Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সুপার সাইক্লোন ছাপিয়ে মন্দির চত্বরে ছাপ ঝড়ের

মন্দির তৈরির পর থেকে অনেক বার ঝড়ঝঞ্ঝা হয়েছে ওড়িশায়। ফণীর ধাক্কায় মূল মন্দিরের কাঠামোর ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু অতীতের কোনও ঝড় মন্দির চত্বরে এ বারের মতো উপদ্রব চালিয়েছে বলেও মনে করতে পারছেন না স্থানীয়রা।

ক্ষতিগ্রস্ত: ভেঙে পড়েছে বাঁ-দিকের মূর্তিটি (চিহ্নিত)। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ক্ষতিগ্রস্ত: ভেঙে পড়েছে বাঁ-দিকের মূর্তিটি (চিহ্নিত)। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
পুরী শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৪:৩৫
Share: Save:

ঝড় কেটে যাওয়ার পরে জগন্নাথ মন্দির ফের খুলে দেওয়া হয়েছে ভক্তদের জন্য। মন্দিরের শিখরে উড়ছে ধ্বজা। কিন্তু মন্দির চত্বরে পায়ে পায়ে ছড়িয়ে রয়েছে ফণীর চিহ্ন। প্রাচীন কল্পবট সমূলে উৎপাটিত হয়নি। তবে তার বিরাট বিরাট ডালপালা ভেঙে পড়েছে। মন্দিরের সংস্কারের জন্য পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ যে লোহার ভারা বেঁধেছিল, তা-ও ভেঙে পড়েছে। ওই চত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোটখাটো বিভিন্ন মন্দিরও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে আপাত দৃষ্টিতে জগন্নাথ মন্দিরের মূল কাঠামোর কোনও ক্ষতি দেখা যাচ্ছে না। যা দেখেই কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সাধারণ ভক্ত থেকে ইতিহাসপ্রেমী ও স্থাপত্যপ্রেমীদের অনেকে।

ইতিহাস বলছে, দ্বাদশ শতকে গঙ্গ রাজা অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গদেবের আমলে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরামের মন্দিরের গা জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের ভাস্কর্য। আর গোটা মন্দির চত্বরে ছড়িয়ে আছে লক্ষ্মী, গণেশ, বিমলা-সহ অন্য দেবদেবীদের মন্দির। শিল্পের নিরিখে এই চত্বরের কদর গোটা দুনিয়ায়।

মন্দির তৈরির পর থেকে অনেক বার ঝড়ঝঞ্ঝা হয়েছে ওড়িশায়। ফণীর ধাক্কায় মূল মন্দিরের কাঠামোর ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু অতীতের কোনও ঝড় মন্দির চত্বরে এ বারের মতো উপদ্রব চালিয়েছে বলেও মনে করতে পারছেন না স্থানীয়রা। এমনকি ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের সময়েও মন্দির চত্বরে এমন প্রভাব পড়েনি বলে জানাচ্ছেন মন্দিরের সেবায়েত মদনমোহন পূজারী, রাধেশ্যাম মহাপাত্রেরা। বৃদ্ধ মদনমোহনের কথায়, ‘‘কল্পবট অনেক প্রাচীন গাছ। কবে থেকে যে আছে, তার লেখাজোখা নেই। এমন গাছের ডালপালা এ ভাবে ভেঙে পড়তে এই প্রথম দেখলাম। শিকড় উপড়ে যায়নি, এটাই রক্ষে।’’ মন্দিরের সামনেই বাঁশের ম্যারাপ বেঁধে রথ নির্মাণের কাজ চলে। সেই ম্যারাপ ভেঙেছে ঝড়ে। ধসে পড়েছে প্রধান ফটকের বাঁ-দিকের মূর্তিটি।

ফণীর হানার আগের দিন, বৃহস্পতিবার থেকেই জোরালো হাওয়া বইছিল পুরীতে। সেই হাওয়াতেই প্রথম বার মন্দিরের ধ্বজা উড়ে যায়। ফের একটি ছোট মাপের ধ্বজা লাগানো হলেও তা থাকেনি। সেটিও রাতে উড়ে গিয়েছিল। শুক্রবার ঝড়ের সারা দিন ও শনিবার বিকেল পর্যন্ত মন্দিরের মাথায় ধ্বজা দেখা যায়নি। রবিবার সকালে ফের উড়েছে জগন্নাথের ধ্বজা। অনেকে বলছেন, মন্দিরের গা বেয়ে মাথায় উঠে ধ্বজা লাগানোই পুরীর রীতি। কিন্তু এ বার তুমুল হাওয়ার মধ্যে মন্দিরের দেওয়াল বেয়ে ওঠা ঝুঁকির হয়ে যেত। তাই ধ্বজা লাগানো হয়নি।

মন্দির কমিটির একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঝড়ের জেরে মন্দির চত্বরে ভেঙে পড়া পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের লোহার ভারা ও গাছের ডালপালা পড়ে থাকায় ভক্তদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাঁদের শুক্র-শনিবার ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই দু’দিন বাইরে থেকেই প্রণাম সেরেছেন ভক্তকুল। আজ সকাল থেকে ফের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে। তবে ভক্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। গত দু’দিনে মন্দিরের বাইরে ভক্তের সংখ্যা বেশি ছিল। ভিতরে গিয়ে দেখা গেল, মন্দির চত্বরে ভাঙা গাছের ডালপালাগুলিকে গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। নতুন করে ভারা তৈরির কাজ শুরু করেছেন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কর্মীরা। ঝড় আসার কথা শুনেই নীলাচলবাসী বলেছিলেন, রক্ষা করবেন মহাপ্রভুই। এখনও জগন্নাথের উপরেই ভরসা তাঁদের। বলছেন, ‘‘ক্ষতি তো আরও হতে পারত। তা উনি আটকে দিয়েছেন।’’ অটোচালক মদনমোহন লেঙ্কার কথায়, ‘‘উনি জীবন্ত ভগবান। যত দিন আছেন, কেউ কিছু করতে পারবে না।’’

বিশ্বাস ভাঙেনি ঠিকই। তবু সুপার সাইক্লোন যা পারেনি, তা করেছে ফণী। বিশ্বাসের বেড়া টপকে জগন্নাথ মন্দির চত্বরে ছাপ রেখে গিয়েছে সে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani ফণী Puri Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE