Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগুন, প্রশ্ন নিরাপত্তা নিয়ে

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরুষ বিভাগের দু’টি শয্যা। আগুনে ঘরের ভিতর বেশ কিছু আসবাবও পুড়ে নষ্ট হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। একই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও। এই ঘটনার পর জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আরও এক বার প্রশ্ন উঠে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরুষ বিভাগের দু’টি শয্যা। আগুনে ঘরের ভিতর বেশ কিছু আসবাবও পুড়ে নষ্ট হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। একই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও।

এই ঘটনার পর জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আরও এক বার প্রশ্ন উঠে গেল। গত অক্টোবরেই সাত্তোরের কসবা-সাত্তোর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে কয়েকশো তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছিল। তার পরেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের তেমন মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ উঠছে। রবিবার সকালে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমন্ত্র মণ্ডল পৌঁছলে এলাকাবাসীর একাংশ তাঁকে ঘিরে স্বাস্থকেন্দ্রের বেহাল অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল বলেন, “বিএমওএইচ-এর কাছে বিষয়টি বিষদে জানব। তবে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ মাসের মধ্যেই এক জন নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হবেন।”

দিন কয়েক আগেই গ্রামের সদ্গোপ পাড়া থেকে বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, এলাকায় দুষ্কৃতীদের অত্যাচার বেড়েছে। সন্ধ্যা নামতেই গ্রামে বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। তারই মধ্যে শনিবার রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা। রবিবার সকালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরে আগুন জ্বলছে দেখে বাসিন্দাদের একাংশ দমকলে খবর দেন। দমকলের একটি ইঞ্জিন রামপুরহাট থেকে গ্রামে পৌঁছনোর আগেই অবশ্য এলাকাবাসী বালতিতে জল ভরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। দমকল কর্মীরা গ্রামে পৌঁছলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটের তালা ভেঙে আগুন নেভায়। সুমন্ত্রবাবু বলেন, “যত দূর সম্ভব জানলার বাইরে থেকে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তা নেই। অনেক দিন থেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও সঠিক পদক্ষেপ করার অভাবে অপরাধীদের সাহস বেড়ে উঠেছে।”

১৯৯০ সালে দানের জমিতে নারায়ণপুরে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। ২০০৬ সালে সেটিতে দশ শয্যার অনুমোদন পায়। অভিযোগ, চিকিৎসক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো অভাবে কোনও দিনই দশ শয্যা চালু হয়নি। বহু অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, টেবিল, বেড, বেঞ্চ, আলমারি নষ্ট হয়ে পুরুষ ও মহিলা বিভাগে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ওই সমস্ত বিভাগ চালু না হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি সম্পত্তি চুরি হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে রবিবার বাদে রোজ দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত বর্হিবিভাগ খোলা থাকার কথা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল ১১টা পর্যন্তই তা খোলা থাকে। চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোয়ার্টারে থাকেন না। আগে দু’জন নার্স থাকলেও বর্তমানে এক জনকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজে তুলে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে কোনও ফার্মাসিস্ট নেই। একমাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও গত মার্চে অবসর নিয়েছেন। সুইপার এক জন আছেন বটে, তবে তিনিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে থাকেন না। ফলে সন্ধ্যা নামতেই গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর এলাকার দুষ্কৃতী এবং সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায় বলে অভিযোগ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের কথা জেনে এসডিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস বলেন, “যত দূর জানি, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে বলে গ্রামীণ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের ডিউটি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার পরেও এমন কিছু হয়ে থাকলে বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।” অন্য দিকে, এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে কীভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rampurhat fire narayanpur health centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE