Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অনাহারে শিশু মরে, নেতারা সস্তায় জিভে জল আহারে

গত ১৮ বছরে ভারতে অনাহার কমেছে ১৮ শতাংশ হারে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৩
Share: Save:

দরকার নেই। তবু সংসদের ক্যান্টিনে ভর্তুকিতে বিক্রি হয় খাবার। মাংস, মাছ, তরিতরকারি। অথচ সংসদের চৌহদ্দি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অনাহারে মারা যায় তিন শিশুকন্যা! শুধু দিল্লি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে অনাহারে মৃত্যু ঘটেছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশেও।

উন্নয়নের নামে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু যাবতীয় চাকচিক্যের আড়ালে ভারতের আসল ছবিটি একেবারেই অন্য— বলছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স তথা বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে, এ দেশে অর্ধেকের বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। প্রতি রাতে তারা আধপেটা খেয়ে বা খালি পেটে শুতে যাচ্ছে। এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে চিন ২৯ নম্বরে, আর ভারত ১০০-য়। ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ (৮৮) ও মায়ানমার (৭৭)। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞার জালে আটক থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া এগিয়ে ভারতের চেয়ে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান (১০৬)।

গত ১৮ বছরে ভারতে অনাহার কমেছে ১৮ শতাংশ হারে। এই সময়ে গোটা বিশ্বে ক্ষুধার্তের সংখ্যা কমেছে ২৭ শতাংশ হারে। অপুষ্টি, বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে সমীক্ষায় স্পষ্ট, ভারতে ৫ বছরের নীচে প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একটির উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। প্রতি তিন জনে এক জন বয়সের তুলনায় খর্বকায়।

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষাও বলছে, দেশে পাঁচ বছরের নীচে থাকা প্রায় ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি শিশু রক্তাল্পতায় ভোগে। বয়সের তুলনায় ওজন কম সাড়ে চার কোটি শিশুর। যার মূল কারণ অপুষ্টি। হিমোগ্লোবিনের অভাবে এই শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে সহজে। রোগের শিকার হয়। অপুষ্টির কারণে এদের মস্তিষ্কেরও পূর্ণ বিকাশ ঘটে না।

আরও পড়ুন: অনাহারে নয়, ৩ শিশুর মৃত্যু বিষে, দাবি নয়া রিপোর্টে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’-র মতে অসচ্ছল আর্থ-সামাজিক কারণ এর জন্য দায়ী। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০১৬-র তথ্য— এ দেশের ২৭ কোটি মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নীচে। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ওই শিশুরা এক দিকে যেমন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হওয়ায় প্রায়ই এরা রোগের শিকার হয়। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের হিসেব, ভারতে যেখানে প্রতি বছর ২২.৫-২৩ কোটি টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হয়, সেখানে ২০১৬-১৭ সালে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৭.৩ কোটি টন। অর্থাৎ উৎপাদন হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজর না দেওয়াই এ দেশের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।

ইউপিএ জমানায় খাদ্যমন্ত্রী শরদ পওয়ার সংসদে জানিয়েছিলেন, মজুত খাদ্যশস্যের প্রায় ৪০ শতাংশই পচে নষ্ট হয়। এখন নরেন্দ্র মোদী জমানায়, দিল্লিতে তিনটি শিশুর পেটে এক কণা খাবারও পাওয়া যায় না ময়না-তদন্তে! ঝাড়খণ্ড থেকে দিল্লি— দেশের নানা প্রান্তে সেই আমলাশোলেরই ছায়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Starvation Delhi Death দিল্লি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE