Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘বিরোধী মানেই নন দেশদ্রোহী’, পাঁচ বছর পরে নিজের ব্লগে বিস্ফোরক আডবাণী

মোদী-অমিত শাহেরা গত পাঁচ বছর ধরে তাঁকে যে-ভাবে উপেক্ষা করেছেন, যে-ভাবে দীর্ঘদিনের জেতা গাঁধীনগর আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী না-করে কার্যত অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন, তাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ আডবাণী।

লালকৃষ্ণ আডবাণী।

লালকৃষ্ণ আডবাণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

কেউ রাজনৈতিক মতের বিরোধী হলেই তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা বিজেপির জাতীয়তাবাদ নয় বলে মনে করিয়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।

পাঁচ বছর পরে নিজের ব্লগে কলম ধরে আডবাণীর এই মন্তব্যের লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বলেই বিরোধী নেতারা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদী রোজই টানছেন বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান-প্রসঙ্গ। সেই সূত্রে কংগ্রেস তথা বিরোধীদের নিশানা করে তাঁদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, কাজ দিয়ে নয়, উগ্র জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে ভোটে জিততে চেয়ে সেনাকে হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদী। আডবাণী আজ ঠিক এখানেই আঘাত করেছেন।

মোদী-অমিত শাহেরা গত পাঁচ বছর ধরে তাঁকে যে-ভাবে উপেক্ষা করেছেন, যে-ভাবে দীর্ঘদিনের জেতা গাঁধীনগর আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী না-করে কার্যত অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন, তাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ আডবাণী। কিন্তু মুখ খোলেননি এত দিন। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের ঠিক এক সপ্তাহ আগে মোদী যখন প্রচারের সুর তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছেন, ঠিক তখনই কার্যত ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়লেন এই প্রবীণ নেতা। ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসকে উপলক্ষ করে, তার দু’দিন আগে আজ নিজের ব্লগে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতিকে স্পষ্ট বার্তা পাঠালেন।

দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে মোদী জমানায় গুরুত্ব কমিয়ে ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’-তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই আডবাণী এ দিন নিজের ব্লগে মূলত তিনটি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এক, জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি কখনও রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘শত্রু’ বলে মনে করেনি। শুধু বিপক্ষ হিসেবেই ভেবেছে। দুই, বিজেপি যে-ভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দেখে, তাতে কখনও রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বা দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হয় না। তিন, বিজেপি প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পছন্দের স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ। এবং বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের ভিতরে তাকাতে হবে। অতীতের দিকেও তাকাতে হবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আডবাণীর এই ব্লগের পরে মোদী টুইটারে সযত্নে দেশদ্রোহী নিয়ে দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্যকে এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং লিখেছেন, ‘‘আডবাণীজি বিজেপির সত্যিকারের চরিত্র তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে বিজেপিকে পথ দেখানোর মন্ত্র। যা বলে, সবার আগে রাষ্ট্র, তার পরে দল, সবশেষে নিজে।’’

মোদী এড়িয়ে গেলেও ছাড়েননি বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এত দিন বিরোধীরা যে-সব কথা মোদীকে বলছিলেন, আজ বিজেপির অন্দরমহল থেকেই তা উঠে এসেছে। আডবাণী আক্ষরিক অর্থেই মোদী-শাহকে ‘মার্গদর্শন’ করিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, ‘‘প্রবীণতম রাজনীতিক, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে যা বলেছেন, তা উল্লেখযোগ্য। যাঁরা বিরোধী আওয়াজ তোলেন, অবশ্যই তাঁরা সকলে দেশদ্রোহী নন।’’

আডবাণীর ব্লগে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে বিজেপি। দলের মুখপাত্রেরা বলার চেষ্টা করেছেন, আডবাণী যা বলেছেন, তা বিজেপিরই কথা। কিন্তু বাস্তব যে উল্টো, তা তাঁরাও বুঝতে পারছেন। কারণ ৯১ বছর বয়সি আডবাণী দলের মধ্যে ‘গণতন্ত্র’ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। মোদী জমানায় একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপরে আঘাত আসছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ তুলেই আডবাণীর যুক্তি, ‘‘বিজেপি বরাবরই সংবাদমাধ্যম-সহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রথম সারিতে থেকেছে।’’

আডবাণীর ব্লগকে কী ভাবে অস্ত্র করা হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণে বসেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, আডবাণীর ক্ষোভ থেকে বিজেপিতে প্রবীণদের অসম্মানের বিষয়টি স্পষ্ট। রাহুল গাঁধী কংগ্রেসে প্রবীণ নেতাদের যে সম্মান দেন, বিজেপিতে মোদী-শাহ তা দেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE