ফাইল চিত্র।
চোরাশিকারি কিংবা কালাশনিকভধারী জঙ্গিদের হাতে নয়, কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বনকর্মীদের গুলিতেই প্রাণ হারাল একটি গন্ডার। আগারাতলি ফরেস্ট রেঞ্জে সোমবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বনকর্মীরা জঙ্গলেই টহল দিচ্ছিলেন। তাঁদের দাবি, আচমকাই জঙ্গলের মাঝে একটি গন্ডার হামলা চালায়। নিজেদের বাঁচাতেই নাকি এরপর পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গন্ডারটিকে গুলি করে মারেন বনকর্মীরা। ঘটনায় শুরু হয়েছে তদন্ত।
আগারাতলি রেঞ্জে গন্ডারের হামলা ও গুলি চালানোর খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান ডিএফও। উদ্ধার করা হয় গন্ডারের খড়্গ। কী কারণে একটি মহিলা গন্ডারকে গুলি করতে বাধ্য হলেন বনকর্মীরা, ঘুমপাড়ানি গুলি কেন ছিল না তাঁদের কাছে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে নানা প্রশ্ন।
যদিও বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, জঙ্গলে টহল দেওয়ার সময় ঘুমপাড়ানি গুলি সঙ্গে থাকার কথা নয় বনকর্মীদের। আর গন্ডার অত্যন্ত আনপ্রেডিকটেবল একটা প্রাণী। তাই বনকর্মীরা কোন অবস্থায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরাই একমাত্র বলতে পারবেন। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’’
আরও পড়ুন: গাড়ির বনেট খুলতেই বেরিয়ে এল অজগর সাপ, তারপর...
কাজিরাঙার ঘটনায় বন দফতরের গাফিলতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি সংগঠন। বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে এই ঘটনায় মামলাও দায়ের হয়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপিকা কৌশাম্বী সরকার বলেন, “অবিলম্বে গন্ডার-হত্যা ঠেকাতে পঞ্চায়েত স্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বনবস্তির বাসিন্দা ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োজন। নইলে এ ভাবেই জঙ্গল ও প্রাণী এক দিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন: কেরলে বন্যায় বাড়িতেই ঢুকে আসছে বিষধর সব সাপ, দেখুন ভিডিয়ো
কাজিরাঙার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) রোহিণীবল্লভ শইকিয়া জানান, আগারাতলির উত্তরে তামুলিপাথর ফরেস্ট ক্যাম্পের কাছেই ওই দিন কাজের দায়িত্ব পড়েছিল বনকর্মীদের। বনকর্মীদের দাবি, তাঁদের দেখেই নাকি তেড়ে আসে গন্ডারটি। বনকর্মীদের উপরে হামলা করায় প্রথমে শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। তার পরেও বনকর্মীদের দিকেই দৌড়ে এসেছিল গন্ডারটি। বাধ্য হয়েই সেটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে হয় বনকর্মীদের।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ও ২০১৬ সালেও একই ভাবে বনকর্মীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল দুটি গণ্ডারের। ২০১৬ সালে ব্রিটেনের রাজদম্পতি উইলিয়াম ও কেটের সফরের মাঝেও চোরাশিকারি ও জঙ্গিদের গুলিতে গন্ডারের মৃত্যু হয়। অসমে এর আগে গন্ডারের ডিএনএ সংরক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালাও হয়েছে। নানারকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলাও হয়েছে গন্ডার সংরক্ষণে। কিন্তু এরপরে বনকর্মীদের গুলিতেই গন্ডারের মৃত্যু হওয়ায় আঙুল উঠেছে প্রশাসনের দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy