Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ওঁরা ঠিক করেই ফেলেছেন, ভোটটা এ বার কাকে দেবেন না...

গোরক্ষকদের হাতে মৃত্যুর কথা উঠলেই ওঁদের মনে পড়ে শুধুই দু’টি নাম। রাকবার আর পেহলু। দুধ বেচতেন। ওঁদের রুজি-রোজগারের উপরেই চলত পরিবার। গোরক্ষকরা ওঁদের দু’জনকেই পিটিয়ে মেরেছিল।

শয্যাশায়ী আসমিনা। হরিয়ানার গ্রামের বাড়িতে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

শয্যাশায়ী আসমিনা। হরিয়ানার গ্রামের বাড়িতে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
নুহ্‌ (হরিয়ানা) শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ১৭:২৭
Share: Save:

কে আখলাক? না, মনে পড়ছিল না তাঁদের। মহম্মদ আখলাকের নামটা তাঁরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। আখলাকের নাম শুনে অনেক ক্ষণ ভাবলেন। তার পর বললেন, ‘‘ওহ, বল্লভগড়ের ঘটনার কথা বলছেন?’’ এও বললেন, ‘‘ঠিক জানি না।’’

গোরক্ষকদের হাতে মৃত্যুর কথা উঠলেই ওঁদের মনে পড়ে শুধুই দু’টি নাম। রাকবার আর পেহলু। দুধ বেচতেন। ওঁদের রুজি-রোজগারের উপরেই চলত পরিবার। গোরক্ষকরা ওঁদের দু’জনকেই পিটিয়ে মেরেছিল।

রাকবারের বিধবা স্ত্রী আসমিনা একেবারেই শয্যাশায়ী। স্বামীর মৃত্যুর পরেই এক দুর্ঘটনায় তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। বিছানায় শুয়েই আসমিনা বললেন, ‘‘গরু তো ছিল দুধ দোয়ানোর জন্য। তার জন্য তো রক্ত ঝরার কথা ছিল না রাকবারের।’’

হরিয়ানার নুহ্‌ জেলায় রাকবার আর পেহলুর পরিবার থাকে ২০ কিলোমিটার দূরে। এত দূরে থাকা সত্ত্বেও দু’টি পরিবারই কিন্তু এ বার একটি ব্যাপারে একমত। সেটা হল, ভোটটা তাঁরা কাকে দেবেন? বা, আরও সঠিক ভাবে বলতে হলে, ভোটটা এ বার তাঁরা কাকে দেবেন না? লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণে নুহ্‌তে ভোট হবে আগামী ১২ মে। গ্রামবাসীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কোনও কোনও নেতা। এ বার তাঁদেরই আমরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনব।’’

তাপকান গ্রামের একটা ছোট্ট ঘরে মেয়ে আর রাকবারের বিধবা স্ত্রী আসমিনাকে নিয়ে বসেছিলেন এক বৃদ্ধা কারিমন। আসমিনার ব্যান্ডেজ বাঁধা দু’টি পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন কারিমন। আসমিনার বৃহদন্ত্রে পাইপ দিয়ে প্লাস্টিকের একটি বড় ব্যাগ বাঁধা। তার উপরেও নজর রাখছেন কারিমন। খাট থেকে নামা তো দূরের কথা, খাটে শুয়ে এ-পাশ ও-পাশও করতে পারেন না রাকবারের বিধবা স্ত্রী আসমিনা। নিজেই বলেন, ‘‘আমি তো আধমরা।’’ তাঁকে বেশ কয়েক বার নিয়ে যাওয়া হয়েছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এইমস) ট্রমা সেন্টারে। ডাক্তাররা বলেছেন, ‘‘সারবে কী ভাবে? শরীর তো কোনও পুষ্টিই পাচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন- ‘হাস্যকর’ ও ‘অপরিণত’! হতাশা থেকেই আক্রমণ, মোদীর ‘জাতপাতের জোট’ কটাক্ষের জবাব মায়াবতীর​

আরও পড়ুন- গোরক্ষার নামে ফের যুবক খুন অলওয়ারে​

রাজস্থানে রাকবারকে গোরক্ষকরা পিটিয়ে মারার পরেই চার মাসের জন্য ‘ইদ্দতে’ চলে যান আসমিনা। স্বামীর মৃত্যুর পর মুসলিম সমাজে এটাই রীতি। ওই সময় তাঁর চার ছেলেমেয়ে পড়ত আলিগড়ে, প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির স্ত্রী সালমা আনসারির চালানো একটি স্কুলে। ইদ্দতের পর আসমিনা আলওয়ার থেকে প্রথম বারের জন্য আলিগড়ে যাচ্ছিলেন ছেলেমেয়েদের দেখে আসতে। যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। তাতেই তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

বিছানায় শুয়েই আসমিনা বললেন, ‘‘ওরা শুধু এক জন রাকবারকেই মারেনি। ওরা ৯ জনকে খুন করেছে। আমি তো আধমরাই। আজ আছি, কাল নেই। আমি চলে গেলে আমার সাতটা ছেলেমেয়েকে কে দেখবে? যার সঙ্গে আমি আলিগড়ে যাচ্ছিলাম, সেই আত্মীয়কেও আমি হারিয়েছি ওই দুর্ঘটনায়।’’

কাকে ভোট দেবেন ওঁরা?

সরাসরি বললেন না কারিমন। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। কারিমনের কথায়, ‘‘ওই সময় এক দিন সকালে এক জন আমার বাড়িতে ছুটে এলেন খবরের কাগজের কাটিং নিয়ে। তাতে দেখলাম, রাকবারকে খুন করেছে বলে যার নাম উঠছে সর্বত্র, সে নাকি বলেছে সে কাউকে ভয় পায় না। এলাকার বিধায়ক তার সঙ্গেই রয়েছেন। মামলাটাও জিতে যাবে, কারণ, স্থানীয় বিধায়ক তার সঙ্গেই রয়েছেন। আমরা এ বার সেই দলকেই ভোট দেব, যার কাছে থেকে বিচার পাব।’’

কারিমন আরও বললেন, ‘‘তার কারণও ছিল। রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক জ্ঞান দেব আহুজা প্রকাশ্যেই অভিযুক্তের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ যখন ২৫ পাতার চার্জশিট জমা দিল আদালতে, তখন ওই বিজেপি বিধায়ক আহুজা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, গোরক্ষকরা আদালতে ওই মামলার বিরোধিতা করবে।’’

আসমিনার বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থাকা নুহের জয়সিংহপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে বসে একই কথা বললেন গোরক্ষকদের হাতে খুন হওয়া পেহলু খানের বিধবা স্ত্রী জায়বুনা। জায়বুনার মনে আছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে ঠিক কী বলেছিলেন রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক আহুজা?

আহুজা বলেছিলেন, ‘‘আইন আমরা হাতে নেব না ঠিকই। তবে ওর (পেহলু খান) মৃত্যুর জন্য আমার কোনও দুঃখ নেই। কারণ, ও গোহত্যা করত। জড়িত ছিল গো-পাচারেও।’’ শুধু তাই নয়, রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাব চাঁদ কাটারিয়াও বলেছিলেন, ‘‘গো-পাচার অবৈধ, এটা সকলেরই জানা উচিত। গো-ভক্তরা তাদের যা কাজ, সেটাই করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE