Advertisement
E-Paper

‘পিছন থেকে হঠাৎ কোমর জড়িয়ে ধরল রণতুঙ্গা’

হঠাৎ রণতুঙ্গা পিছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন। পিছন থেকে বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করি। রণতুঙ্গার পায়ের পাতায় জোরে লাথি মারি।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:০৮
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

#মিটু ঝড়ে টালমাটাল গোটা দেশ। উঠে আসছে বিচিত্র সব উপাখ্যান। লোকলজ্জার বর্ম ছেড়ে নারী হয়ে উঠছে প্রতিবাদী, বিপ্লবী। বিয়ের কয়েকদিন আগেও বান্ধবীর হবু বর কীভাবে তাঁর শ্লীলতাহানি করছে তা-ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন এক মহিলা। আর গোটা পর্বে একটা বিষয় স্পষ্ট, #মিটু শুধু সেলেব-হেভিওয়েটে সীমাবদ্ধ নয়। ছড়িয়ে রয়েছে সমাজের সর্বত্র। কর্মক্ষেত্র থেকে যাত্রাপথ, জন্মদিন থেকে পার্টি কিংবা হোটেলে।

পাশ্চাত্যের #মিটু আন্দোলন এ দেশে আগেও হয়েছে। কিন্তু নানা পটেকরের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্তর মুখ খোলার আগে পর্যন্ত এমন গতি পায়নি। কাঠগড়ায় উঠেছেন বিকাশ বহেল, অলোক নাথ, সাংবাদিক এম জে আকবরের মতো আরও অনেকে। বুধবার শেষতম সংযোজন গায়ক অভিজিৎ। বোধিসত্ত্বা ইয়ামাইওহো নামে এক বিমানসেবিকা তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। আর সেই অভিযোগ জানাতে গিয়ে তাঁর জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন সব ঘটনা শেয়ার করেছেন, যা আসলে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, কর্মক্ষেত্র থেকে থেকে বাড়ি, পার্টি থেকে বিয়ের আসর কোনও জায়গাই কি নিরাপদ নারীর জন্য?

কী সেই ঘটনাক্রম? গায়ক অভিজিৎকে বাদ দিয়ে আরও তিনটি ঘটনা শেয়ার করেছেন বোধিসত্ত্বা।

১। অর্জুন রণতুঙ্গা

‘‘একদিন আমার এক বান্ধবী বন্দনা মুম্বইয়ের জুহু সেন্টিউর হোটেলে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের দেখতে পায়। অটোগ্রাফের জন্য ক্রিকেটারদের রুমে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে আমিও সঙ্গে যাব ঠিক করি। সেই মতো ক্রিকেটারদের ঘরে যাই। তাঁরা আমাদের ড্রিঙ্ক অফার করেন। ওঁরা ছিলেন সাত জন, আমরা দু’জন। আমি রাজি হইনি। ওঁরা দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি দিয়ে দেয়। আমার অস্বস্তি বাড়তে থাকে। বান্ধবীকে বলি, চল রুমে ফিরে যাই। কিন্ত বন্দনা নাছোড়। হোটেলের সুইমিং পুলের দিকে হাঁটতে যাবে বলে জানায়। তখন সন্ধ্যা সাতটা মতো হবে। সুইমিং পুল হোটেলের পিছন দিকে। গলিপথে খুব কম আলো ছিল। আমি সুইমিং পুলের ধারে গিয়ে বন্দনা এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের খুঁজছিলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি। তার মধ্যেই হঠাৎ রণতুঙ্গা পিছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন। পিছন থেকে বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করি। রণতুঙ্গার পায়ের পাতায় জোরে লাথি মারি। পুলিশকে জানাব, পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে দেব ইত্যাদি ভয় দেখাতে থাকি। তারপর ছুটে হোটেলের রিসেপশনে যাই। কিন্তু রিসেপশন থেকে জানানো হয়, ওটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়, হোটেল হস্তক্ষেপ করবে না।’’

আরও পড়ুন: জোর করে চুমু খেয়ে অভিজিৎ বলল, কী ভাব আমাকে! # মিটু বিতর্কে অভিযোগ বিমানসেবিকার

২। বিমানের ককপিট

বোয়িং ৭৩৭ দিল্লি থেকে মুম্বইয়ের বিমানে দুই পাইলট ছাড়া আমিই ছিলাম একমাত্র কেবিন ক্রু। সন্ধে সাতটায় বিমান উড়ল। ককপিট থেকে নির্দেশ এল ক্যাপ্টেনের রাতের খাবার গরম করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি খাবার নিয়ে ককপিটে গেলাম। কিন্তু কিছু যেন সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল। ক্যাপ্টেন আমাকে পাইলটদের সিটে বসতে বললেন। মুহূর্তের মধ্যেই ক্যাপ্টেন পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়ে আমাকে তাঁর সিটের মধ্যে আমাকে আটকে নিলেন। কো পাইলট সে দিকে তাকাতেই এমন ভান করলেন যেন আমাকে বাইরের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। আমি নীচু হয়ে ককপিট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ক্যাপ্টেন আমার গলা চেপে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করে দিল। আমি কোনওরকমে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে এলাম। বিমান মুম্বইয়ে নামতেই আমি বিমানবন্দরে আমার সংস্থাকে গোটা ঘটনা জানাই। কিন্তু বিতর্ক হতে পারে এই ভয়ে তারা কোনও কিছুই করেনি। কিছুদিন পর অন্য সংস্থায় কাজ পেয়ে আমি ওই কাজ ছেড়ে দিই।

আরও পড়ুন: মত্ত অলোক আমাকে ধরে টানতে শুরু করেছিলেন... মুখ খুললেন সন্ধ্যা

৩। বান্ধবীর হবু বর

২০১২ সালে আমার জন্মদিনের পার্টিতে বাড়িতেই আমন্ত্রিত ছিল বন্দনা ও তার হবু বর তথা মিস ইন্ডিয়া রোচেল রাওয়ের ভাই ডেভিড ফ্রিৎ‌জ রাও। পার্টি শেষে অধিকাংশ অতিথি ফিরে গিয়েছিল। ছাদে তখন আমরা তিন চার জন। রোচেল, রঘু আমি আর বন্দনা। বন্দনা মদ খেয়ে নেশার ঘোরে। কিছুক্ষণ পর বাথরুমে গেল। রঘু গুডনাইট বলে ঘুমোতে গেল। ডেভিডের লাইটার হাত থেকে পড়ে গেল। আমি যেই নীচু হয়ে লাইটার খুঁজতে গেলাম, অমনি ডেভিড তথা বন্দনার হবু বর আমার বুকে চিমটি কেটে দিল। ব্যাপারটা বুঝতেই আমার কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। তার পর আমি ঘুমোতে গেলাম। বন্দনা আর ডেভিড বিয়ের পরিকল্পনা করছিল। পরের দিন সকালে জলখাবারের পর আমি বন্দনাকে গোটা ঘটনা খুলে বললাম।

কিন্তু ও খুব জোরে জোরে হাসতে লাগত। আর বলল ডাক্তার দেখা। আমি জানি, তুইই ওর পিছনে পড়েছিলি। এর পর বন্দনা ফেসবুকে আমাকে ব্লক করে দিল। আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিল। তার পর থেকে আর কখনও কথা হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছর বন্দনাই আমাকে ফোন করে ক্ষমা চায়। আমাকে জানায়, ও জানতে পেরেছে ডেভিড শুধু আমার সঙ্গে নয়, আরও অনেকের সঙ্গেই এরকম কাণ্ড ঘটিয়েছে।

বোধিসত্ত্বার জীবনের একের পর এক ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে জীবনের প্রতি পদে বিপদের মুখে পড়তে হয়। কখনও সেলেব, কখনও বা আম জনতার কাছে। অফিসে, কাজের মাঝে কিংবা নিজের বাড়িতেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সব অধ্যায় চেপে যান মহিলারা। অথবা অভিযোগ জানালেও কান দেন না কার্যত কেউই। সেই অন্ধকারের মধ্যেই যেন আলোকবর্তিকা হয়ে নতুন করে আশা জাগিয়েছে #মিটু। অন্তত এখনও পর্যন্ত।

MeToo Sexsual abuse Arjuna Ranatunga Abhijeet Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy