Advertisement
E-Paper

হেলায় ফেলে রাখা হয়েছে সদ্যোজাতদের অ্যাম্বুল্যান্স

সদ্যোজাতদের মৃত্যুর হার কমাতে প্রচুর টাকা খরচ করে একের পর এক ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) গড়ছে সরকার। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ শিশুদের সেখানে পৌঁছতে বা এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাই অত্যাধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও। অথচ তেমন অ্যাম্বুল্যান্স সরকারের হাতে আছে স্রেফ একটিই। যাতে রয়েছে নিওনেটাল ভেন্টিলেটর, সি-প্যাপ মেশিন, পোর্টেবল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, ইনকিউবেটর, ওয়ার্মার।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
সদ্যোজাতদের সেই অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

সদ্যোজাতদের সেই অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

সদ্যোজাতদের মৃত্যুর হার কমাতে প্রচুর টাকা খরচ করে একের পর এক ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) গড়ছে সরকার। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ শিশুদের সেখানে পৌঁছতে বা এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাই অত্যাধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও। অথচ তেমন অ্যাম্বুল্যান্স সরকারের হাতে আছে স্রেফ একটিই। যাতে রয়েছে নিওনেটাল ভেন্টিলেটর, সি-প্যাপ মেশিন, পোর্টেবল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, ইনকিউবেটর, ওয়ার্মার। কিন্তু ৭০ লক্ষ টাকার সেই অ্যাম্বুল্যান্স স্বাস্থ্য দফতর হাতে পাওয়ার পরে প্রায় তিন বছর হতে চলল, ব্যবহার না-করে কার্যত ফেলে রাখা হয়েছে টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালের চত্বরে।

হুগলির খন্যান থেকে কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনতে হয়েছিল ২৫ দিন বয়সী অহনাকে। ওই শিশুটি নিউমোনিয়া ও তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তার ভেন্টিলেটর এবং সি-প্যাপ যন্ত্রওয়ালা অ্যাম্বুল্যান্স দরকার ছিল। এমন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিতে অন্তত ১২-১৫ হাজার টাকা জোগাতে পারেননি অহনার ছাপোষা বাবা। সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পৌঁছনোর পথে ভাগ্যক্রমে তার শারীরিক অবস্থার আর অবনতি হয়নি।

নদিয়ার তাহেরপুরের এক মাস বয়সী আরশাদের হৃদ্যন্ত্রে রক্ত চলাচলের সমস্যা হচ্ছিল। ১৫ হাজার টাকা ধার করে ভেন্টিলেটরযুক্ত একটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবা।

ঘটনাচক্রে সবেধন নীলমণি অত্যাধুনিক সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সটি ২০১১ সালে তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের সাংসদ তহবিলের টাকায় কেনা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সটি হাতে পাওয়ার পরে সদ্যোজাতদের স্বাস্থ্য-পরিষেবার নজরদারিতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কলকাতা ও তার আশপাশের জেলায় অসুস্থ শিশুদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রেফারের জন্য এই অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহৃত হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বর্তমান দূরত্বের কারণেই কি ব্যবহার হচ্ছে না ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি?

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার কিছু দিন পর থেকেই প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে তৃণমূল দল ও দলনেত্রীর দূরত্ব নানা কারণে বাড়তে থাকে। সমস্যা এতটাই তীব্র হয় যে, তার পরে কবীর সুমনের দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স চালু করতে স্বাস্থ্য দফতর কোনও কর্তাই উদ্যোগী হননি। এমনকী গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও করা হয়েছে প্রায় দেড় বছর পরে। এবং এখনও এর জন্য আলাদা কোনও চালক এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ হয়নি।

রাজনৈতিক বিবাদ কি তবে এই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল? কবীর সুমন বলেন, “সেটা তো আমার পক্ষে বলা সমীচীন নয়। এটি ঠিকঠাক চালালে অনেক গরিব শিশু প্রাণে বেঁচে যেত। সকলের তো প্রচুর টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার ক্ষমতা নেই।”

কেন এটি চালাচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর? কারণ কি সত্যিই কবীর সুমন? ক্ষুব্ধ ত্রিদিববাবু বলেন, “কবীর সুমন তো আর নিজের টাকায় কিনে দেননি। সাংসদ তহবিল মানে জনগণের টাকা। এতে তাঁর কোনও কৃতিত্ব নেই। তা হলে একে কবীর সুমনের অ্যাম্বুল্যান্স ভেবে ব্রাত্য রাখব কেন?” তা হলে জনগণের টাকায় কেনা অ্যাম্বুল্যান্স কেন ফেলে রাখা হল?

ত্রিদিববাবুর উত্তর, “জেলায়-জেলায় এসএনসিইউ হওয়ায় এখন শিশুদের রেফারের প্রয়োজন কমেছে। তবে এটা ঠিক যে, এমন উন্নত মানের অ্যাম্বুল্যান্স আমাদের হাতে আর নেই। আসলে এর কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। পুজোর পরে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

parijat bandyopadhyay sick neo natal care unit sncu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy