Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Harsh Vardhan

বিনামূল্যে টিকা কত জনকে, নানা কথা হর্ষ বর্ধনের

জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই দেশে গণ-টিকাকরণ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৭
Share: Save:

গণ-টিকাকরণ অভিযানে প্রতিষেধকের দাম কে দেবে— সরকার না আমজনতা, সেই প্রশ্নে মুখ খুলে বিতর্ক বাধিয়ে বসলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তিনি ওই বিতর্ক বাধালেন এমন দিনে, যে দিন দেশ জুড়ে গণ-টিকাকরণের মহড়া বা ‘ড্রাই রান’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ হর্ষ বর্ধন গোড়ায় সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার কথা বলেও আধ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান বদলে ফেলে জানান, ত্রিশ কোটির মধ্যে ১ কোটি স্বাস্থ্য কর্মী ও দু’কোটি পুরকর্মী, আধা সেনা ও সেনা জওয়ানের টিকাকরণ হবে বিনামূল্যে। বাকি ২৭ কোটি মানুষকে ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও জুলাই মাসের মধ্যে কী ভাবে তাঁদের টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা হবে, তা পরে ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। কেন ওই অবস্থান পরিবর্তন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।

জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই দেশে গণ-টিকাকরণ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই লক্ষ্যে গত দু’দিনে দু’টি প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দিয়েছে প্রতিষেধক সংক্রান্ত বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই গণ-টিকাকরণ অভিযান যাতে মসৃণ ভাবে হয়, তার জন্য দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে আজ অন্তত তিনটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার মহড়া অভিযান চালানো হয়। দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে এমন একটি কেন্দ্র গড়া হয়েছিল। সেই কেন্দ্রে মহড়া টিকাকরণ অভিযান কেমন চলছে, তা দেখতে গিয়েই বিতর্ক সৃষ্টি করেন হর্ষ বর্ধন। দিল্লি সরকার আজই রাজধানবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে। দিল্লির মতো কেন্দ্র সরকারও দেশের মানুষের জন্য কিছু ভাবছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে হর্ষ বর্ধন বলেন, “সারা দেশের মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।“ কিন্তু ওই বক্তব্যের আধ ঘন্টার মধ্যেই সুর পাল্টান মোদী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি টুইট করে বলেন, “প্রথম পর্বে দেশ জুড়ে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও দুই কোটি করোনা যোদ্ধাকে। জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ২৭ কোটি দেশবাসীকে কী ভাবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে, তা পরে ঠিক করা হবে।“ স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন হল যে আধ ঘণ্টার মধ্যে এ ভাবে নিজের বক্তব্য বদল করতে হল স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে? আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে সম্ভবত গোটা পরিকল্পনাটি স্পষ্ট নয়। তাই তাঁর বক্তব্যের মধ্যে ফারাক রয়ে গিয়েছে। না হলে সম্ভবত তাঁকে তাঁর বক্তব্য পাল্টানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। আপের দাবি, এ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন হর্ষ বর্ধন। দ্বিতীয় দফায় হর্ষ বর্ধন তিন কোটি লোককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার কথা বললেও কোভিড সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের প্রধান ভি কে পল দাবি করেছেন, প্রথম দফায় ত্রিশ কোটি দেশবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য আসায় প্রশ্ন উঠেছে, আসলে সত্যি কথাটি কে বলছেন? সরকারের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে তা হলে কি সমন্বয়ের অভাব রয়েছে-প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

আজ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্র-সহ দেশের ১২৫টি জেলায় মোট ২৮৫টি টিকা কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার মহড়া হয়। টিকাকরণের প্রশ্নে রাজ্যগুলি পরিকাঠামো– লোকবল নিয়ে কী ধরনের সমস্যায় ভুগছে, তা খতিয়ে দেখাই ছিল আজকের মহড়ার উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে হর্ষ বর্ধন বলেন, “আজকের মহড়ায় প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে নজর রাখা হয়েছে। আজকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত টিকাকরণ পর্বের আগে খামতিগুলি মিটিয়ে ফেলা হবে।“ তাঁর দাবি ভারতের বর্তমান যে টিকা দেওয়ার পরিকাঠানো রয়েছে, তাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও টিকা দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

টিকা পেতে হলে
প্রথম দফায় টিকা পাবেন ৩০ কোটি দেশবাসী।

এঁরা কারা?
• এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী। দু’কোটি পুরকর্মী, পুলিশ, আধাসেনা ও সেনা। ২৭ কোটি বয়স্ক মানুষ। যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুস, কিডনির মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার।

বাকি ভারতবাসী কবে পাবেন?
• ৩০ কোটিকে টিকা দেওয়ার পরে প্রতিষেধকের জোগান ও অতিমারি কেমন হারে ছড়াচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করে বাকিদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তা দেওয়া হবে ধাপে ধাপে।

সে ক্ষেত্রে কী ভাবে ইচ্ছুকদের নাম নথিভুক্ত হবে?
• প্রথম ধাপে ২৭ কোটি বয়স্ককে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে বেছে নেবে প্রশাসন। বাকিরা প্রতিষেধক নিতে চাইলে নিজে থেকে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এর জন্য ‘কো-উইন’ নামে মোবাইল অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে সচিত্র পরিচয়পত্র আপলোড করে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। ওটিপি-র মাধ্যমে যোগদান নিশ্চিত করা হবে। তার পরেই কোন দিন, কোথায় টিকাকরণ হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে। কো-উইনে নাম উঠলে তবেই টিকা মিলবে।

কোথায় পাওয়া যাবে প্রতিষেধক?
• সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে।
• স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি সেন্টারে তৈরি টিকাকরণ কেন্দ্রে।
• প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিকা দেওয়া হবে।

টিকা দেওয়ার দলে কত জন থাকবেন?
• পাঁচ জন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Harsh Vardhan Coronavirus in India COVID-19 Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE