Advertisement
০৫ মে ২০২৪
National News

দিল্লির ভিভিআইপি এলাকায় রাত কাটিয়েছিল জইশ প্রধান মাসুদ!

শুধু তাই নয়, খোদ রাজধানী দিল্লিতে ভিভিআইপি এলাকাতেও থেকে গিয়েছে সে। অথচ কাক-পক্ষীতেও টের পায়নি!  তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহার। ফাইল চিত্র।

জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহার। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ১২:১২
Share: Save:

পর্তুগাল পাসপোর্ট আর ভুয়ো নামেই ঘুরে বেড়িয়েছিল উত্তর ভারতের একাধিক জায়গা। শেষে গিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরে। শুধু তাই নয়, খোদ রাজধানী দিল্লিতে ভিভিআইপি এলাকাতেও থেকে গিয়েছে সে। অথচ কাক-পক্ষীতেও টের পায়নি! তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কাশ্মীরে গিয়েই ধরা পড়েছিল জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহার। সালটা ছিল ১৯৯৪। তদন্তকারীদের জেরার মুখে তখন মাসুদ স্বীকার করেছিল কী ভাবে ভারতে এসেছে, কোথায় ছিল, কাদের সঙ্গে দেখা করেছে। সম্প্রতি সেই তথ্যই সামনে এসেছে।

তদন্তকারীদের কী জানিয়েছিল মাসুদ?

মাসুদ জানিয়েছিল, ওই বছরই পর্তুগাল থেকে ভুয়ো পাসপোর্ট বানিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ গিয়েছিল সে। পাসপোর্টে তার পরিচয় ছিল ভালা অ্যাডাম ইসা। বাংলাদেশে দু’দিন থাকার পর ভারতে এসেছিল সে। দিনটা ছিল ২৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানে চেপে ওই দিন দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে সে। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সেন্টারে চেকিং চলাকালীন মাসুদের চেহারা দেখে সন্দেহ হয়েছিল দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। ‘দেখে তো পর্তুগিজ বলে মনে হচ্ছে না!’— এমনই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু খুব সুকৌশলে নিজেকে ‘গুজরাত জন্মজাত’ বলে পরিচয় দিয়ে আধিকারিকদের বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছিল। তার পরই পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মেরে মাসুদকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন আধিকারিকরা!

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে মাসুদ। চালককে বলেছিল একটা ভাল হোটেলে নিয়ে যেতে। চাণক্যপুরীর কাছে অশোক হোটেলে তাকে নিয়ে যায় চালক। দিল্লিতে পা রেখেই এটাই ছিল মাসুদের মাথা গোঁজার প্রথম ঠাঁই। হোটেলে পৌঁছে দেরি না করে নিজের মিশনে লেগে পড়ে মাসুদ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই দিন রাতে আশরফ দার নামে এক কাশ্মীরিকে মাসুদ ফোন করে অশোক হোটেলে আসতে বলে। হরকত-উল-আনসার জঙ্গিগোষ্ঠীর এক সদস্য আবু মেহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই অশোক হোটেলে আসে আশরফ।

আরও পড়ুন: আজ-হারেও সব ‘দোষ’ নেহরুর! মাসুদ নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য

তদন্তকারীদের কাছে মাসুদ জানিয়েছিল, তাকে দেওবন্দ নিয়ে যাওয়ার জন্য আশরফের কাছে জানিয়েছিল সে। সেখানে দেওবন্দিদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়ার কথা ছিল তার। আশরফ নিজের মারুতিতে করে মাসুদ ও মেহমুদকে নিয়ে ওই রাতেই দেওবন্দ যায়। দারুম-উলুম-দেওবন্দে এক সঙ্গে সেই রাতটা কাটায় তারা। পর দিন সকালেই দেওবন্দে প্রার্থনা সেরে প্রথমে গুনগো এবং সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে যায় তারা। সাহারানপুরে তাবলিক-উল-জামাত নামে একটি মসজিদে ৩০ জানুয়ারির রাতটা কাটায় মাসুদ। গোয়েন্দাদের দাবি, যেখানে যেখানে গিয়েছে সেখানে নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখেছিল মাসুদ।

৩১ জানুয়ারি। সাহারানপুর থেকে দিল্লিতে ফিরে আসার আগে পঞ্জাবের ফাজিলকা জেলার জালালাবাদে একটি খান জি-তে গিয়েছিল মাসুদরা। এবং সেই একই গাড়িতে করে দিল্লিতে ফিরে আসে তারা। কনট প্লেসের কাছে জ্ঞানপথ নামে একটি হোটেলে ওঠে মাসুদ। এখান থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরে যাওয়ার বিমানের টিকিট ছিল তার। মাসুদ তদন্তকারীদের জানায়, যে হেতু তার হাতে অনেকটাই সময় ছিল তাই ওই সময়ের মধ্যে আরও কয়েকটা জায়গা ঘুরে আসার পরিকল্পনা করে সে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: সেনার পোশাকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে বন্দুকবাজের হামলা, হত ৯, রক্ষা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের

লখনউয়ে আলি মিয়াঁর মাদ্রাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা করে মাসুদ। তবে এ বার ভাড়ার কোনও গাড়ি নয়, বাসে চেপেই ৬ অথবা ৭ ফেব্রুয়ারি মাসুদ ওই মাদ্রাসায় পৌঁছয়। এখানেও নিজের পরিচয় গোপন করেছিল সে। তবে আলি মিয়াঁর সঙ্গে দেখা হয়নি তার। ফের বাসে দিল্লিতে ফিরে আসে। তবে এ বার করোল বাগের কাছে শিসমহল নামে একটি হোটেলে ওঠে মাসুদ। দিল্লির যে ক’টি হোটেলে ছিল সব কটিতেই নিজেকে পর্তুগিজ নাগরিক ভালি অ্যাডাম ইসা বলেই নাম রেজিস্ট্রার করায় সে।

৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন নিজামুদ্দিনে তাবলিক-উল-জামাত সেন্টারে যায় মাসুদ। কিন্তু কারও সঙ্গে দেখা করেনি সেখানে। তবে ফেরার পথে নিজামউদ্দিন থেকে ১২টা কম্পাস কিনেছিল কাশ্মীরের জঙ্গিদের উপহার দেওয়ার জন্য। জেরায় মাসুদ এমটাই জানিয়েছিল, দাবি তদন্তকারীদের।

৯ ফেব্রুয়ারি সেই আশরফ দারই মাসুদকে শ্রীনগরে নিয়ে যায়। সেখানে লাল বাজারের কাসমিয়া মাদ্রাসায় একটা ঘর আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছিল আশরফ। ওই দিন সন্ধ্যায় হরকত-উল-জিহাদ অল-ইসলামি জঙ্গিগোঠীর সদস্য সাজ্জাদ আফগানির সঙ্গে দেখা করে। পর দিন সকাল অর্থাত্ ১০ ফেব্রুয়ারি আফগানির সঙ্গে মাটিগুন্দে যায় মাসুদ। সেখানে পাকিস্তানের সব জঙ্গি একত্রিত হয়েছিল। মাটিগুন্দ থেকে আফাগানি এবং ফারুক মানে দুই জঙ্গির সঙ্গে ফেরার পথে তাদের গাড়িতে সমস্যা হয়। তখন একটা অটোরিক্সায় উঠে অনন্তনাগের দিকে যাওয়ার সময় পথেই তাদের আটকায় সেনা। সেনাদের দেখেই ফারুক গুলি ছুড়তে শুরু করে। ফারুক পালাতে সক্ষম হলেও ধরা পড়ে মাসুদ ও আফগানি।

তার পর পাঁচ বছর জেলে কাটে। ১৯৯৯-এ মাসুদকে ছাড়ানোর জন্য ভারতের যাত্রিবাহী বিমানকে হাইজ্যাক করে কন্দহরে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। যাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে মাসুদকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভারত সরকার।

তার পরে ভারতে একের পর এক হামলা চালিয়েছে মাসুদ। সংসদে হামলা, উরি এবং সবশেষে এ বছরে পুলওয়ামায় হামলা চালায় জইশ। যার জেরে ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়। বার বারই মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু প্রতি বারই বাধা হয়ে দাঁড়ায় চিন। পুলওয়ামা হামলার পর ভারত এ বার অনেক দেশকেই পাশে পেয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেওয়ার জন্য জোর দাবি করে সকলে। কিন্তু এ বারও সেই চিনই সেই প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিল।

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE