Advertisement
E-Paper

স্বামী-হত্যার ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে দিন গুজরান মরিয়মের

এক অজানা আতঙ্ক আর ভয় নিয়েই গত দু’বছর ধরে দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে দিন গুজরান করছেন মরিয়ম। গোমাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গণপিটুনিতে খুন হওয়া রামগড়ের সেই আলিমুদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৯
সেই ভয়াল স্মৃতি আঁকড়ে মরিয়ম। নিজস্ব চিত্র

সেই ভয়াল স্মৃতি আঁকড়ে মরিয়ম। নিজস্ব চিত্র

হাতের মোবাইল ফোনে ‘ভিডিও ক্লিপিংস’-টা দেখাচ্ছিলেন মরিয়ম। এক জয়গায় বললেন, ‘‘এই দেখুন, যে লোকটা লাঠি দিয়ে আমার স্বামীকে পেটাচ্ছে সে নাকি ফেরার! অথচ ওকে আমি নিজেই বেশ কয়েকবার পাশের পাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। যারা হাইকোর্টে জামিন পেয়ে ঘুরছে তাদের সঙ্গেও আমার রাস্তাঘাটে দেখা হয়। ওদের দেখলে ভয়ে কেঁপে উঠি।’’

এক অজানা আতঙ্ক আর ভয় নিয়েই গত দু’বছর ধরে দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে দিন গুজরান করছেন মরিয়ম। গোমাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গণপিটুনিতে খুন হওয়া রামগড়ের সেই আলিমুদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন। রামগড় শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে মনুয়া গ্রামের বাড়িতে বসে মরিয়ম বলেন, ‘‘শুধু আমার স্বামীই নয়, আমার বড় ছেলে সাজাদও এই বছর জানুয়ারি মাসে অসুখে মারা গিয়েছে।’’ স্বামীর মৃত্যুর পরে যে আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলেন তা তলানিতে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, পরিবারের একজনকে চাকরি দেবে। চার ছেলেমেয়ের কেউই এখনও চাকরি পায়নি।

মনুয়া গ্রাম থেকে দূরে দেখা যায় ছোট ছোট পাহাড়, কয়লাখনি। গ্রামে ঢোকার পরে কয়েকটা বাড়ি পেরিয়েই আলিমুদ্দিনের একতলা পাকা বাড়ি। মরিয়ম বলেন, ‘‘সামনের জুন মাসের ২৯ তারিখ আমার স্বামীর মৃত্যুর দু’বছর পূর্ণ হবে। ঘটনার পরে তো কত লোক এসেছিলেন। রাজনৈতিক দলের নেতা, মিডিয়া, প্রশাসন। কত আশ্বাস। এখন আর কেউ আসে না। একা হয়ে গিয়েছি খুব।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পাশে রাখা অ্যালবামটি তুলে নিয়ে পাতা ওল্টাচ্ছিলেন মরিয়ম। পাতায় পাতায় আলিমুদ্দিনকে পিটিয়ে মারার নানা টুকরো টুকরো ছবি। এই সব ছবি কেন অ্যালবামে? মরিয়মের জবাব, ‘‘যারা ওকে মেরেছে তাদের অনেকের ছবিই আছে এই অ্যালবামে। কিন্তু আমার কাছে অন্তত খুনিদের ছবিগুলো থাক। দেখতে চাইলে প্রমাণ দেব।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আলিমুদ্দিনকে পিটিয়ে মারার ঘটনা হাজারিবাগের লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের সমীকরণ অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। রামগড়-সহ ছ’টি বিধানসভা নিয়ে হাজারিবাগ লোকসভা ক্ষেত্র। অনেকের মতে, কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোটের প্রার্থী গোপাল সাহু বেগ দেবেন বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহাকে। রামগড় কাণ্ডে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর অভিযুক্তদের জয়ন্ত সিনহা মালা পরিয়েছিলেন। বিতর্কের ঝড় উঠেছিল দেশজুড়ে। জয়ন্তবাবু পরে দুঃখপ্রকাশ করলেও তাতে ক্ষতে প্রলেপ পড়েনি।

জোট প্রার্থী গোপাল সাহুর সমর্থকদের মতে, ‘‘শুধু মুসলিম ভোট বা আদিবাসী ভোটই নয়, গোপালবাবু তাঁর নিজের ‘বানিয়া’ জাতির ভোটও পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে জোট প্রার্থীই এগিয়ে।’’ যদিও জাতপাত ও ধর্মের সমীকরণকে তোয়াক্কা করছে না জয়ন্ত সিনহার দল। জয়ন্তবাবুর মতে, ‘‘গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন মূলক কাজকর্মই শেষ কথা বলবে। মোদীজির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য প্রান্তিক শ্রেণির বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে।’’ এ সব কূট রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অবশ্য মরিয়ম বোঝেন না। তিনি শুধু চোখ বন্ধ করে এখনও দেখতে পান স্বামীর সেই জোড় হাতে প্রাণভিক্ষার দৃশ্য। তার জন্য মরিয়মের মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখতে হয় না।

Lok Sabha Election 2019 Lynching Beef Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy