মহম্মদ রফি বাট
দক্ষিণ কাশ্মীরে নিহত শিক্ষক মহম্মদ রফি বাটের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের যোগের কথা কেউ আঁচ করতে পারেননি বলে গত কাল দাবি করেছিল তাঁর পরিবার।
কিন্তু আজ পুলিশ দাবি করেছে, রফি বাটের দুই সম্পর্কিত ভাই ১৯৯০-এর দশকেই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন। অন্য দিকে রফির আর এক সম্পর্কিত ভাই মুদাসির বাটের দাবি, সম্প্রতি প্রায়ই জেহাদের কথা বলতেন রফি। এমনকী কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর এক সহকর্মীও জানিয়েছেন, রফি ‘চরম সিদ্ধান্ত’ নিতে পারেন বলে তাঁর মনে সন্দেহ হয়েছিল।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক রফি বাট নিখোঁজ হওয়ায় উত্তপ্ত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। নিখোঁজ শিক্ষকের মোবাইলের সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত শোপিয়ানে হিজবুল জঙ্গিদের ডেরায় পৌঁছে যায় যৌথ বাহিনী। সদ্য হিজবুলে যোগ দেওয়া শিক্ষককে ফেরাতে পারেননি তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও। নিহত হয় আরও চার জঙ্গি। তাদের মধ্যে ছিল হিজবুল কম্যান্ডার সাদাম পাদেরও।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ্য আজ জানিয়েছেন, মহম্মদ রফি বাটের দুই সম্পর্কিত ভাই আকলাক আহমেদ বাট ও ইশতিয়াক আহমেদ বাট ১৯৯০-এর দশকে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার সময়ে এক সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন। বাট পরিবারে বিচ্ছিন্নতাবাদী জামাত-ই-ইসলামিরও প্রভাব রয়েছে। রফির যে জেহাদের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর সম্পর্কিত ভাই মুদ্দাসির বাটও। তাঁর কথায়, ‘‘ইদানীং ও কেবলই জেহাদের কথা বলত। নিরীহ কাশ্মীরিদের হত্যায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিল রফি। তবে ও যে এই পথে হাঁটবে তা কখনও ভাবিনি।’’ কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে রফির সহকর্মী মহম্মদ নাইমও সন্দেহ করেছিলেন, রফির মনে এ পথে হাঁটার কথা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ও বোধহয় একটা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিল।’’
আরও পড়ুন:
পঠানকোটে সরানো হল কাঠুয়া মামলা
আজ উপত্যকায় হরতাল ডেকেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। গোলমালের আশঙ্কায় যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসনও। কিন্তু তারই মধ্যে রফি বাটের বাড়িতে ভিড় জমান তাঁর পরিজন ও বন্ধুরা। তাঁর এক ছাত্র ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আপনি নেই। হত্যাকারীদের ক্ষমা করব না।’’
শোপিয়ানের হেফ শেরমাল এলাকায় নিজেদের গ্রামে আজ শেষকৃত্য হয় হিজবুল নেতা সাদাম পাদের ও বিলাল আহমেদের। সেখানেও ঢল নেমেছিল স্থানীয়দের। হিজবুল কম্যান্ডার রিয়াজ নাইকু, মহম্মদ নাভেদ, সাইফুল্লা খানেরাও হাজির হয়। ‘আজাদি’র তরফে শ্লোগানের পাশাপাশি আকাশে গুলি ছোড়া হয়। সাদাম পাদেরের মা জঙ্গিদের জড়িয়ে ধরেন। তার পরে আকাশে এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন।
আজ শ্রীনগরে সচিবালয়ের সামনে ধর্নার ডাক দিয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তার আগেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করে প্রশাসন। পুলিশ কর্তাদের মতে, আজ মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় গোলমাল এড়ানো গিয়েছে। কারণ, বড় মাপের বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ পায়নি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কথায়, ‘‘পাথর যারা ছুড়ছে আর বন্দুক হাতে যে নিরাপত্তারক্ষীরা প্রতিরোধ করছেন, তাঁদের অনেকেই কাশ্মীরের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এই মৃত্যুর হাত থেকে সকলকেই রক্ষা পান সে জন্য পথ বার করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy