Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভারতীয় হয়েই যেন মরতে পারি, প্রার্থনা মালতীবালার

দু’টো কিডনিই প্রায় অকেজো বছর ৫২-র মালতীবালা দাসের। সারা দিন শুয়েই কাটে। কিন্তু শত যন্ত্রণা সত্ত্বেও, স্বামী-ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে কখনও হাজিরার দিনে যেতে ভোলেন না ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনালে’।

অপেক্ষা: ফরেনার্স ট্রাইবুনালে মালতীবালা। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: ফরেনার্স ট্রাইবুনালে মালতীবালা। নিজস্ব চিত্র

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:১২
Share: Save:

রোগ-যন্ত্রণার থেকেও যেন বেশি কষ্টদায়ক এই অনিশ্চয়তা। মৃত্যুশয্যায় প্রহর গুনতে গুনতে তাই মালতীবালার একটাই প্রার্থনা— ‘‘একটু দেখো ঠাকুর, ভারতীয় হয়েই যেন মরতে পারি।’’

দু’টো কিডনিই প্রায় অকেজো বছর ৫২-র মালতীবালা দাসের। সারা দিন শুয়েই কাটে। কিন্তু শত যন্ত্রণা সত্ত্বেও, স্বামী-ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে কখনও হাজিরার দিনে যেতে ভোলেন না ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনালে’। ‘সন্দেহজনক বিদেশিদের’ তালিকায় নাম উঠেছে যে তাঁর। বললেন, ‘‘শরীরের যন্ত্রণা তবু সহ্য করা যায়। কিন্তু বিদেশি বলে সন্দেহের যন্ত্রণাটা সইতে পারি না।’’

মালতীদেবী জানান, ১৯৬৭ সালে মা-বাবা এ দেশের উদ্বাস্তু শিবিরে রেশন পেতেন। সে সব নথি আছে। ১৯৭৫ সালে সরকার জমি দেয়। সে কাগজও রয়েছে। এর পরেও বিদেশি!

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ মালতীবালাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। দিনমজুর ছেলেরা তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন বা নিয়মিত ডায়ালিসিস ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। অনটনের সংসারে তা কী করে সম্ভব! তাই পরদিন ট্রেন ধরে ফিরে আসেন কাছাড় জেলার কাতিরাইলের বাড়িতে।

ছেলে শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘বাবা পরের জমিতে চাষ করতেন। এখন আর শরীর দেয় না। কষ্ট করেই সংসার চলছিল। কিন্তু শান্তির অভাব ছিল না। এনআরসি-র জ্বালায় সেই শান্তিটুকুও গিয়েছে।’’ খসড়ায় মায়ের নাম নেই দেখে খোঁজখবর করে জানতে পারেন, মায়ের নামে বিদেশি সন্দেহে নোটিস রয়েছে। ‘ট্রাইবুনালে‌’ গিয়ে কাগজপত্র দেখাতে হবে। পুলিশের সীমান্ত শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, নোটিস জারি হয়েছে বাবা গৌরাঙ্গ দাসের নামেও। শত্রুঘ্ন জানালেন, ১৯৬৫ সালের রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে ঠাকু‌রদা ভরত দাসের নামে। ওই নথি দেখিয়ে এনআরসি-র খসড়ায় নামও উঠেছে তাঁদের। তার পরেও নোটিস! পুলিশ জানিয়েছে, নোটিস যখন এসেছে, ট্রাইবুনালে যেতেই হবে। উকিল ধরে সব সেখানেই বলতে হবে।

সেই থেকে ট্রাইবুনালে আসা-যাওয়া চলছে। মাস কয়েক আগে মালতীদেবীর কিডনির রোগ ধরা পড়ে। ‘‘মা কত দিন এ ভাবে ট্রাইবুনালে হাজিরা দিতে পারবেন কে জানে,’’ হতাশা শত্রুঘ্নের গলায়।

ছেলেকে থামিয়ে মালতীদেবী ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠেন, ‘‘মৃত্যুর আগে অন্তত জেনে যেতে চাই,
আমি ভারতীয়ই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE