জলছবি। বুধবার সন্ধ্যায় শহরের রাস্তায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আইঢাই করা ভ্যাপসা গরম থেকে বৃষ্টিই শুধু রেহাই দিতে পারে বলে জানিয়ে আসছিলেন আবহবিদেরা। আসছি আসছি করে নিম্নচাপের হাত ধরে এল সেই বৃষ্টি।
মেঘলা আকাশ আর দফায় দফায় বর্ষণের দৌলতে প্যাচপেচে গরমটা কয়েক দিন ধরেই পিছু হটছে। মিলছে কমবেশি স্বস্তিও। কিন্তু এই আবহাওয়া আদৌ স্বস্তিকর কি না, সেটা ভাবাচ্ছে পরজীবী বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের। তাঁরা বলছেন, বৃষ্টির দাপটে একটা আপাত-স্বস্তি মিলছে ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গে জোরদার হচ্ছে নানান রোগব্যাধির আশঙ্কাও।
কেন?
পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ডেঙ্গির মশা মারতে বিভিন্ন জায়গায় বিষতেল ও কীটনাশক ছড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই বৃষ্টিতে তা ধুয়ে গেলে ফের মশার লার্ভা জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার উপরে দফায় দফায় বৃষ্টির ফলে বাড়ির ফুলের টব কিংবা পরিত্যক্ত পাত্রে জমতে পারে জল। ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার মশা এই ধরনের পরিষ্কার জলেই ডিম পাড়ে।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী বলছেন, ‘‘এ ভাবে যত জল জমবে, ততই বাড়বে মশার উপদ্রব। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।’’ রোগ থেকে বাঁচার তাগিদেই বাড়িতে আদৌ জল জমতে দেওয়া চলবে না বলে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
সেই সঙ্গে ডাক্তারদের হুঁশিয়ারি, শুধু মশার বংশবৃদ্ধি আটকালেই যে রোগের হানাদারি কমবে, তা কিন্তু নয়। কারণ, বৃষ্টি এবং আচমকা তাপমাত্রার হেরফেরে নানা ধরনের ভাইরাসবাহিত রোগের প্রকোপও বেড়ে যেতে পারে। ট্রপিক্যালের এক চিকিৎসক জানান, এই সময়ে বৃষ্টির জন্য হঠাৎ হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। আবার কখনও কখনও অতিষ্ঠ করে ছাড়ছে ভ্যাপসা চটচটে গরম। অত্যন্ত কম সময়ের ব্যবধানে ‘এই ঠান্ডা-এই গরম’ পরিস্থিতি অর্থাৎ আবহাওয়ার খামখেয়াল বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাসকে অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠতে সাহায্য করে। তার ফলে জ্বর-সর্দির মতো রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা ষোলো আনা। এমনিতেই ভাইরাল জ্বর আর সর্দিতে কাবু রোগী এখন শহরের ঘরে ঘরে। তার উপরে খেয়ালি আবহাওয়ার উস্কানিতে ভাইরাসের দাপট বাড়তে থাকলে সামগ্রিক পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে অনাবৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণবঙ্গবাসী। সেই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে এই বৃষ্টি স্বস্তি দিলেও বিচিত্র রোগব্যাধির দাপটে ভাঁজ পড়ছে তাঁদের অনেকের কপালেই। প্রশ্ন উঠছে, আর ক’দিন চলবে এই বৃষ্টি?
হাওয়া অফিসের খবর, গত সপ্তাহের শেষে একটি নিম্নচাপ দানা বেঁধেছিল। ওড়িশা উপকূল বরাবর তা দক্ষিণবঙ্গের দিকে সরে আসতেই শুরু হয় বৃষ্টি। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা বুধবার জানান, এ দিন দুপুরে সেটি ছিল বাংলাদেশ ও লাগোয়া উত্তরবঙ্গের উপরে। তার প্রভাব পড়ছে দক্ষিণবঙ্গের উপরেও। নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বাতাসের জলীয় বাষ্প থেকে তৈরি হচ্ছে বজ্রগর্ভ মেঘ। ‘‘সেই মেঘ থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে,’’ বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। আবহাওয়ার মতিগতি বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, আজ, বৃহস্পতিবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কাল, শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।
এপ্রিলে দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছিল, প্রশান্ত মহাসাগরে
জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির (‘এল নিনো’ বা দুরন্ত শিশুর দামালপনা) ফলে এ বার দেশে বর্ষা মার খাবে। কিন্তু সেই পূর্বাভাসকে প্রশ্নের মুখে ফেলে মরসুমের গোড়া থেকে এ রাজ্যে বর্ষা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। জুলাইয়ে অতিবৃষ্টির কবলে পড়ে দক্ষিণবঙ্গ। অগস্টের গোড়ায় দেখা দেয় বন্যা পরিস্থিতি। কিন্তু অগস্টের শেষ থেকেই ভোল বদলাতে শুরু করে বর্ষা। অগস্টের গোড়ার বৃষ্টি দিয়ে সেই মাসের পরীক্ষায় বর্ষা টেনেটুনে পাশ করলেও সেপ্টেম্বরে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে সে। আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলছেন, গোড়ার দিকে অতিবৃষ্টির ফলে গড় হিসেবে এখনও বর্ষা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেপ্টেম্বরের নিরিখে বর্ষণ স্বাভাবিকের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম হয়েছে।
নিম্নচাপের এই বৃষ্টি সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে, এমন আশা কম। সে কিন্তু রোগশয্যায় পেড়ে ফেলতে পারে বাংলাকে। অর্থাৎ বৃষ্টির লাভ বলতে ক্ষণস্বস্তি। কিন্তু তার ক্ষতির ধাক্কা কোথায় দাঁড়াবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না আবহবিদেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy