Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজ সিসিডি কর্ণধার সিদ্ধার্থ, চিঠিতে আঙুল আয়করের দিকে

ম্যাঙ্গালুরু পুলিশকে দেওয়া বয়ানে সিদ্ধার্থের গাড়ির চালক জানিয়েছেন, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে তিনি সিদ্ধার্থকে ফোন করেন।

ভি জি সিদ্ধার্থ

ভি জি সিদ্ধার্থ

সংবাদ সংস্থা
ম্যাঙ্গালুরু ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

সোমবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে সকলেশপুরের দিকে রওনা হয়েছিলেন ভি জি সিদ্ধার্থ। মাঝপথে গাড়িচালক বাসবরাজ পাটিলকে ম্যাঙ্গালুরুর দিকে যেতে বলেন তিনি। ম্যাঙ্গালুরুর কাছে নেত্রাবতী নদীর উপরে একটি সেতুতে গাড়ি থামিয়ে চালককে বলেন, ‘‘একটু হেঁটে আসছি।’’ তার পর থেকেই নিখোঁজ ‘কাফে কফি ডে’ (সিসিডি) সংস্থার কর্ণধার ও কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের জামাই সিদ্ধার্থ। যা নিয়ে আপাতত তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা দেশে। তারই মধ্যে জটিলতা আরও বাড়িয়ে সামনে এসেছে একটি চিঠি। যাতে নিখোঁজ সিসিডি কর্ণধারের স্বাক্ষর রয়েছে। সেই চিঠিতে সিসিডি-তে বিনিয়োগকারী প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনারের পাশাপাশি আয়কর দফতরের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে।

ম্যাঙ্গালুরু পুলিশকে দেওয়া বয়ানে সিদ্ধার্থের গাড়ির চালক জানিয়েছেন, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে তিনি সিদ্ধার্থকে ফোন করেন। কিন্তু তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। তার পরে ফোন করেন সিদ্ধার্থের ছেলে ইশানকে। তিনিও ফোন করে সিদ্ধার্থের মোবাইল বন্ধ পান। তার পরেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সিমন্ড ডি’সুজা এক মৎস্যজীবী জানিয়েছেন, যে সময়ে সিদ্ধার্থ নিখোঁজ হন তখন এক ব্যক্তিকে তিনি ওই সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছিলেন। সিমন্ডের কথায়, ‘‘আমি ওঁর কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার আগেই উনি গভীর জলে পৌঁছে যান। তবে উনি কে তা আমার জানা নেই।’’

ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে বেঙ্গালুরুতে এস এম কৃষ্ণের বাড়িতে যান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া-সহ প্রবীণ রাজনীতিকেরা। এক সময়ে কর্নাটকে কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা কৃষ্ণ ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। আজ দিল্লিতে কর্নাটকের বিজেপি সাংসদের একটি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধার্থকে খোঁজার বিষয়ে কেন্দ্রের সাহায্য চান। কর্নাটকের বিজেপি সরকারের তরফেও কেন্দ্রের সাহায্য চাওয়া হয়।

ম্যাঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, নেত্রাবতী নদীর উপরে সেতুর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে স্নিফার ডগ। ফলে উপকূলরক্ষী বাহিনী নেত্রাবতী নদীতে খোঁজ শুরু করেছে। ডুবুরিদের দল ও বিশেষ যানের পাশাপাশি পুরনো ম্যাঙ্গালুরু বন্দরের কাছে তল্লাশি শুরু করেছে বাহিনীর জাহাজ ‘আইসিজিএস রাজপুত’ও।

এরই মধ্যে জটিলতা বাড়িয়ে সামনে এসেছে একটি চিঠি। তাতে সিদ্ধার্থের স্বাক্ষর রয়েছে। তাতে সিসিডি-র পরিচালন পর্ষদ ও কর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘‘আমি ৩৭ বছর ধরে কঠিন পরিশ্রম করেছি। সিসিডি-র মাধ্যমে ৩০ হাজার ও একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ব্যবসার উপযুক্ত মডেল তৈরি করতে পারিনি।’’ ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘একটি প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনারের প্রবল চাপের ফলে আমাকে মাস ছ’য়েক আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে বাজার থেকে শেযার ফেরাতে হয়েছিল। তাদের চাপ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। অন্য ঋণদাতারাও প্রবল চাপ দিচ্ছে। আয়কর দফতরও অন্যায় ভাবে আমাকে হেনস্থা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইন্ডট্রি-র সঙ্গে আমাদের চুক্তি আটকানোর জন্য আয়কর দফতরের প্রাক্তন ডিজি দু’বার আমাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। তার পরে সিসিডি-র শেয়ারেরও দখল নিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা নিয়ম মেনেই সংশোধিত আয়কর রিটার্ন পেশ করেছিলাম। আয়করের এই পদক্ষেপের ফলে প্রবল আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।’’ ঘটনার পরে জরুরি বৈঠক করেন সিসিডি-র পরিচালকেরা। তার পরে পরিচালন পর্ষদের তরফে জানানো হয়, এই ঘটনায় তাঁরা ‘স্তম্ভিত’। সংস্থা পেশাদারেরা চালান। ফলে কাজকর্ম আগের মতোই চলবে বলে পরিচালকেরা আশা করছেন। চিঠিটি খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

আয়কর দফতরের তরফে হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছে, কর্নাটকের এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের বিরুদ্ধে তদন্তের সূত্রে সিদ্ধার্থ ও সিসিডি-র বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তাঁর এবং তাঁর সংস্থার কাছে যথাক্রমে ৩৬২.১১ কোটি ও ১১৮.০২ কোটি কালো টাকা থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর সিদ্ধার্থের কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে আয়কর দফতরের। তবে এই হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে শিল্পমহলও। বায়োকনের কর্ণধার কিরণ মজুমদার শ’-এর মন্তব্য, ‘‘আমরা লাইসেন্স রাজ থেকে ইনস্পেক্টর রাজে এসে পড়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE