Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জল ফুরোচ্ছে, বন কমছে! প্রচারে কই

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ বুক বাজিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদী এ বারের ভোটে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে প্রচার করেছেন। কিন্তু দেশের তাপমাত্রা কেন বাড়ছে, উষ্ণায়নের প্রভাব কতখানি পড়ছে, তার জন্য কী করা দরকার, তা নিয়ে বিতর্ক হয়নি।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৩:৪৩
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে যে সংস্থার অধ্যক্ষ, সেই নীতি আয়োগই বলেছিল, ২০২০-র মধ্যে ২১টি বড় শহরের ভূগর্ভস্থ জল ফুরিয়ে যাবে। শীত এলেই দেশের রাজধানী হয়েও দিল্লি বায়ুদূষণের শিকার হয়। দেশে ক্যানসারের থেকে বেশি মৃত্যু হয় বায়ুদূষণে। অথচ সেই দেশেই আইন-কানুনের ফাঁক গলে ক্রমশ বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। কিন্তু বনাঞ্চলের সংজ্ঞা বদলে খাতায়-কলমে তা ঠিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

না। এ সব প্রশ্ন নিয়ে কোনও লোকসভা ভোট-প্রচারেই বিতর্ক হয় না। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ইতি পড়ে গেল। কিন্তু এ বারের ভোটেও এ সব বিষয়ের জায়গা হল না।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ বুক বাজিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদী এ বারের ভোটে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে প্রচার করেছেন। কিন্তু দেশের তাপমাত্রা কেন বাড়ছে, উষ্ণায়নের প্রভাব কতখানি পড়ছে, তার জন্য কী করা দরকার, তা নিয়ে বিতর্ক হয়নি। ‘নির্বাচনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছিল’—এতেই খুশি অমিত শাহ। বলেন, ‘‘১ লক্ষ ৫ হাজার কিলোমিটার সফর করেছেন মোদী। ১৪২টি জনসভা করেছেন। চারটি রোড শো করেছেন। উত্তরাখণ্ড থেকে মধ্যপ্রদেশের ৪৬ ডিগ্রি গরম, আবার অরুণাচলে ১৮ ডিগ্রিতেও জনসভা করেছেন।’’ পরিবেশ না আসুক, ২০১৪-য় ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী কেন ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নপূরণকে হাতিয়ার করেই ভোটে লড়লেন না, আজ সেই প্রশ্ন তোলেন রাহুল গাঁধী। প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাহুল বলেন, ‘‘৩-৪টি বিষয়ে ভোট হচ্ছে। বেকারি, চাষির দুরবস্থা, রাফাল, দুর্নীতি, অর্থনীতির অবস্থা, নোট বাতিল, গব্বর সিংহ ট্যাক্স। আর নরেন্দ্র মোদী এ সব নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি। জানি না, উনি কোন দুনিয়ায় রয়েছেন।’’

মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। তা নিয়েও প্রচারে টুঁ শব্দ করেননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। আজ তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী সরকার গত পাঁচ বছরে কতটা উন্নয়ন করেছে, তা নিয়ে কেন প্রচার করছেন না। মোদী সরকারের দাবি ছিল, চাষিদের দাবি মেনে চাষের খরচের দেড়গুণ ফসলের দাম দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে মোদী প্রচার করলেন না কেন? রাহুলের বক্তব্য, ‘‘মোদী এখন হঠাৎ দেখছেন, তাঁর দেখানোর মতো কাজ নেই। নজর ঘোরাতে সম্ভবত কাল-পরশু সি-প্লেনে চড়ার মতো কিছু করবেন। কিছু ‘ডিসট্র্যাক্ট ইন্ডিয়া ইভেন্ট’ ভাবা হবে। কিন্তু দেশের নজর ঘোরানো যাবে না।’’ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও টুইট করেন, ‘‘৬০ দিনের প্রচারে বিজেপির সব রকম চেষ্টার পরেও আমরা ভোটে চাকরি, চাষ ও রোজগার থেকে নজর ঘোরাতে দিইনি। ২৩ তারিখ ন্যায় ও জনতার জয় নিশ্চিত।’’

যদিও তার আগে বিজেপি দফতরে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে অমিত যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘আপনারা যে কোনও বিজেপি নেতার বক্তৃতা দেখে নিন। ৪০ মিনিটের মধ্যে ৩০ মিনিটই উন্নয়ন, সরকারের কাজ নিয়ে কথা রয়েছে। বাকি ১০ মিনিট বিরোধীদের অভিযোগের জবাব। সংবাদমাধ্যম ওইসব নিয়েই প্রচার করেছে। আমাদের প্রচারের প্রধান বিষয়ই ছিল নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে আবেগ, নরেন্দ্র মোদীর কাজ। স্বাধীনতার পর এত কঠোর পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী আসেননি।’’ সেই সঙ্গে অদ্ভুত দাবি, ‘‘বিরোধীরা যে দুর্নীতি বা মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন, তা তো তাঁদেরও

অস্ত্র হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE