Advertisement
E-Paper

হাসপাতাল নোংরা করলেই চার ঘণ্টা বন্দি রাখার বিধান

শুধুমাত্র নিজের ফেলা নোংরা নিজেই সাফ করলে চলবে না। সঙ্গে চার-চারটে ঘণ্টা হাসপাতালের কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় আটকেও থাকতে হবে। এমনটাই বিধান দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ, রবিবার থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা। শুনতে অনেকটা ‘একুশে আইন’-এর মতো মনে হলেও, হাসপাতাল সাফসুতরো রাখতে এ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই বলেই মনে করছেন চিকিত্‌সকেরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭

শুধুমাত্র নিজের ফেলা নোংরা নিজেই সাফ করলে চলবে না। সঙ্গে চার-চারটে ঘণ্টা হাসপাতালের কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় আটকেও থাকতে হবে। এমনটাই বিধান দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ, রবিবার থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা। শুনতে অনেকটা ‘একুশে আইন’-এর মতো মনে হলেও, হাসপাতাল সাফসুতরো রাখতে এ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই বলেই মনে করছেন চিকিত্‌সকেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের ইচ্ছা ছিল আর্থিক জরিমানা চালু করার। রোগী কল্যাণ সমিতির সর্বশেষ বৈঠকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। জরিমানা থেকে আদায় হওয়া টাকা যেত রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিলে। কিন্তু এ ভাবে টাকা আদায় করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের নেই। তাই সেই প্রস্তাবে রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছে।

সরকারি হাসপাতালকে অপরিচ্ছন্ন করে তোলার একটা বড় দায় রোগী ও তাঁদের পরিবারের রয়েছে। যেখানে সেখানে থুতু ফেলা, দেওয়ালে পানের পিক, হাঁটাচলার পথে আবর্জনা ছড়ানো, এমনকী খোলা চত্বরে প্রস্রাব করার নজিরও অহরহ মিলছে। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে এ সব বন্ধ করতে বহু বার উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ফল মেলেনি। এমনকী, চেষ্টা চালিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিত্‌সকেরাও। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির এক চিকিত্‌সক যেমন থুথু ফেলতে গিয়ে ধরা পড়লে মারধরের হুমকি দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছিলেন। সে নিয়ে কিছু বিতর্কও হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। আবার হাসপাতালের একটি বিল্ডিংয়ে নতুন লিফ্ট চালু হয়েছিল। ঝকঝকে সেই লিফ্ট পানের পিক ফেলে বা অশ্লীল শব্দ লিখে যাতে নোংরা করা না হয়, সে জন্য তার ভিতরে ও দেওয়ালে পোস্টার দেন নেফ্রোলজির এক চিকিত্‌সক। কোনও নির্দেশ নয়, একেবারেই আবেদন-নিবেদনের ঢঙে লেখা হয়েছিল সেটি। তাতে বড়জোর সপ্তাহখানেক পরিষ্কার ছিল লিফ্ট। তার পরে ফের যে কে সে-ই।

এ বার তাই জরিমানা না হোক, কড়া কিছু পদক্ষেপ করতে বদ্ধপরিকর হাসপাতাল কর্তারা। এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “সে দিন একটা ওয়ার্ডে গেছি। দেখি তার ঠিক বাইরেই বাবা-মা আর বাচ্চা বসে মুড়ি খাচ্ছেন। বাচ্চাটি মুড়ি যত না খাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। অথচ বাবা-মা নির্বিকার। আমি আর স্থির থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম, আপনাদের সন্তানের কোনও দোষ নেই। দোষ আপনাদের। জায়গাটা নিজেরা পরিষ্কার করুন।” যতক্ষণ না মেঝেয় ছড়ানো মুড়ি তুলে আবর্জনার পাত্রে ফেলা হচ্ছে, ততক্ষণ ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন অধিকর্তা।

কিন্তু এ না হয় এক দিনের একটা নির্দিষ্ট ঘটনা। বাকি সময়টায় নজরদারির কী বন্দোবস্ত থাকবে? প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, নজরদারির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না। ১ তারিখ থেকেই ‘মেকানাইজ্‌ড ক্লিনিং’ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে হাসপাতালে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ওই সংস্থার কর্মীদের উপরে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব থাকছে। তারা সব সময়েই হাসপাতাল টহল দেবে। তাদের পরিষ্কার করা জায়গা কেউ নোংরা করছে দেখলেই ধরে ফেলবে হাতেনাতে। তার পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই সেই নোংরা পরিষ্কার করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য তাঁকে চার ঘণ্টা কোনও ঘরে আটকে রাখা হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালকে নব কলেবরে দেখতে বদ্ধপরিকর। হাসপাতালের সৌন্দর্যায়ন প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই নয়া বন্দোবস্ত সেই স্বপ্ন কতটা সফল করতে পারে, সেটাই দেখার।

sskm four hours detention for pollution hospital soma mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy