Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
pilgrimage

স্কুটারে মাকে নিয়ে কর্নাটক থেকে কামাখ্যা পাড়ি

বাবার দেওয়া বিশ বছরের পুরনো বাজাজ চেতক স্কুটার সম্বল করে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি।

কর্নাটকের মাইসুরুর বাসিন্দা কৃষ্ণ ও চুড়াদেবী। নিজস্ব চিত্র

কর্নাটকের মাইসুরুর বাসিন্দা কৃষ্ণ ও চুড়াদেবী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ১৮:৩৮
Share: Save:

মাকে কাছছাড়া করবেন না এবং চিরকাল মায়ের সেবা করবেন পণ করে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২১ বছর বয়সে। আর মা ৭০ পার করার পরে মাতৃভক্ত ডি কৃষ্ণ কুমার চাকরিও ছেড়ে দিলেন। দেশের সব তীর্থ মাকে ঘোরাতে, বাবার দেওয়া বিশ বছরের পুরনো বাজাজ চেতক স্কুটার সম্বল করে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। ছেলে কৃষ্ণ আর মা চুড়া রত্না প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজির হন অম্বুবাচীর কামাখ্যায়। শুধু কামাখ্যাই নয়, আশপাশের সব মন্দির দেখে মা ও ছেলে নগাঁও জেলায় বৈষ্ণবসন্ত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থান বটদ্রবাও দেখতে গেলেন।

কর্নাটকের মাইসুরুর বাসিন্দা কৃষ্ণ ও চুড়াদেবীকে দেখতে কামাখ্যায় ভিড় লেগে গিয়েছিল। কলকাতা, হুগলি, নদিয়া, মালদহ, দুই ২৪ পরগনা থেকে কামাখ্যা দর্শনে আসা প্রৌঢ়া ও বৃদ্ধারা কৃষ্ণকে দেখে নিজের সংসারের অপ্রাপ্তি, সন্তানের কাছে পাওয়া আঘাতের পসরা খুলে বসেন। সকলে আদর করে মাতৃভক্ত কৃষ্ণ কুমারের নাম দিয়েছেন কলিযুগের শ্রবণ কুমার।

কিন্তু কেন স্কুটারে তীর্থ দর্শনের সিদ্ধান্ত?

আরও পড়ুন:কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ছেলের ‘গুন্ডাগিরি’! ব্যাট দিয়ে পেটালেন সরকারি আধিকারিককে

কর্পোরেট টিম লিডার হিসেবে কাজ করা ৪১ বছরের কৃষ্ণ কুমার জানান, বাবা দক্ষিণমূর্তির মৃত্যুর পরে বছর চারেক একলাই থাকছিলেন তাঁর মা। ছেলে বাড়ি এলে কাঁচুমাচু মুখে হাম্পি ও হ্যালেবিদ দেখিয়ে আনার আবদার করেছিলেন চুড়াদেবী। ছেলে ভাবতে বসেন, আজীবন মা সংসারের জন্য যা করেছেন তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। মাকে নিয়ে প্রথমে গাড়িতে তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। আরাম হয়নি। ২০১৭ সালে বাবার দেওয়া স্কুটারে খানিক অদলবদল করে মাকে পিছনে বসিয়ে বেরিয়ে পড়েন। নিজের জমানো টাকা আর মায়ের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে পাওয়া আড়াই লক্ষ টাকাই মা-ছেলের ভারত ভ্রমণের সম্বল। এত চড়াই উৎরাই পার করেও চুড়াদেবীর শরীরে নেই শ্রান্তি, কোমরেও নেই ব্যথা। নগাঁও থেকে তাঁরা চলেছেন অরুণাচলের লোহিত জেলায় পরশুরাম কুণ্ডের উদ্দেশে।

ছেলে কৃষ্ণ আর মা চুড়া রত্না প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজির হন অম্বুবাচীর কামাখ্যায়

কৃষ্ণের কথায়, ‘‘সহজে, সর্বত্র যাওয়ার জন্য স্কুটারের বিকল্প নেই। খরচও কম, তেমন খারাপও হয় না। ফল, শুকনো খাবার, চিঁড়ে, জল, রেনকোট, মাদুর সব স্কুটারেই চাপিয়ে নিই। বাবার উপহার দেওয়া স্কুটার সঙ্গে থাকলে মনে হয় বাবাও আমাদের সঙ্গেই আছেন।’’ গোয়া, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কাশী, বৃন্দাবন, দ্বারকা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অসম— ভারত ভ্রমণের যাত্রাপথে মানুষের ভালবাসা দেখে মুগ্ধ কৃষ্ণ এবং তাঁর মা। বাধা হয়নি ভাষা বা সংস্কৃতির ব্যবধান। শুধু তীর্থভ্রমণই নয়, বর্তমান প্রজন্মকে বাবা-মায়ের প্রাপ্য সম্মান ও যত্ন নেওয়ার আহ্বানও ছড়াছেন কৃষ্ণ কুমার।

আরও পড়ুন:ফুটবল মাঠের ঢঙে মণ্ডপ বানিয়ে মেসির জন্মদিনে বিয়ে করলেন কেরলের যুবক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pilgrimage Kamakshya temple scooter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE