Advertisement
E-Paper

দলিত না ব্রাহ্মণ, আর্য না অনার্য, নাকি বনবাসী! মহাসঙ্কটে বজরঙ্গবলী

তিনি সাগর লঙ্ঘন করেছেন, গন্ধমাদন উৎপাটিত করেছেন, সূর্যকে বগলে চেপে ধরেছেন, সাত লক্ষ রাক্ষস বধ করেছেন, রামায়ণের কোনও কোনও সংস্করণে রাবণের রথের চূড়াও চিবিয়েছেন, তবু এমন উটকো ঝামেলায় পড়বেন, কে জানত! 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
মহাসঙ্কটে বজরঙ্গবলী! 

মহাসঙ্কটে বজরঙ্গবলী! 

তিনি সাগর লঙ্ঘন করেছেন, গন্ধমাদন উৎপাটিত করেছেন, সূর্যকে বগলে চেপে ধরেছেন, সাত লক্ষ রাক্ষস বধ করেছেন, রামায়ণের কোনও কোনও সংস্করণে রাবণের রথের চূড়াও চিবিয়েছেন, তবু এমন উটকো ঝামেলায় পড়বেন, কে জানত!

পরশুরামের ‘হনুমানের স্বপ্ন’-তে তিনি সঙ্গিনীর খোঁজে ব্যাকুল, সুকুমার রায়ের ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’-এ গন্ধমাদন চাপা দিয়েছেন যমরাজকে। কিন্তু কে জানত, তিনি দলিত না ব্রাহ্মণ, আর্য না অনার্য, নাকি নিছক বনবাসী— তা নিয়ে সরগরম হবে ভোটবাজার!

মহাসঙ্কটে বজরঙ্গবলী!

যোগী আদিত্যনাথ যেই না বলেছেন, হনুমান ‘দলিত’— তুলকালাম শুরু। ব্রাহ্মণ মহাসভা আইনি নোটিস দিয়েছে। যোগীর ‘সদবুদ্ধি’ কামনায় যজ্ঞও হচ্ছে। রামভক্ত হনুমান নিয়ে ভোটের মুখে বিষম খেয়ে রুষ্ট ‘রামপন্থী’ দলের সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপি-সেনারা বার্তা পেয়েছেন, মাঠে নামতে হবে। যে কোনও মূল্যে ঘোচাতে হবে হনুমানের ‘দলিত’ তকমা।

পবনপুত্রের জাত নিয়ে ব্যাখ্যাও তাই জারি।

মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, বর্তমানে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ ফুৎকারে ওড়ালেন যোগীর কথা। বললেন, ‘‘হনুমান দলিত কোনও ভাবেই নন। তিনি আর্য। বাল্মীকি রামায়ণ আর রামচরিতমানস পড়লেই বুঝবেন, সেই সময়ে কোনও জাতিভেদ ছিল না। দলিত, শোষিত, বঞ্চিতও ছিল না। ভগবান রাম ও হনুমান, উভয়েই আর্য ছিলেন।’’

আরও পড়ুন: হনুমানও ‘দলিত’! ত্রেতা যুগের বার্থ সার্টিফিকেট কলিতে দিলেন যোগী

ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী গ্রাম থেকে উঠে আসা নেতা নন্দকুমার সাই। নরেন্দ্র মোদী তাঁকে তফসিলি জনজাতি কমিশনের চেয়ারম্যান করেছেন। তাঁর যুক্তি, হনুমান ‘জনজাতি’। বললেন, ‘‘আমরাও বনবাসী। রামের সেনাতে বানর ছিল, ভালুক ছিল। আমি যেমন কাঁওয়ার সমাজের। হনুমানের গোত্রও বলা আছে। আমার ধারণা, এঁরা সবাই জনজাতি। জঙ্গলেই থাকতেন, ভগবান রামের সঙ্গে বড় লড়াইয়ে গিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: দাপটের ইতিহাসটুকুই সম্বল, পিঙ্ক সিটির কয়েক লাখ বাঙালির প্রায় ভূমিকাই নেই ভোটে

তা হলে হনুমান কে?

গবেষকেরা কেউ কেউ বলেছেন, রামায়ণের অনেক আগে ‘হনুমান’ শব্দটি এসেছিল দাক্ষিণাত্যের ভাষা থেকে। তাইল্যান্ডে তিনিই আবার ‘অনুমান’, মালয়েশিয়ায় ‘আন্দোমান’। ‘মাই হনুমান চালিশা’ বইয়ে দেবদত্ত পট্টনায়ক লিখেছেন, জঙ্গলের প্রাণী ও রামের দাস হওয়া সত্ত্বেও হনুমানকে পৈতে দেওয়া হয়েছিল। বাল্মীকি রামায়ণে এ কথা নেই। কিন্তু জাতপাত দানা বাঁধতে শুরু করার পরে পাঁচশো বছর ধরে নানা আঞ্চলিক লেখায় বিষয়টি এসেছে। বলা হয়েছে, নিজের জ্ঞান ও চেষ্টায় হনুমান অর্জন করেন ব্রাহ্মণত্ব। তাঁর হাতে অস্ত্র আছে, ফলে তিনি যোদ্ধা, ক্ষত্রিয়। রামের পতাকা ধরে তিনি দাস, শূদ্রও। আবার পৈতে নিয়ে ব্রাহ্মণও। ‘হনুমানের স্বপ্ন’-তে আছে, পবনপুত্রকে সংসারী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সীতাদেবী বলছেন, ‘‘আমি অনুরোধ করিলে মহর্ষি বশিষ্ঠ উপনয়নসংস্কার দ্বারা তোমায় ক্ষত্রিয় বানাইয়া দিবেন।’’

নানা মুনির নানা মত। কিন্তু ভোটের সময়েই নতুন তোলপাড় কেন? কংগ্রেস বলছে, ‘‘যত্তসব অবান্তর বিতর্ক। ব্যর্থতা ঢাকার কল।’’ নির্বাচন কমিশনে তারা নালিশ জানিয়েছে, রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে এ সব বলে শান্তি ভঙ্গ করছেন যোগী। তাঁকে যেন রাজ্যে ঢুকতেই দেওয়া না হয়!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy