Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রেফারের চাপে স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ বহরমপুর মেডিক্যাল

মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে কোনও কারণ ছাড়াই রোগী রেফার করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তথ্য-সহ এমনই অভিযোগ জানিয়ে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চিঠি জমা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার ওই চিঠি পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসেছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৭
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে কোনও কারণ ছাড়াই রোগী রেফার করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তথ্য-সহ এমনই অভিযোগ জানিয়ে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চিঠি জমা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার ওই চিঠি পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসেছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। ঘটনার সময়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল নাকি শুধুমাত্র দায়িত্ব এড়িয়ে যেতেই রেফার করেন অন্য হাসপাতালের চিকিত্‌সকরা, তা বিশদে জানার চেষ্টা চলছে। এ প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

এ দিকে ‘রেফারেল’ রোগীর চাপ থাকায় সুষ্ঠু চিকিত্‌সা পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালু হওয়ার পরেই সেখানে বেড়েছে রোগী ভর্তির চাপ। হাসপাতালকে ঘিরে বেড়েছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও। এখন প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি রোগী ভর্তি হওয়ার কারণে সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিত্‌সকরা।

এই অবস্থায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক ও ব্লক-প্রাথমিক হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল থেকে পাঠানো রোগীর চাপ সামাল দিতে ‘দিশেহারা’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু চিকিত্‌সা পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনাও তাদের বানচাল হতে বসেছে বলে অভিযোগ।

ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যভবনের বিভিন্ন আধিকারিক ও মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের কাছেও ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে গত কয়েক দিনে গড়ে ৩৭ জন রেফারেল রোগী ভর্তি হন। তার মধ্যে গত ৬ ও ৭ অক্টোবর ৪০ জন করে, ৮ অক্টোবর ৩৮ জন, ৯ অক্টোবর ৩৩ জন এবং ১০ অক্টোবর ৩৪ জন রোগী রেফার হয়ে আসেন।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা প্রসূতি বিভাগ মাতৃসদনের। মাতৃসদনে মোট ১৫৫ টি শয্যা রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে ১০, ১১ এবং ১২ অক্টোবর গড়ে ৩৩৪ জন করে রোগিনী ভর্তি ছিলেন। মার্তৃ সদনের দু’টি তলে ১০ অক্টোবর মোট ৩৪৪ জন মা ও ১৯১ জন শিশু, ১১ অক্টোবর ৩৩৩ জন মা ও ২৩২ জন শিশু, ১২ অক্টোবর ৩২৭ জন মা ও ২৩৫ জন শিশু ভর্তি ছিল। প্রসূতিদের মেঝেতে শুইয়ে রাখার উপক্রম হলে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে’ পড়ে থাকা বেশ কয়েকটি শয্যা নিয়ে এসে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দেয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাঠানো রেফারেল কার্ডে অনেক সময়ে রোগী পাঠানোর কারণও উল্লেখ করা থাকছে না। কারণের জায়গায় ফাঁকা রেখেই রোগী পাঠানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে লেখা হয়েছেরোগীর বাড়ির চাপে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিত্‌সকরা ওই রোগীদের দায়িত্ব নিতে চাননি বলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে বহরমপুরে পাঠিয়ে দিয়েছে। স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ভাষ্করানন্দ শীল বলেন, “অনেক রোগীর রেফারেল কার্ডে কারণ হিসেবে এমন কোনও জটিল রোগের উল্লেখ নেই। যে কারণ দেখানো হয়েছে তার পরিকাঠামো সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিত্‌সকরা ওই রোগীদের দায়িত্ব নিতে চাননি বলেই মনে হয়েছে।” এ রকম ১১ জন রোগীর তথ্য চিঠিতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যাদের সাধারণ রোগী বলে চিহ্নিত করেছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রোগীর ভিড় বাড়লেও চিকিত্‌সা কর্মী সংখ্যা বাড়েনি। ফলে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই রোগী-স্বার্থেই অকারণে রোগী রেফার যাতে বন্ধ করা যায়, সে বাপারে সিএমওএইচ-কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনিও বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন।”

মণিময়বাবুর আশঙ্কা মা ও শিশুদের চিকিত্‌সায় বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। রোগীর ভিড়ে তা অনেক সময়ে ব্যাহত হতে পারে। রোগীর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে।

একশ্রেণির চিকিত্‌সক যে নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ননতা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অজানা নয়। ওই চিকিত্‌সকদের নামের তালিকা তৈরির কাজও গোপনে শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতেই বহরমপুরের হাসপাতালে রোগী পাঠানোর বিষয়টি কোনও ভাবে প্রমাণিত হলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না বলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

berhampur medical health department berhampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE