সোহরার সেই গুহা। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শেষ পর্যন্ত পড়ল সিলমোহর। ভূবিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন বর্তমান বিশ্ব বাস করছে ‘মেঘালয় যুগ’-এ! বিশ্বের সেই নবীনতম প্রস্তরযুগের বয়স মাত্র ৪২০০ বছর। মেঘালয়ের একটি গুহা থেকে মেলা পাথরের স্তরের নমুনা প্রমাণ করেছে—৪ হাজার ২০০ বছর আগে এক ভয়ানক খরার ফলে মিশর থেকে চিন পর্যন্ত এলাকায় প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার ফলেই নতুন যুগের নাম দেওয়া হয়েছে মেঘালয়ের নামে। গত ১১,৭০০ বছরে বিশ্বের বিবর্তনের ইতিহাসকে ‘হলোকেন ইপক’ যুগ হিসেবে ধরা হয়। সেই যুগেরই নবীনতম অধ্যায় ‘মেঘালয় এজ’।
ভূতত্ত্ববিদ পার্থসারথি চক্রবর্তী জানান, আজ থেকে প্রায় ছ’হাজার বছর আগে ফ্ল্যান্ড্রিয়ান ট্র্যান্সগ্রেশনের সময় সমুদ্র এগিয়ে এসেছিল। পশ্চিমবঙ্গের রসুলপুর, কাঁথি, পানিপারুল এবং সুবর্ণরেখার পশ্চিমে বালেশ্বরও তার প্রমাণ রয়েছে। তার পরে সমুদ্র ধীরে ধীরে সরতে থাকে। সেই সময়েই মেঘালয়ের এই গুহাতে পাওয়া প্রমাণের মতো পরিচয় সে রেখে গিয়েছে।
মেঘালয় যুগের বৈশিষ্ট্য হল, বিশ্বের ভূত্বাত্ত্বিক ধারায় প্রথমবার ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের হাত ধরে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। কারণ, পরিবেশ বদলের জেরে কৃষিভিত্তিক সমাজগুলি নিজেদের নতুন পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল। তার প্রমাণ ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে বলে জানান পার্থসারথিবাবু।
‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস’ বা আইইউজিএসের সেক্রেটারি জেনারেল স্ট্যানলে ফিনে জানান, মেঘালয়ের সোহরার কাছাকাছি এলাকায় গুহার মধ্যে স্ট্যালাকটাইট স্তরে নতুন যুগের যে নমুনা মিলেছিল পরবর্তীকালে তার প্রমাণ সাতটি মহাদেশেই পাওয়া যায়। প্রায় ২০০ বছর ধরে চলা খরাসদৃশ পরিস্থিতির ফলে মিশর, গ্রিস, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, মেসোপটামিয়া, সিন্ধু ও ইয়াংসে নদী অববাহিকায় কৃষি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতিতেও এসেছিল বদল। বিশ্বে আবহাওয়া ও ভূতাত্ত্বিক বদলগুলির স্বীকৃতি দেয় ও নামকরণ করে কমিশন অফ স্ট্রাটিগ্রাফি। তারাই ‘মেঘালয় এজ’কে স্বীকৃতি দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy