ভবন তৈরি হবে। শ্রীরামপুরে অপথ্যালমোলজি (চক্ষু চিকিৎসা) এবং আরামবাগে ইএনটি (নাক-কান-গলা) চিকিৎসায় অত্যাধুনিক পরিষেবার সুবিধা মিলবে। এর পাশাপাশি দুই জায়গাতেই নতুন ভবনে মেডিসিন, শল্য চিকিৎসা, স্ত্রী-রোগ, শিশু বিভাগ এবং রোগ-নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবা পাবেন রোগীরা।

হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনসল বলেন, “আরামবাগে কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। শ্রীরামপুরে কয়েকটি নির্মাণ ভাঙার ব্যাপার রয়েছে। পিডব্লুডি তা শেষ করার পরেই সেখানেও কাজ শুরু হবে।”

টেন্ডারের মাধ্যমে সম্প্রতি হুগলিতে ওই দু’টি হাসপাতালে নতুন ভবন তৈরির বরাত পেয়েছে সাপুরজি পালনজি গোষ্ঠী। শ্রীরামপুরের হাসপাতালটির জন্য ৫৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছে। আরামবাগের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৫০ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। বরাদ্দ অর্থের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকা চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সাড়ে ৪ কোটি টাকা আসবাবপত্র বাবদ ধরা রয়েছে। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, দু’জায়গাতেই ঠিকাদারি সংস্থার হাতে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও বসিরহাট, বর্ধমানের কালনা এবং আসানসোলেও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করছে রাজ্য সরকার। তিন জেলায় ছ’টি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মোট ৩১১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা।

১৮৩৬ সালে তৈরি শ্রীরামপুর ওয়ালশ রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাচীন হাসপাতাল। গোটা মহকুমা ছাড়াও সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ নানা জায়গার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন। রোগীর চাপও মারাত্মক। ফলে অন্তর্বিভাগে ২৭০টি শয্যা থাকলেও মেঝে এবং বারান্দায় রোগী ভর্তি নিতে হয়। নতুন ভবন চালু হলে সেই সমস্যা পুরোপুরি মিটে যাবে বলে স্বাস্থ্য কর্তাদের আশা। অন্তর্বিভাগের পাশেই ১২ শয্যাবিশিষ্ট ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) তৈরির কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “স্বাস্থ্য মানচিত্রে এ শহরের ছবি আমূল বদলে যাবে। সাধারণ মানুষকে উন্নত মানের পরিষেবা দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।”

সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নিয়ে বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। প্রশাসন সূত্রের খবর, হাসপাতালের মর্গ এবং রান্নাঘর ভেঙে সেখানেই নতুন ভবন হবে। ওই সব নির্মাণ ভাঙবে পূর্ত দফতর। তার পরেই ঠিকাদারি সংস্থা নির্মাণ কাজে হাত দেবে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় নতুন ভবন উঁচু করা হবে। আপাতত ঠিক হয়েছে, ভবনটি ১০ তলা করা হতে পারে। ভবনের নক্শা অনুমোদন করবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা। ভবন তৈরির পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় আসবাব, বিদ্যুৎ সংযোগ সবই করবে ঠিকাদারি সংস্থা। কাজ শেষ করতে হবে আগামী ১৫ মাসের মধ্যে। শুক্রবারেও পূর্ত দফতর এবং ঠিকাদার সংস্থার লোকজনের সঙ্গে হাসপাতাল সুপার ত্রিদীপ মুস্তাফির এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের দাবি, জায়গার সমস্যা মেটাতে সংলগ্ন টিবি হাসপাতালকে ওয়ালশের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা। ওই এলাকায় মর্গ এবং রান্নাঘর স্থানান্তর করা হবে। যদিও সেখানে মর্গ সরানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার দাবি, সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে গোটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা ছাড়া মর্গ অত্যাধুনিক হবে। তাতে দূষণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কার্যত থাকবে না। যতটা সম্ভব লোকালয় থেকে সরিয়ে মর্গ তৈরির চেষ্টা হবে। তিনি আরও জানান, টিবি হাসপাতালটিকে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতালের বাইরে এক ব্যক্তি ২৩ কাঠা জমি দিতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ওই জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও চলছে। এ ছাড়াও, এই শহরে একটি নার্সিং স্কুল গড়ার ব্যাপারেও প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের তরফে প্রাথমিক সম্মতিও মিলেছে। এর জন্য জমি চেয়ে পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, জমি পেলে আপাতত ৫০ আসনের নার্সিং স্কুল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে আরও ৫০ আসন এবং আবাসন তৈরির চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।


আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল।

শ্রীরামপুরের মতো আরামবাগে অবশ্য জায়গার সমস্যা নেই। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শান্তনু নন্দী জানান, হাসপাতালের বর্তমান ভবনের পিছন দিকে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। ভবনটি হবে চার তলা। সমস্ত প্রস্তুতিই ঠিকঠাক হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।

তবে এই দুই হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হতে চললেও দু’টি জায়গাতেই অবশ্য চিকিৎসক, নার্স বা চিকিৎসা কর্মী প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাস, নয়া ভবন তৈরির সঙ্গে সেই সমস্যাও যতদূর সম্ভব মেটানো হবে।

নিজস্ব চিত্র।

super speciality hospital hooghly srirampur walsh arambag district hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy