Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in India

মৃতের অমর্যাদায় ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলা-সহ ৫ রাজ্যকে নোটিস

করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও মৃতদেহের অমর্যাদার মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচটি রাজ্যের পরিস্থিতি ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যসচিব অথবা স্বাস্থ্যসচিবের থেকে জবাবদিহি চেয়েছে। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যসচিব অথবা স্বাস্থ্যসচিবের থেকে জবাবদিহি চেয়েছে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

সৎকারের জন্য গড়িয়া শ্মশানে নিয়ে আসা একের পর এক বিকৃত মৃতদেহ আঁকশিতে টেনে পুরসভার গাড়িতে তোলা হচ্ছে। এই ভিডিয়ো ঘিরে বৃহস্পতিবার তোলপাড় হয়েছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। শুক্রবার সেই ভিডিয়োর প্রসঙ্গ উঠল শীর্ষ আদালতেও।

কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সামনে ভিডিয়ো প্রসঙ্গটি তোলেন। এর পরেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও মৃতদেহের অমর্যাদার মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচটি রাজ্যের পরিস্থিতি ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিদের মন্তব্য, পশুর থেকেও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। রোগীর আত্মীয়রা মৃত্যুর বহু দিন পরেও কোনও খবর পাচ্ছেন না। কখন সৎকার হচ্ছে, তা-ও বাড়ির লোককে জানানো হচ্ছে না। পরিবারের লোকেরা সৎকারের সময় হাজির থাকতে বা শেষকৃত্য করতে পারছেন না। যদিও গড়িয়া শ্মশানে সৎকারের জন্য আনা যে দেহগুলি নিয়ে এত শোরগোল, সেগুলি করোনায় মৃতদের নয় বলে গত কালই জানিয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষ ও নীলরতন সরকার হাসপাতাল। এনআরএসের তরফে জানানো হয়, দাবিদারহীন ওই দেহগুলি তাদের মর্গ থেকেই সৎকারের জন্য পাঠানো হয়েছিল গড়িয়া শ্মশানে।

বাংলায় করোনা চিকিৎসায় হয়রানি, তথ্য গোপন, দেহ লোপাট-সহ নানা অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করায় তাদের বক্তব্যই মান্যতা পেল বলে দাবি বিরোধীদের। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, করোনা চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি রাখেনি রাজ্য। মোদী সরকারই নানা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা বাড়িয়েছে। তৃণমূল সাংসদ ও আইএমএ-র প্রাক্তন সভাপতি শান্তনু সেন বলেন, “আদালতের নির্দেশের উপরে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু রাজ্যে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখতে এসে কেন্দ্রীয় দল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ভিজিটার্স খাতায় লিখে গিয়েছে, তারা অভিভূত।”

আরও পড়ুন: বেওয়ারিশ লাশ সৎকার ফের ধাপাতেই, গড়িয়া কাণ্ডে শো-কজ়

পাঁচ রাজ্যের তালিকায় রয়েছে মোদী-অমিত শাহের গুজরাতও। সুপ্রিম কোর্ট পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যসচিব অথবা স্বাস্থ্যসচিবের থেকে জবাবদিহি চেয়েছে। তুষার মেহতা বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরায় বিচারপতি এম আর শাহ প্রশ্ন করেন, “আপনারা কী করেছেন?” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘অন্য রাজ্যে কী হচ্ছে, বলতে পারব না। তবে বাংলার অবস্থা যে শোচনীয়, তা অনেক আগে থেকে আমরা বলছি।”

আরও পড়ুন: দেহ নিয়ে চিঠি নবান্নের, সৎকারে বদলের ভাবনা

দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে করোনা রোগীদের হেনস্থা ও মৃতদেহের অমর্যাদা দেখে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। আজ শুনানির শুরুতে বিচারপতি শাহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট তুলে বলেন, “কিছু রাজ্যে আবর্জনার স্তূপে দেহ মিলছে। পশুর থেকেও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।”

গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস জারি করে আদালত মুখ্যসচিবদের নির্দেশ দেয়, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের

দেখাশোনা ও মৃতদেহের সৎকারনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি হাসপাতালের হাল, রোগীদের দেখাশোনা, কর্মী, পরিকাঠামো নিয়ে বিশদে আদালতে জানাতে হবে। ১৭ জুলাই এই মামলার ফের শুনানি হবে। আদালত এত দিন কেন সক্রিয় হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। তাঁর মন্তব্য, “আদালত এত দিন মানুষের দুর্দশা দেখল না?” বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, “সরকার এ বার জনগণকে কী জবাব দেবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Coronavirus Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE