কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে থাবা না বসালেও উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এনসেফেল্যাইটিস। এই প্রেক্ষিতে শুয়োর ধরার চেয়েও পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহেই জোর দেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নানা সমস্যায় রুগ্ণ বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে জলের সমস্যাই সবচেয়ে বেশি। অগত্যা বাড়ি থেকে এনে বা কিনে জল খেতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের চারিদিকে আগাছার ঝোপে মশার উপদ্রবেও নাজেহাল রোগীরা। এই ন্যূনতম পরিষেবাগুলো দেওয়ার দায়িত্ব কারতা নিয়েই চলছে চাপানউতোর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুরসভা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাতেই ব্যস্ত। আর এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে হয়রান হচ্ছেন রোগী ও তাঁদের পরিবার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষা নামতেই বেড়ে গিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। তার মধ্যে বেশিরভাগই জলবাহিত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে গত কয়েকদিনে অধিকাংশ রোগী পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। রোগী ও তাঁদের পরিবারের অভিযোগ, নিখরচায় চিকিৎসার জন্যই তো হাসপাতালে আসা। অথচ এখানে বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। এমনকী হাসপাতালে পরিস্রুত পানীয় জলেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল চত্বরে দু’টি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু তার জল মোটেও ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। রোগীদের সে জল খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরাই।
অগত্যা বাইরে থেকে জল কিনতে হয়। না হলে বাড়ি থেকে ফোটানো জল নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সকলের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। কাপাসডাঙার বাসিন্দা সামসুর আলি সম্প্রতি পেটের অসুখে ভর্তি হয়েছিলেন বেলডাঙা হাসপাতালে। তিনি বলেন, “৮ কিলোমিটার দূরে বাড়ি থেকে বারবার ফোটানো জল নিয়ে আসা সম্ভব নাকি? বাইরে থেকে জল কিনতে গেলেও বিস্তর টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতালে গিয়ে বিপদ ও ভোগান্তি দুই-ই বেড়ে গিয়েছিল।”
হাসপাতালের এক চিকিৎসকও সমস্যার কথা কবুল করে বলছেন, “সত্যিই এটা বড় সমস্যা। ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্রুত পানীয় জল খুব জরুরি। এ বিষয়ে আমরা একাধিক বার পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কাজ কিছু হয়নি।”
পানীয় জলের পাশাপাশি রয়েছে আরও সমস্যা। হাসপাতালের চারপাশে আগাছা প্রায় জঙ্গলের চেহারা নিয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র জমে থাকছে জল। সেই জমা জলের কারণে হাসপাতালে যেন মশার মহোৎসব চলছে। রোগীর সঙ্গে আসা আত্মীয়েরা তো বটেই,, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে মশার কামড়ে জেরবার রোগীরাই। রেজিনগরের বাসিন্দা সনাতন বিশ্বাস বলেন, “আমার বাবা অসুস্থ। আমি আর আমার স্ত্রী রাতে বাবার কাছে থাকছি। হাসপাতাল চত্বর ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। মশার দাপটে আমরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারছি না।” এমন অবস্থা কেন? হাসপাতালের সুপার দেবদত্ত বড়াল বলেন, “পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার কারণে হাসপাতাল নিয়মিত পরিষ্কার করা যায় না। তাছাড়া আগাছা পরিষ্কার ও পানীয় জলের দায়িত্ব পুরসভার।” তিনি বলেন, “আমরা প্রতি বছর আট থেকে নয় লক্ষ টাকা কর দিই পুরসভাকে। তবুও কোনও কাজ হয় না।”
বেলডাঙা পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অনুপমা সরকার বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে আগাছা পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সাফাই কর্মী নেই বলে পুরসভা সে কাজটা করে দেয়।” পরিস্রুত পানীয় জলের বিষয়ে অনুপমাদেবীর আশ্বাস, “দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”