Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Farmer Protest

কে বলেছে ধনী কৃষকদের আন্দোলন? গরিবরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত: সাক্ষাৎকারে কৃষক নেতা রাকেশ

বলেছিলেন সকাল ৮টায় কথা বলবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেলা গড়াল ৩টেয়। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ময়দানে বসেই কথা বললেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত।দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ময়দানে বসে কথা বললেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত। স্পষ্ট করলেন নিজের অবস্থান। 

কৃষক নেতা রাকেশ জানালেন, আন্দোলন জারি থাকবে কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কৃষক নেতা রাকেশ জানালেন, আন্দোলন জারি থাকবে কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

উদ্দালক ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১২
Share: Save:

আপনারা কতদিন বসে থাকবেন এখানে?

আমরা কথা বলব। আপনি হয়ত জানেন, সরকারের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। আলোচনা চলতে থাকবে। আগেও একাধিক আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব রেখেছি। পরেও হয়ত একাধিক আলোচনা হবে। সেখানেও আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য আমরা রাখব। তবে আমাদের দাবি যদি না মানা হয়, তাহলে তো কোথাও সরার প্রশ্ন আসে না।

আপনি যদি একটু স্পষ্ট করেন, আপনাদের দাবিগুলো ঠিক কী কী?

দেখুন অনেকগুলি দাবি আছে। প্রথম থেকেই অনেকে বলতে চেষ্টা করছে, সরকার বলেছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বন্ধ করা হবে। তাই আন্দোলন তুলে নেওয়া উচিত। কিন্তু বিষয়টি তো তা নয়। এমএসপি নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট আইন চাই। সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে দিতে হবে যে এমএসপি থাকবে। আর এই কৃষি আইনের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিও আমাদের প্রথম থেকেই আছে। কিসান ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার কমানোর বিষয়টিও আছে। দেশে একটি নতুন কৃষি আইনের খসড়া তৈরি হোক, আমরা সেটাই চাইব।

ধনী কৃষকদের আন্দোলন বলে এটিকে দাগিয়ে দেওয়া অর্থহীন। যাঁরা আন্দোলনে বসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই এটা স্পষ্ট হবে। ছবি:পিটিআই

অনেকে অভিযোগ করছেন, এই আন্দোলনে কেবল ধনী কৃষকরা আছেন, সত্যিই কি তাই?

একেবারেই না। এখানে সর্বস্তরের কৃষকরা আছেন। আপনি দেখুন, ধনী কৃষকদের সরাসরি বাজারে ফসল বিক্রি করা অনেক সহজ বিষয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের প্রয়োজন পড়ে দরিদ্র কৃষকদেরই। তাঁরা ফসল বিক্রি করতে চাইলে ফসলের যথেষ্ট দাম তখনই পাবেন যখন এমএসপি-র আইন তৈরি হবে। তাই আন্দোলনে বেশিরভাগই দরিদ্র কৃষকরা আছেন। তাঁদের বিপুল অংশগ্রহণেই এই আন্দোলন এতটা বড় আকার ধারণ করেছে। ধনী কৃষকদের আন্দোলন বলে এটিকে দাগিয়ে দেওয়া অর্থহীন। যাঁরা আন্দোলনে বসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই এটা স্পষ্ট হবে।

সরকার বলছে দরিদ্র কৃষকদের তো সুবিধা হবে বাইরে বিক্রি করতে পারলে, তাহলে বিরোধিতা কেন?

আমি তো বুঝতেই পারছি না সরকারের ফর্মুলাটা কী। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য যদি কমে যায়, তাহলে দরিদ্র কৃষকের লাভ কী করে হবে? তাকে তো অনেক কম দামেও বিক্রি করতে হতে পারে। সরকার যে বলছে কৃষকদের লাভ হবে, সেই লাভের ফর্মুলাটা সরকার বুঝিয়ে দিক, তাহলেই তো হয়। এখনও পর্যন্ত তো সরকার লাভের ফর্মুলা আমাদের বোঝাতে পারেনি।

কিন্তু কতদূর চালিয়ে নিয়ে যাবেন আপনাদের আন্দোলন?

যতদূর নিয়ে যেতে হয়, ততদূর যাব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, আমরা ২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে ট্রাক্টর নিয়ে প্যারেড করব। এতদিন যখন দিল্লির রাজপথে নেতামন্ত্রীদের গাড়ি চলেছে, তখন দিল্লির মসৃণ, মখমলের মতো রাস্তায় ট্রাক্টরও তো চলা উচিত। ট্রাক্টর শুধু মাঠে ঘাটে চলবে, তা কেন? প্রতিবাদী কৃষকরা সেদিন দিল্লিতে যাবেন ট্রাক্টরে করে।

আমরা ২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে ট্রাক্টর নিয়ে প্যারেড করব। ছবি: পিটিআই

কোনও রাজনৈতিক দল যদি সাহায্য করতে চায়, তাহলে আপনারা সেই সাহায্য নেবেন?

আমাদের এখানে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। কেউ যদি এখানে এসে থাকেন থাকবেন। এটা সম্পূর্ণ তাঁদের ইচ্ছা। আমরা থাকার জন্য ব্যবস্থা করেছি। কেউ আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইলেই দিতে পারেন।

প্রতিবাদের মঞ্চে একাধিক কৃষকের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি, সরকারের কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়?

দেখুন, দিল্লিতে ঠাণ্ডা পড়ে প্রচণ্ড। এ বারেও জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। এত মানুষ এখানে ঠাণ্ডার মধ্যে বসে আছেন। অনভিপ্রেত হলেও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। সরকারের উচিত এই বিষযে পদক্ষেপ করা। এ ভাবে তো দিনের পর দিন চলতে পারে না, তাই না।

খালিস্তানি গোষ্ঠীর সঙ্গে কেউ কেউ যোগ খুঁজে পাচ্ছেন আপনাদের আন্দোলনের, কী বলবেন?

এ তো সরকার করছে। এগুলো সরকারের ষড়যন্ত্র। এখানে সাধারণ দরিদ্র কৃষক, মজদুররা বসে আছেন। তার মধ্যে খালিস্তানি যোগ কী ভাবে আসবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Protest Rakesh Tikait Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE