ছবি টুইটার।
টেলিভিশনের পর্দায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চোখ রেখেছিলাম। বেলা বাড়তেই সুপ্রিম কোর্টের রায় জানতে পারলাম। আদালত জানিয়েছে, সমকামী সম্পর্ক অপরাধ নয়। মানসিক রোগও নয়। দেখলাম, প্রিয়জনের হাত ধরে অনেকেই উৎসবে মেতে উঠেছেন। ছুটে গিয়েছিলাম পাশের ঘরে। মাকে ডেকে আনলাম। ভাবলাম, সবটাই হয়তো বদলে যাবে।
কিন্তু খবর শুনে মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, ‘‘কোর্টের রায় কি পাশের বাড়ির কাকু-কাকিমার মুখ বন্ধ করতে পারবে! তোর ব্যাপার জানতে পারলে টিকতে পারব না!’’ ঘোর কাটল। বুঝতে পারলাম, রায়ের পরেও হয়তো সবটা বদলে যাবে না।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকায় থাকি। বছর দশেক আগে প্রথম বুঝেছিলাম, আমি সমকামী। প্রিয় বান্ধবীকেই সে কথা প্রথম জানিয়েছিলাম। লেসবিয়ান শুনে ভ্রু কুঁচকে বাড়ি থেকে প্রায় ছুটে পালিয়ে গিয়েছিল সে। পরে জানিয়েছিল, কখনও ফাঁকা ঘরে আমার সঙ্গে গল্প করতে আসবে না। একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল চাকরি জীবনে। কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে গ্রামে ফিরে যাই। সেখানেই বছর খানেক আগে একটি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছি। অনেক সাহস জুটিয়ে একবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে নিজের পছন্দের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি গলা নামিয়ে ফিসফিস করে পরামর্শ দিলেন, ‘বিষয়টা আর কেউ জানে না তো! জানতে পারলে, কোনও মেয়ে তোমার ক্লাস করবে না।’
আরও পড়ুন: সিরাস যদি থাকত, আক্ষেপ আলিগড়ের বন্ধুর
পরিবার কিংবা কর্মস্থল, যেখানেই নিজের পরিচয় জানাজানি হয়েছে, তকমা জুটেছে ‘মানসিক রোগী’। কখনও মা, কখনও দিদি বলেছে, ‘কোন ওষুধে যে রোগ সারবে জানি না। মেয়েটার চিকিৎসা দরকার।’ ঘরের ভিতরের লড়াইয়ে আমার সঙ্গী ছিলেন শুধু বাবা। তিনি মারা যাওয়ার পরে ‘রোগ সারানোর’ চাপ আরও বেড়েছে। তাই আজও আমি নিজের নাম প্রকাশ করতে পারলাম না। কারণ, ‘লেসবিয়ান’ জানতে পারলে পাড়ার দোকানে যাওয়া বা ছেলেমেয়ে প়ড়ানো বন্ধ হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy